সুনামগঞ্জে প্রেমিককে বেঁধে প্রেমিকাকে আ’লীগ নেতার নেতৃত্বে গণধর্ষণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মার্চ ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় প্রেমিককে বেঁধে রেখে প্রেমিকাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে এ অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দোয়ারাবাজার থানায় গণধর্ষণের মামলা হয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখার সময় নির্যাতিতা কিশোরী ও তার প্রেমিক পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ধর্ষকদের গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশ।
স্থানীয় লোকজন ও নির্যাতিতরা জানান, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ গ্রামের সুরুজ আলীর পুত্র নুরুজ্জামান (২৩) হবিগঞ্জের মাধবপুরে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বেশ কিছুদিন হয় ওখানে থাকার সময় ১৬ বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুক্রবার ওই প্রেমিক-প্রেমিকা বিয়ে করে ঘর বাঁধার আশায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের কামারগাঁওয়ে বন্ধু আফাজ উদ্দিনের বাড়িতে যাবার জন্য রওনা দেয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় দোয়ারাবাজারের আজমপুর খেওয়াঘাটে একই গ্রামের সিএনজিচালক আব্দুল করিমের সঙ্গে তাদের কথা হয়। আব্দুল করিম তাদের আফাজ উদ্দিনের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সিএনজিতে তোলেন। রাতে জালালপুর গ্রামের ভেতরে গিয়ে সিএনজিতে গ্যাস নেই জানিয়ে এদের দুজনকে নামিয়ে দেন চালক।
নামিয়ে দেওয়ার আগে জালালপুরের লিয়াকত আলীর ছেলে মান্নারগাঁও ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আফছর উদ্দিনকে (৩৫) ডেকে আনেন। আফছর উদ্দিন ওই দুজনকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন- তোমাদের কাছে কোনো কাবিননামা নেই। তোমরা একসঙ্গে কিভাবে থাকবে। তোমাদের পুলিশে দেওয়া হবে।
ভয়ে বন্ধুর বাবা মিয়াজান আলীকে ফোন দেয় নুরুজ্জামান। মিয়াজান আলী ঘটনাস্থলে গেলে আফছর আলী জানান, রাতের বেলা এদের এভাবে দেওয়া যাবে না, সকালে পুলিশে দেওয়া হবে বলে মিয়াজান আলীকে বিদায় করে দেন আফছর।
পরে রাত ১টায় ওই দুজনকে জালালপুরের ময়না মিয়ার ছেলে ফয়জুল বারীর বাড়িতে নিয়ে যান। ওখানে নুরুজ্জামানকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে আফছর উদ্দিন, ফয়জুল বারী (৪৫), কামারগাঁওয়ের ইদ্রিছ আলীর ছেলে আব্দুল করিম (৩৫) ও জালালপুরের হায়াত আলীর ছেলে ছয়ফুল ইসলাম (৩০) পালাক্রমে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে বলে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের কাছে জানায় নির্যাতিতা কিশোরী।
এ ঘটনার পর অসুস্থ কিশোরী ও তার প্রেমিক নুরুজ্জামানকে সিএনজিতে তুলে ভোর রাতে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন চালক আব্দুল করিম। শনিবার ভোর সাড়ে ৪টায় কাটাখালি বাজারের পাশে এসে সিএনজি স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেছে জানিয়ে ওই দুজনকে নেমে পেছন দিকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ওরা নেমে পেছন দিকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য যেতেই দ্রুত সিএনজি নিয়ে সটকে পড়েন চালক করিম। শেষে সকাল পর্যন্ত একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয় ওই কিশোরীসহ নুরুজ্জামান।
সকালে স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সিকান্দার আলীর সহযোগিতা চায় নির্যাতিতা কিশোরী ও তার প্রেমিক। তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুটি মোবাইল ও আট হাজার টাকা উদ্ধারের কথা জানিয়ে আইনি সহযোগিতা করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যকে অনুরোধ জানায় তারা।
পুলিশ সদস্য সিকান্দার আলী জানান, শনিবার দুপুরে তিনি দুজন ইউপি সদস্যকে খবর দিয়ে ঘটনা জানান এবং পুলিশকে খবর দেন। বিকালে পুলিশ এসে নির্যাতিতা মেয়েটিসহ তার প্রেমিককে তাদের হেফাজতে নিয়ে যান।
আফছর উদ্দিনসহ অভিযুক্ত চারজনের ফোন বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে ফোন বন্ধ করার আগে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ফোন দিয়ে নিজেকে রক্ষার অনুরোধ জানিয়েছেন আফছর উদ্দিন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল খালেক বলেন, আওয়ামী লীগের কেউ এ ধরনের ঘৃণ্য ঘটনায় যুক্ত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাস বলেন, পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারে কাজ করছে। এর আগে দোয়ারাবাজার থানার ওসি ও সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক সার্কেল) ঘটনাস্থলে যান। তারা নির্যাতিতার বক্তব্যও শুনেছেন। সুত্র-যুগান্তর