কমলগঞ্জে বিল পুনঃখনন প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়ম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ মার্চ ২০২০, ৮:২২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মৌলভীজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মখাবিল পুনঃখনন কাজ প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তি নালা খনন আংশিক ও পার্শ্ববর্তী রাস্তায় চারটি কালভার্ট নির্মাণ না করেই প্রকল্প সম্পন্ন দেখিয়ে বিল-ভাউচার করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পটি ২০১৭ সনের ১১ ফেব্রুয়ারি কার্যক্রম শুরু হয়। কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল এর মধ্যে। ১৬৭ হেক্টর আয়তনে মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এর বাস্তবায়নে মখাবিল পুনঃখনন কাজের জলায়তন ছিল ১ দশমিক ২৮ হেক্টর। প্রকল্পে বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ ১৮ দশমিক ৬৫ লাখ। পার্শ্ববর্তী লাঘাটা নদী থেকে মখাবিলের সাথে সংযুক্ত খাল পুনঃখননের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং বিলের সাথে গ্রাম্য রাস্তা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে চারটি কালভার্ট স্থাপনে ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়।
জলাশয় সংস্কারের জন্য স্থানীয় পতনউষার ইউপি চেয়ারম্যান তওফিক আহমদকে সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আশিক মিয়াকে সদস্যসচিব করে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট অনিবন্ধিত চুক্তিবদ্ধ ভূমিহীন সমিতি গঠন করা হয়। অনিবন্ধিত এই সমিতি বিল পুনঃখনন কাজ শুরু করলেও যথাযথভাবে কাজ সম্পন্ন না হওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে লাঘাটা নদী থেকে বিলের সাথে যুক্ত নালা খনন শুরুর পরপরই অবশিষ্ট কাজ বাকি রেখেই প্রকল্পের কাজ গুটিয়ে নেওয়া হয়। রাস্তায় চারটি কালভার্ট স্থাপন করার কথা থাকলেও সে বিষয়েও গত দুই বছরেও কোনো হদিস নেই। তবে কৃষকরা অভিযোগ তুলছেন কাজ সম্পন্ন না করে বিল উত্তোলন করে সব এলোমেলোভাবে রেখে গেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, কৃষি উৎপাদন বিনষ্ট, মৎস্য আহরণের সুবিধা থেকে স্থানীয়দের বঞ্চিত রেখে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রায় শতাধিক একর জমিতে চাষাবাদ এবং প্রাকৃতিক ওই বিলকে কেন্দ্র করে কৃষি আবাদ করা হয়। বোরো মৌসুমেও বিলের মাধ্যমে সেচসুবিধা নিয়ে আশপাশ এলাকা চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। একই ভাবে বর্ষা মৌসুমে মখাবিল ও পার্শ্ববর্তী লাঘাটা নদী থেকে দেশীয় মাছ আহরণ করে গরিব ও ভূমিহীন কৃষক, মৎস্যজীবীসহ এলাকাবাসী জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এসব বিষয়কে উপেক্ষা করে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল মখাবিলে প্রকল্প দেখিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিলে কিছু কাজ করে প্রকল্পের টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, এই কাজের কোনো সুরাহা হয়নি। অনিয়ম ঘটবে জেনে আগেই কৃষকরা অভিযোগ দিয়েছেন। তা ছাড়া রাস্তায় কালভার্ট স্থাপন না করায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি ও স্থানীয়ভাবে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। তারা আরো বলেন, বিলে নিয়মমোতাবেক গভীরতা হয়নি এবং নালার কাজ সম্পন্ন না করে, কালভার্ট স্থাপন না করেই মালামাল গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ অনিবন্ধিত ভূমিহীন সমিতির সদস্যসচিব ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আশিক মিয়া বলেন, বিলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে নালার কাজ চলাকালীন বন্যা থাকায় কাজ করা যায়নি। তা ছাড়া ৪টি কালভার্টের কাজ করতে না পারায় ওই টাকা ফেরত চলে গেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসিন আহমদ বলেন, এই কাজ চলাকালীন আমার দায়িত্ব ছিল না। তবে প্রকল্প দেখে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, কাজটি আসলে সে সময়ের ছিল। তবে উপকারভোগীদের মাধ্যমে কাজ করানো হয়েছে। এরা যেভাবে করিয়েছে সেভাবে কাজ হয়েছে। তারপরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।