অন্যদের ফাঁসাতে শিশু তোফাজ্জলকে অপহরণ ও হত্যা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ১১:৪০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সাত বছরের শিশু মাদ্রাসাছাত্র তোফাজ্জল অপহরণ হত্যাকান্ডে জড়িত সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সন্দেহভাজন সাত আসামিকে রিমান্ড শেষে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ আদালতে থাকা ইন্সপেক্টর (ওসি) মো.আশেক সুজা মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
কারাগারে প্রেরণকৃত আসামিরা হলেন, উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের মেয়ে নিহত তোফাজ্জলের ফুফু শিউলি, তার সহোদর সালমান হোসেন, লোকমান হোসেন হাবিবুর রহমান, চাচা সারোয়ার হাবিব রাসেল, শিউলির শশুড় কালা মিয়া, জামাই সেজাউল কবির।
প্রসঙ্গত, গত ৮জানুয়ারি বুধবার বিকেলে উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা গ্রাম হতে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হন গ্রামের জুবায়ের হোসেনের শিশুপুত্র তোফাজ্জল। এরপর ১১ জানুয়ারি শনিবার ভোররাতে গ্রামের প্রতিবেশী বাড়ির পেছন হতে সিমেন্টের বস্তায় বন্দি তোফাজ্জলের লাশ উদ্ধার করেন থানা পুলিশ।
তোফাজ্জলকে অপহরণের পর তার এক চোখ উপরে ফেলে এক পা ভেঙ্গে নির্মমভাবে হত্যাকান্ড নিশ্চিত করে ঘাতকরা।তোফাজ্জল অপহরণ হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃকক্ততা থাকার বিষয়ে নিহতের নিকটাত্বীয় (দাদা) আসামি সারোয়ার হাবিব রাসেল বিজ্ঞআদালতে মঙ্গলবার স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। এরপর আদালত তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন।আসামী রাসেল সম্পর্কে নিহত তোফাজ্জলের দাদা জয়নাল আবেদীনের ফুফাত ভাই ও প্রতিবেশী।
পুলিশের দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, পুলিশি রিমান্ডে রাসেল জানায়, শুক্রবার দিবাগতরাতে শিশু তোফাজ্জল তার (রাসেলে)’র শোয়ার কক্ষে খাঁটে শোয়া ছিল। ভয়ে চিৎকার করলে বালিশ চাঁপায় শ্বাসরোধে হত্যার তোফাজ্জলের এক পা ও এক চোখ উপরে ফেলে সিমেন্টর বস্তায় বন্দি করে লাশ গ্রামের প্রতিবেশীর বাড়ির পেছনে ফেলে রাখা হয় অন্যদের ফাঁসাতে।
রিমান্ডের পুর্বেই থানা পুলিশ রাসেলের গ্রামের বাড়ি বাঁশতলার শয়নকক্ষের বঙ্খাঁটের ড্রয়ার হতে রক্তমাখা ভেঁজা লুঙ্গি, সোফার উপর থাকা বালিশের দুটি রক্তমাখা ভেজা তোয়ালে, খাটের বিছানার নিচে রাখা চিরকুট লেখা খাতার অবশিষ্ট অংশ ও শনিবার লাশ উদ্ধারের সময় লাশের পাশে থাকা অপর একটি সিমেন্টের বস্তায় রাখা ৬টি ইট আলামত হিসাবে জব্দ করেন।
অপরদিকে রিমান্ডে থাকা ফুফু শিউলি দুই চাচাসহ ৬ আসামিকে বুধবার আদালত ফের জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন।
এদিকে আলোচিত শিশু তোফাজ্জল অপরহরণ নৃশংস হত্যাকান্ড’ ঘটনা ঘটে যাবার তদন্তে আট দিন পেরিয়ে যাবারপর ওই ঘটনায় রাসেল ছাড়া আর কে বা কারা জড়িত ছিলেন,অপহরণের পর তোফাজ্জলকে কোথায়-কখন হত্যাকান্ড ঘটানো হয়, কেন-কাদেরকে ফাঁসানোর জন্য এ অবুঝ নিষ্পাপ শিশুকে নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে এমনকি তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় মামলার তদন্তকারি অফিসার তাহিরপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো.শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন প্রশ্নের উওর না দিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্তকাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের পিতা জুবায়ের হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, রাসেল সহ যে বা যারাই আমার অবুঝ শিশু পুত্র অপহরণ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকুক না কেন তাদের সর্ব্বোচ্য শাস্তি মৃত্যুদন্ড দাবি করছি আমি, এমন দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক যাতে ভবিষ্যতে তোফাজ্জলের ন্যায় আর কোন শিশুকে এমন বর্বর নৃংশস হত্যাকান্ডের শিকার হতে না হয়।
এদিকে শিশু তোফাজ্জল অপহরণ হত্যাকান্ডে জড়িতদের সর্ব্বোচ্য শাস্তি মৃত্যুদন্ড ও দ্রুত বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার তাহিরপুর উপজেলা সদরে, জেলা সদরে ‘খেলাঘর আসর’ নেতৃবৃন্ধ ও সংগঠনের সদস্যরা পৃথক পৃথক মানববন্ধন পরবর্তী সমাবেশে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার রাতে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমান পিপিএম বলেন,যেহেতু অপহরণ ও হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়ে রাসেল স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে তাই অন্যদের রিমান্ডে রাখার যৌক্তিক কারন না থাকায় বুধবার তাদের আদালতে হাজির করা হয়।