কুলাউড়ায় বেতনের টাকায় ৫০০ কৃষি শ্রমিককে খাওয়ালেন ইউএনও
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ এপ্রিল ২০২০, ১০:২৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
চাকরিতে যোগদানের পর থেকে নিজের দক্ষতা ও দূরদর্শিতা দিয়ে একের পর এক ভালো কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। যার জন্য বিভিন্ন মহলে তিনি ব্যাপক প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন। নিজের সেরাটা নিংড়ে দিয়ে প্রশাসনের সকল দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি মানুষের তরে ছুটে চলেছেন বিরামহীনভাবে। প্রাণপণে চেষ্টা করছেন মানুষের জন্য একটু সহানুভূতি দেখাতে। বলছি প্রশাসনের একজন চৌকষ মেধাবী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বণিকের কথা। তিনি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে কর্মরত। এবার তিনি হাওর পারের পাঁচ শতাধিক কৃষি শ্রমিকদের নিজের বেতনের টাকা থেকে এক বেলা খাবার খাওয়ানের মধ্যে দিয়ে আরেক মহানুভবতা দেখালেন।
সরকারি এই কর্মকর্তা উপজেলার সকল প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন একনিষ্টভাবে। তিনি যেমন কঠোর, তেমন উদার মনের অধিকারী। বর্তমানে বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ জুড়ী উপজেলার মানুষের জন্য দিনরাত নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কখনো নিজে একা কখনো প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে মানুষের বাড়িতে যাচ্ছেন খোঁজখবর নিতে। এমন পরিস্থিতি সরকারি নির্দেশনায় সবকিছু বন্ধ থাকায় থমকে গেছে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নআয়ের কয়েক সহস্রাধিক মানুষের জীবন চলার পথ। সেই মানুষদের পাশে থাকার জন্য সরকারি প্রতিটি নির্দেশনা ও ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
কর্মহীন (রিকশাচালক, সিএনজিচালক, অটোরিকশাচালক, হোটেল, রেস্তোরা শ্রমিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত) শ্রমিকদের পাশাপাশি জুড়ীতে থাকা তৃতীয় লিঙ্গরাও পেয়েছে তার সহযোগিতা। সকল ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম তিনি নিয়মিত তদারকি করছেন। এ ছাড়া সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে মাঠে রয়েছেন তৎপর। যারা সামাজিক দূরত্ব মানছে না তাদের নিয়ে আইনের আওতায় এনে করছেন অর্থদণ্ড।
এদিকে কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের শতভাগ কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতে কাজ করছেন প্রশাসনের এ কর্মকর্তা। এ ছাড়া জুড়ীর প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কামিনীগঞ্জের মৃত বাজারকে থানা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে অবৈধ কাঁচাবাজার ও মাছবাজার উচ্ছেদ করে জীবিত করেন।
সম্প্রতি হাকালুকি হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাওরের জুড়ী অংশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা গোলায় ধান তোলা নিয়ে যখন বেশ চিন্তায় তখনই তিনি মানবতার আলোকবর্তিকা হয়ে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন তিনি। প্রতিদিন হাওরে গিয়ে কৃষকদের পাশে থেকে প্রতীকী হিসেবে কখনো কাস্তে হাতে ধান কেটে উৎসাহ দিচ্ছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে ধান কাটতে তিনি বেশ উৎসাহ যোগাচ্ছেন। তাদের এমন উৎসাহ দেখে আরো এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্কাউট গ্রুপ ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষকরা।
হাওরাঞ্চলে ধান কাটার সাথে নিয়োজিত কৃষি শ্রমিকরা ভোর বেলা শুধু চা খেয়েই ধান কাটতে যায়। সন্ধ্যায় আবার প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে দুপুরের খাবার খায়। কৃষি শ্রমিকদের এমন কষ্টের কথা শুনে মমতার পরশ নিয়ে তিনি শ্রমিকদের জন্য মানবতার হাত প্রসারিত করলেন। নিজের বেতনের টাকায় শুক্রবার উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের নয়াগ্রামে ৫০০ কৃষি শ্রমিককে খাওয়ালেন দুপুরের খাবার। হাওরের প্রবেশপথে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী যুবক ঠেলাগাড়িতে করে রান্না করা খাবার নিয়ে হাওরে গিয়ে হাজির হন। তারা শ্রমিকদের ডেকে এনে হাতে থালা ধরিয়ে দিয়ে তাতে ভোনা খিচুরি ও ডিম তুলে দেন। শ্রমিকরা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে রাস্তার দু’পাশে বসে খাবারগুলো খান। শুধু তাই নয়, শ্রমিকদের পাশে বসে নিজেও খেলেন এ নিরহংকারী কর্মকর্তা।
এ সময় তার সাথে ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওমর ফারুক, ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা, ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন প্রমুখ।
ইউএনও অসীম চন্দ্র বণিকের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে স্থানীয় কৃষি শ্রমিকরা বলেন, ইউএনও স্যারের এমন মহানুভবতা আমাদের জন্য পরম পাওয়া। ইউএনও স্যারকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের পাশে থাকার জন্য। কৃষকরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সুবিধা পায়, কিন্তু কৃষি শ্রমিকরা মজুরি ছাড়া কিছুই পায় না। ইউএনও স্যার ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়ে আমাদের খাওয়ালেন, যা এর আগে কেউ আমাদের জন্য করেনি।
এক প্রতিক্রিয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক এ প্রতিবেদককে বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে রোধ করার নিমিত্তে হাকালুকি হাওরের সোনালী বোরো ধান কৃষকের গোলায় তুলতে উৎসাহ উদ্দীপনা হিসেবে নিজের ব্যক্তিগত বেতনের টাকা থেকে প্রণোদনা হিসেবে তাদেরকে খাওয়ানো হয়েছে। দুর্যোগের মুহুর্তে কৃষকদের কিছুটা আনন্দ দিতে পেরেছি বলে আমি নিজে পরম আত্মতৃপ্তি লাভ করেছি।
তিনি আরো বলেন, সরকারি নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা প্রশাসনের কাজ ও মূল দায়িত্ব। করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক যে মহামারি প্রকট লাভ করেছে তার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে লকডাউন বাস্তবায়ন, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি নিয়ন্ত্রণ, এবং কর্মহীন নিম্নআয়ের মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া একটা অপরিহার্য কর্তব্য বলে মনে করি।