আসছে বন্যা: সুনামগঞ্জে মসজিদে মাইকিং করে ধান কাটার আহ্বান
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০২০, ৬:০১ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা :
বন্যার আগেই পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে হবে। আর এতেই দূর হবে আসন্ন খাদ্য সংকট। সেই সংকট দূর করতে ধান কাটার জন্য আহ্বান করা হচ্ছে মসজিদ থেকেও। এ চিত্র এখন হাওর প্রধান জেলা সুনামগঞ্জের।
আসন্ন খাদ্যসংকটের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি একাধিক ভিডিও কনফারেন্সে যে কোনো মূল্যে হাওরের ফসল কাটার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রশাসনকে। পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মী, শ্রমজীবী, অন্যান্য পেশাজীবীসহ হাওরাঞ্চলের ও বাইরের শ্রমিকদের ধানকাটায় যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই আহ্বানের প্রেক্ষিতে একসময় হাওরে ধান কাটতে আসা উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিকদের বিশেষ ব্যবস্থায় এবার হাওরে নিয়ে আসা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে গাড়িতে করে নিয়ে এসে তাদেরকে স্থানীয়ভাবে শারীরিক তাপমাত্রা মেপে হাওরাঞ্চলের স্কুলে রাতে থাকার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাওরের ধান বন্যার মুখে পড়ার আগে কেটে তুলতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। তাছাড়া গত তিনদিন ধরে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন জেলার বিভিন্ন হাওরে ঘুরে ধানকাটা তদারকিসহ কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছেন।
স্থানীয় মসজিদগুলো থেকেও স্থানীয় শ্রমিকদের মাইকিং প্রচারণার মাধ্যমে ধান কাটার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এরপরও হাওরে শ্রমিক সংকট রয়ে গেছে বলে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও কৃষকরা জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির বেশিরভাগ ধানই এখন পাকা। গত এক সপ্তাহ ধরে হাওরে বিআর ২৮ ধান কাটা শুরু হয়েছে। এই সপ্তাহেই বিআর ২৯ সহ অন্যান্য ধান পাকবে।
এক সপ্তাহ আগ থেকেই সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, সিলেট, গাইবান্দাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে (গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত) ৮ হাজার ৯৭৫ জন কৃষক ধান কাটতে সুনামগঞ্জে প্রবেশ করেছেন।
তাছাড়া স্থানীয় শ্রমিকসহ, স্বেচ্ছাসেবীরাও হাওরে ধান কাটছেন। সরকারি ভর্তুকিকৃত ৯২টি কম্বাইন হার্ভেস্টর ও ১২৮টি রিপার মেশিন দিয়েও হাওর এলাকার উঁচু এলাকার জমির ধান কাটা হচ্ছে। এই মেশিনে নিচু এলাকার জমির ধান কাটা যায়না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, এ পর্যন্ত ধর্মপাশা উপজেলায় ২ হাজার ৬৫০ জন শ্রমিক, শাল্লায় ৭৫০ জন, দিরাইয়ে ৩ হাজার ১২০ জন, জামালগঞ্জে ১ হাজার ২০০ জন এবং জগন্নাথপুরে ১ হাজার ২৫৫ জন শ্রমিক এসে ধান কাটা শুরু করেছেন। তবে এখনো সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার এবং ছাতক উপজেলায় বাইরের কোনো শ্রমিক আসেনি।
এই উপজেলাগুলোতে স্থানীয় শ্রমিক এবং স্বেচ্ছাসেবীরাই এখন পর্যন্ত ধান কাটছেন। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ নেতাদেরকেও বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটতে দেখা গেছে।
ডিসি মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আমরা জরুরি সভা করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই হাওরের সম্পূর্ণ ধান কেটে তুলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ লক্ষ্যে শ্রমিক নিয়ে আসা, স্থানীয় শ্রমিকদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে মাঠে নামানো, স্বেচ্ছাসেবীদের মাঠে নামানোসহ জেলার পেশাজীবী ও শ্রমজীবীদের মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর বাইরের শ্রমিকদের তাপমাত্রা মেপে কাজে যোগদান করানো হচ্ছে। তাছাড়া তারা যাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে ধান কাটেন এবং অবস্থান করেন এ জন্য স্কুলগুলোও খুলে দেয়া হচ্ছে। আগামী ২৬ এপ্রিলের পর বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।