দেশের বিশ শতাংশ চা উৎপাদন করছে শ্রীমঙ্গলের ফিনলে টি কোম্পানী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ মার্চ ২০২০, ৯:২৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
বাংলাদেশ বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় ২ শতাংশ চা উৎপাদন করে থাকে। বাংলাদেশে ফিনলে টি কোম্পানীর সর্বোচ্চ চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গত বছর এই কোম্পানী এক কোটি ছেষট্টি লক্ষ চোয়ান্ন হাজার কেজি চা উৎপাদন করে। যা দেশের মোট চা উৎপাদনের প্রায় বিশ শতাংশ।
দেশের সবচেয়ে বেশি চা রফতানীকারকও এই প্রতিষ্ঠান। তাদের মোট জমির পরিমান প্রায় ৪০ হাজার একর। মোট চা বাগান ১৭টি। এবং ৭টি ব্ল্যাক ফ্যাক্টরী এর মধ্যে ডিনেস্ট্র এবং রাজঘাট দুটি ফ্যাক্টরী রয়েছে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্ল্যাক টি ফ্যাক্টরী। রয়েছে একটি গ্রীন টি ফ্যাক্টরী। প্রায় এক লক্ষ শ্রমিকের চিকিৎসার জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সেন্ট্রাল হসপিটাল রয়েছে। এসব শ্রমিকদের বাচ্ছাদের লেখাপড়ার জন্য রয়েছে ৩৪টি প্রথমিক বিদ্যালয় এবং একটি করে হাইস্কুল ও কলেজ। এছাড়াও রয়েছে সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখছে এই চা কোম্পানী।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ফিনলে চা কোম্পানীর বালিশিরা বেইলী ক্লাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দিনব্যাপি সারাদেশ থেকে আগত ১৪০জন পরিবেশক প্রতিনিধির সাথে তাদের নিজস্ব বিক্রয় প্রতিনিধিদের নিয়ে ফিনলে টি সেল এন্ড ডিস্ট্রিবিউটর কনফারেন্স অনুষ্টানে এমন তথ্য জানিয়েছেন ফিনলে টি কোম্পানীর চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) তাহসিন চৌধুরী।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, ফিনলে কোম্পানীর পরিচালক শওকত আলী চৌধুরী, ফিনলের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) এসএএ মাসরুর, জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন পরিবেশক প্রতিনিধিগণ।
এসময় তাহসিন চৌধুরী আরো জানান, চা বিশ্বের সব চেয়ে জনপ্রিয় পানির মধ্যে অন্যতম। চা এক যাদুকরী বৃক্ষ, যা তার কচি পাতার নির্জাসজাতিয় দ্বারা সারা বিশ্বের মানুষকে বিমোহিত করে রেখেছে যুগের পর যুগ। ধারনা করা হয়ে থাকে চিনের মধ্যে মঙ্গোলিয়া চা গাছের আদি নিবাস। চা সম্পর্কে সবচেয়ে প্রাচিন ধারনাটি এইরকম ১৭৩৭ সালে চীনের তথকালীন সম্রাট সেননাং ঘটনাচক্রে আবিষ্কার করেন চা পাতার নির্জাস একটি আশ্চর্যজনক উদ্দিপনা সৃষ্টিকারী পানীয়। তিনি চায়ের বিভিন্ন ভেষজ গুনাবলী সম্পর্কে পরিক্ষা নিরিক্ষা করেন, এবং তার লিখিত ‘দ্যা হারবাল ক্যানন অব সেননাং’ বইটিতে উল্ল্যেখ করেন যে চায়ের নির্জাসে ৭২ প্রকার বিভিন্ন বিষকে নির্বিষ করার ক্ষমতা রয়েছে। চায়ের উদ্ভিদ ত্বাত্তিক নাম ক্যামেলিয়া সাইনেন্সিস, যা সকল চা গাছ একই প্রজাতি ভূক্ত।
তিনি বলেন, ঊনবিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে কিছু সংখ্যক চা কোম্পানী যথা আসাম টি কোম্পানী ও ইষ্ট ইন্ডিয়া টি কোম্পানী যারা মূলত ব্রিটিশ ধনকুবের অধিনে পরিচালিত ছিল। তখনই উপমহাদেশে প্রথম চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। ফিনলে কোম্পানিটিও ওই সময়েই প্রতিষ্ঠিত হয়। দেড়’শত বছরের অধিক সময় বাংলাদেশে চা শিল্প কৃষি ভিত্তিক শ্রমঘন একটি শিল্প। চট্টগ্রামে ১৮৪০ সালে প্রথম পরিক্ষামূলক চা চাষ করা হয়েছিল। এরপর বানিজ্যিক ভিত্তিতে ১৮৫৪ সালে সিলেট শহরের পাশে মাংলিছড়ায় প্রথম চা বাগান প্রতিষ্টিত হয়। মাংলিছড়ার সফলতায় এ অঞ্চলে চা বাগান করা শুরু হয়। তাই ১৮৪০ থেকে ১৮৫৪ সময়কালটি আমাদের দেশে চায়ের সুচনাকাল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়কালের শেষ ভাগে দেশের সিলেট এবং চট্টগ্রামের চা চাষের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। এই শিল্পে বর্তমানে ১৬৪টি চা বাগান রয়েছে এবং প্রায় ৫ লক্ষ্যের অধিক লোক এতে নিয়োজিত থেকে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এছাড়া পরোক্ষভাবে আরো পাঁচ লক্ষ লোক চা পরিবহন প্যাকেজিং ও ব্যসার সাথে জড়িত। পৃথিবিতে সর্বাধিক চা উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে রয়েছে চায়না, ভারত, শ্রীলংকা, কেনিয়া, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান, আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ ও ইরান।