মৌলভীবাজারে বর, কনে ও কমিউনিটি সেন্টারকে জরিমানা ও মামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০২০, ১২:১২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মৌলভীবাজারে কমিউনিটি সেন্টার, ৩ বর ১ কনেসহ অন্যজনকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। এ পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার, বিকেল) ২১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার ৭টি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার অধিকাংশ প্রবাসীই মানছেন না হোম কোয়ারেন্টিনের শর্তাবলী। প্রবাসীরা নিজেদের মতো করে সবার সাথে মিশছেন। এতে ঝুঁকির মধ্যে যেমন নিজের পরিবারকেও ফেলছেন তেমনি ঝুঁকিতে পড়ছেন পুরো জেলার মানুষ। এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপে তারা ক্ষোভের সাথে জানান তাদের পাড়া প্রতিবেশী অনেকেই প্রবাস থেকে বাড়ি ফিরে বিয়েসহ নানা আনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করছেন। কেউ তাদের বারণ করলে বরং উল্টো তারা নানা হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।
আর অনেকেই চক্ষু লজ্জায় তাদেরকে কিছু বলছেন না।
এনিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা করোনা আতঙ্কে ভুগছেন। ঝুঁকি এড়াতে দ্রুত প্রদক্ষেপ নিতে তারা প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছেন। তবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন অবশ্য এবিষয়ে যথেষ্ট সর্তক হয়ে কঠোরভাবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। জানা যায়, গতকাল করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে গ্রিস ফেরত এক তরুণের বিয়ে বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। এ সময় কনেপক্ষকে ৫০ হাজার ও কমিউনিটি সেন্টারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া বরকে দ্রুত কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। গতকাল দুপুরে মৌলভীবাজার শহরের কোর্ট রোডের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। সদর উপজেলার এক তরুণ গত ৮ই মার্চ গ্রিস থেকে দেশে ফেরেন। এরই মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে তিনি বিয়ে করতে বরযাত্রীসহ পৌর কমিউনিটি সেন্টারে আসেন। খবর পেয়ে সেখানে হাজির হয় জেলা প্রশাসন। এদিকে জরিমানার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজারকে সতর্ক করে পরবর্তী নির্দেশনার আগ পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেছার উদ্দীন জানান, খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পৌর কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে জরিমানার পাশাপাশি বিয়ে বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও শহরের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে এক ইতালি প্রবাসীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানাসহ হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এদিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় বিয়ের পিঁড়িতে বসা ও বিয়ের আয়োজন করা দুই প্রবাসী বরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে প্রশাসন। গতকাল দুপুরে কুলাউড়া করোনা প্রতিরোধে সচেতনামূলক অভিযানের অংশ হিসেবে তাদের এই অর্থদণ্ড করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী। তিনি জানান, কুলাউড়ার দুজন প্রবাসী সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। সরকারি আদেশ অনুযায়ী ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা। কিন্তু এদের একজন আজকে বিয়ের পিড়িতে বসেছেন আর অপরজন কালকে (শুক্রবার) বিয়ের আয়োজন করেছেন। তাই জনগনকে সচেতন করতে তাদের জরিমানা করা হয়েছে। এদিকে সরকার ঘোষিত কোয়ারান্টাইন লঙ্ঘনের অপরাধে গতকাল মৌলভীবাজার শহরে ৩ জনকে অর্থদণ্ড আরোপ করেছে প্রশাসন। জেলায় এ পর্যন্ত ২১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের সিংহভাগই বিদেশ ফেরত। এছাড়া কয়েকজন এদের নিকট আত্মীয়ও রয়েছেন যারা উনাদের সংস্পর্শে ছিলেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন অফিস।
শাস্তিপ্রাপ্তরা যাতে সামাজিক ভাবে হয়রানির শিকার না সে জন্য নাম ও পরিচয় গোপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে নিজের ও সবার স্বার্থে কেউ কোয়ারান্টাইন লঙ্ঘন করবেন না এমন প্রত্যাশা জেলা প্রশাসনসহ সবার। এদিকে প্রতিদিনই বাড়ছে কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীর সংখ্যা। প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও সতর্কতায় গতকাল পর্যন্ত বিদেশ ফেরত ২১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা নির্দেশনা দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী, রাজনগর,মৌলভীবাজার সদর ,কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ইতালি,আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে এপর্যন্ত ২১৬ জন প্রবাসী দেশে এসেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসির। তিনি জানান হোম কোয়ারেন্টাইনে যাদের রাখা হয়েছে তারা ইতালি, আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য ফেরত। এর মধ্যে কুলাউড়ায় ৩৭ জন, বড়লেখায় ২৪ জন, কমলগঞ্জে ৪৮ জন, সদরে ১৩ জন, জুড়ীতে ১৮ জন, রাজনগরে ১১ জন এবং শ্রীঙ্গলে ৬৫ জন। তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। যেহেতু তারা করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন তাই বাড়তি সর্তকতার জন্য তাদের নিজ বাসা-বাড়িতে ১৪ দিন সেলফ কোয়ারেন্টিনে মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে। এটা করোনা নিয়ে সরকারের আইন। এরমধ্যে সমস্যা দেখা দিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ দল তাদের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন। করোনা ভাইরাস পজিটিভ হলে চিকিৎসা দেওয়া হবে। লক্ষণ না পাওয়া গেলে ১৪ দিন পর তারা মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করতে পারবেন। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ মানজমিনকে বলেন- মৌলভীবাজারে জেলায় এপর্যন্ত ২১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। উনারা বেশির ভাগই বিদেশ ফেরত, কয়েকজন উনাদের নিকট আত্মীয় ও রয়েছেন যারা উনাদের সংস্পর্শে ছিলেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১১৬টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় করোনা আক্রান্ত পাওয়া গেলে চিকিৎসা দেয়া হবে।