কমলগঞ্জে পুলিশের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মার্চ ২০২০, ১০:০০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে এক পুলিশ সদস্য ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দরিদ্র কৃষক লুৎফুর মিয়ার ৬ শতক জমি দখল করে বসতঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে থানায় ও আদালতে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে কৃষক তার জমি ফেরত পাচ্ছেন না। ঘটনাটি ইসলামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গোলের হাওর গ্রামে।
কমলগঞ্জ থানা ও আদালতে করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গোলের হাওর গ্রামের মসুদ আলির ছেলে মিছবর মিয়া ১৯৭৬ সালে ৪৭২২ দলিলমূলে তার নানী মালিক নেছা বিবির কাছ থেকে দুই দাগে ৩২.৫০ শতক জমি ক্রয় করেন। বর্তমানে জমিটি হাওর মৌজার আরএসএ খতিয়ান ১৮১ ও এসএ খতিয়ান ৪৪১ এর এসএ দাগ নং ৮৫৬ ও আরএস দাগ নং ১১৫৭ এর দুই দাগে৩২.৫০ শতক জমি। জমি ক্রয় করার কিছুদিন পর তিনি অবিবাহিত অবস্থায় মারা গেলে জমিটি তার পিতা মসুদ আলি ও তার বোন গুলবাহারের নামে রেকর্ড করা হয়। কয়েক বছর পর মসুদ আলিও মারা গেলে ওয়ারিসান সূত্রে জমিটির মালিক হন তার ছোট ছেলে লুৎফুর মিয়া। তিনিই পরবর্তীতে জমি ভোগ করে আসছিলেন। বিগত দুইতিন বছর আগ থেকে জমির মালিকানা দাবি করে তামিম মিয়া। তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগে কর্মরত পুলিশ সদস্য। এক পর্যায়ে তামিম গংরা মিলে লুৎফুর মিয়ার খরিদা ৩২.৫০ শতক জমির এক পাশ থেকে ৬ শতক জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়ে পাকা ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করে। ঘর নির্মাণে বাঁধা দিলে দরিদ্র কৃষক লুৎফুর মিয়াসহ তার পরিবারের নারী-পুরুষ সদস্যদের নানাভাবে হুমকি প্রদর্শণ করেন পুলিশ সদস্য তামিম। এ বিষয়ে বাধ্য হয়ে লুৎফুর মিয়া কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের আলোকে কমলগঞ্জ থানার এএসআই আনিছুর রহমান আনিছুর রহমান ঘটনাস্থল তদন্ত করে ভূমি দখলের সত্যতার প্রমান পেয়ে উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে আনে। গত ৬ মার্চ উভয় পক্ষ থানায় উপস্থিত হলে বিবাদী তামিম মিয়া ভূমি দখলের কথা স্বীকার করে তা ছেড়ে দেয়ার কথা বললে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন এএসআই আনিছুর রহমান। পরে পুলিশ সদস্য তামিম বাড়িতে গিয়ে ভূমিটি ছেড়ে না দিয়ে রাতের আধারে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করলে ভূক্তভোগী লুৎফুর মিয়া গত ৯ মার্চ মৌলভীবাজার অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে তার জমিতে অনুপ্রবেশ বন্ধে মামলা দায়ের করেন।
ভূক্তভোগী লুৎফুর মিয়া বলেন, বিষয়টি বিচার প্রক্রিয়াধীন থাকার পরও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশ সদস্য তামিম লোকবল নিয়ে জোর পূর্বক ভূমি দখল করে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করতে গেলে আমি বাধা দেই। সিলেটের ডিআইজি অফিসে এই পুলিশ সদস্য ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করবেন বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সদস্য তামিম মিয়ার মা রীনা বেগম বলেন, আমরা কোন ধরনের হুমকী ধামকি দেয়নি। আমার ছেলে বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাধ দেয়া হচ্ছে। ১৯৭৩ সালে আমার শশুর সবিল মিয়া মালেক নেছা বিবির কাছ থেকে ১৫ শতক ভূমি খরিদ করেন। পরবর্তীতে মাঠ আমিন আমাদেরকে ২০ শতকের একটি মাঠ ফর্চা দেন। তাই সেই জমি ভোগ দখল করে সেখানে ঘর নির্মাণ করছি।
সিলেটে অবস্থানরত পুলিশ সদস্য তামিমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ থানার এএসআই আনিছুর রহমান বলেন, প্রথমে তাদের করা অভিযোগে তদন্ত করে জমি দখলের সত্যতা পাওয়া গেছে। উভয় পক্ষকে নিয়ে কমলগঞ্জ থানায় বসার পর পুলিশ সদস্য দখলীয় জমি ছেড়ে দেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন।
কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাশ জমি দখল করে ঘর নির্মাণ নিয়ে করা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দুইজন উপ-পরিদর্শক মামলার তদন্ত করছেন। বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছেন। তদন্ত পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি জানান।