লকডাউনের মধ্যে কুলাউড়ায় কালিটি চা বাগানের শ্রমিকদের ভুখা মিছিল!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০২০, ১০:৫০ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার:
তিন মাসের বকেয়া মজুরির দাবিতে রোববার( ১৯ এপ্রিল) দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কালিটি চা-বাগান থেকে উপজেলা সদরে ‘লংমার্চ’ করে এসেছেন চা শ্রমিকরা। তাদের ১২ দফা দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও খালি থালা-বাসন নিয়ে কালিটি চা বাগান থেকে দুই ঘণ্টা পায়ে হেটে কুলাউড়া পৌঁছান শ্রমিকরা। তাদের বকেয়া মজুরি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিশোধ না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবার কথা বলেছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
শ্রমিকরা পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার জানান, কালিটি বাগানটি ‘জোবেদা টি কোম্পানি লি:’ নামে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়া হয়েছে। বাগানে এক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি সপ্তাহের শেষে বৃহস্পতিবার দৈনিক ১০২ টাকা হিসাবে তাদের মজুরি পাওয়ার কথা। কিন্তু কাজ করেও বিগত ১২ সপ্তাহ ধরে তারা মজুরি পাচ্ছেন না। বাগানের শ্রমিক সরদার ও স্টাফদের ১১ মাসের বেতন বকেয়া পড়ে আছে। চা শ্রমিকেরা এমনিতেই সামান্য মজুরি পান। এরপর দীর্ঘদিন ধরে মজুরি পাচ্ছেন না। ঘরে চাল-ডাল না থাকায় অনেককেই উপোস দিন কাটাতে হচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের বকেয়া মজুরি আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করছে।
শ্রমিক অসন্তোষের ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধূরী বলেন, ইতিমধ্যে মানবিক কারণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই বাগানের ৫৫০টি শ্রমিক পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বিশেষ কর্মসূচির আওতায় কালিটি বাগানের শ্রমিক পরিবারগুলোর আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকারের তরফ থেকে পরিবার প্রতি ৫ হাজার টাকা করে প্রায় বিশ লাখ টাকা দেয়ার কর্ম পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অতিশীঘ্র শ্রমিক পরিবারগুলো এ সুবিধা পাবে। তবে বহিরাগত কোন শ্রমিক নেতার ইন্দনে দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতে শ্রমিকরা রোববার প্রশাসনের আহব্বান উপেক্ষা করে উপজেলা সদরে যে মিছিল নিয়ে আসলো তা কতটুকু যৌক্তিক? প্রশাসন তো মালিকের কাছ থেকে জোড়পূর্বক টাকা আদায় করে চা শ্রমিকদের দিতে পারবেনা। এটা শ্রমিকদেরও বুঝতে হবে। তাছাড়া শ্রমিকরা পাওনা আদায়ের জন্য মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে জেলায় লকডাউন চলমান থাকার পরও শ্রমিকরা সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে মিছিল করাটা আইনের পরিপন্থি। তবুও মানবিক কারণে আমরা এখনও কোন আইনি ব্যবস্থা নেইনি। শ্রমিকদের হঠকারি কাজের জন্য গোটা এলাকার জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলা যাবেনা।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফি আহমেদ সলমান বলেন, মালিকের সাথে কথা বলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সমস্যার সমাধান করব। নয়তো মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।