মা-বাবার পথ ধরে চলে গেল সোনিয়াও, সবাই দুষছেন পল্লী বিদ্যুতের খামখেয়ালিপনাকে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মার্চ ২০২৪, ৪:১২ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ি গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনায় ৬ সদস্যের পুরো পরিবারই মারা গেল। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকা সদস্য সোনিয়াকেও বাঁচানো গেল না। গতকাল ভোরে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। ওইদিন দুপুর ২টার দিকে হাজি ইনজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজার নামাজ শেষে বাবা মা ও ভাই বোনদের কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। সে উত্তর গোয়ালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। এ নিয়ে ওই পরিবারের ৬ সদস্যই বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেলেন। জানা যায় ওই বাড়িতে ঠেলা চালক ও হাজি ইনজাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী প্রতিবন্ধী ফয়জুর রহমান তার পরিবারের ৬ সদস্যসহ একটি টিনের ঘরে বসবাস করতেন। ওই ঘরের উপর দিয়ে উচ্চ ভোল্টেজ ক্ষমতাসম্পন্ন পল্লী বিদ্যুতের ১১ কেবির লাইন পাড়ি দেয়। মঙ্গলবার ঝড়-বৃষ্টিতে সেহরির পর বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে টিনের ঘরের চালে পড়লে আগুন লেগে যায়। এ সময় ঘরের ভেতরে থাকা ফয়জুর রহমান (৫২), স্ত্রী শিরি বেগম (৪৬), বড় মেয়ে সামিয়া বেগম (১৬), মেজো মেয়ে সাবিনা বেগম (১৩) ও ছেলে সায়েম আহমদ (৬) আগুনে পুড়ে ঘরের ভেতর মারা যান।
এ সময় খাটের নিচে পড়ে যাওয়ায় সোনিয়া সুলতানা (৭) দগ্ধ হলেও গুরুতর আহত অবস্থায় বেঁচে ছিল। প্রথমে তাকেও মৃত ভেবে লাশের পাশে রাখার পর শ্বাসপ্রশ্বাস চালু থাকায় তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতাল চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। সেখানে আইসিইউতে রাখার পর রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেয়া হলে ভোরেই সেখানে মারা যায়। তার শরীরে ২৫ শতাংশই পুড়ে যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় ওই গ্রামসহ পুরো জেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমেছে। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের মাঝে চলছে শোকের মাতম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এই মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতিকেই দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। পল্লী বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি জানাচ্ছেন। এরকম দুর্ঘটনা এড়াতে আগে থেকেই বিদ্যুতের অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ লাইন মেরামত ও অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলছেন।
এদিকে ওই দুর্ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের বার্তায় বলা গত মঙ্গলবার ভোরে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার পূর্ব গোয়ালবাড়ি গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার ঘটনার কারণ অনুসন্ধানকল্পে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুস সালাম চৌধুরীকে। পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফজলুল করিম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) দীপংকর ঘোষকে সদস্য রাখা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি সরজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কমিটি প্রয়োজনে যেকোনো কর্মকর্তাকে সদস্য হিসেবে কো-অপট করতে পারবেন এমনটিও বলা হয়েছে। ওই প্রেস বার্তায় বলা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত পরিবারের অনুকূলে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেছেন।