এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় ও নানা প্রশ্ন?
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুলাই ২০১৭, ১২:২২ অপরাহ্ণ
শাহরিয়ার রশিদ কয়ছর:
সদ্য ঘোষিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা সমালোচনা। নতুন শিক্ষা ও পরীক্ষাপদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়া নিয়ে নানা ধরনের নাটকীয়তা দেখা গেছে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষার গড় পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা কমে গেছে।এবারের এইচএসসি পরিক্ষার গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। গতবার এর হার ছিল ৭২দশমিক ৪৭ শতাংশ। গতবারের চেয়ে প্রায় ১৬ হাজার কম জিপিএ পেয়েছে এইবার। অর্থাৎ পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়ার হার উভয়ই কমেছে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে শিক্ষার বৈষম্য ও শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের দূর্বলতার দিকগুলো ফুটে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে,শহরের শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলিতে জিপিএ৫ পাওয়ার হার বেশি। কিন্তু গ্রামের জিপিএ ৫ পাওয়ার হার কমে গেছে। এই শিক্ষার্থীদের বিরাট একটি অংশ উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে শিক্ষার ব্যবধান আরো বাড়বে। গত দশ বছরেও এমন ফলাফল বিপর্যয় ঘটেনি এমন ফলাফলে হতাশ অভিভাবক মহল।
এবার সব শিক্ষা বোর্ডে ২২শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। নির্বাচনী প্রশ্ম বা এমসিকিউতে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ পাস করতে পারেনি। ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা গ্রামে বেশি,এই ফলাফল প্রমাণ করে, গ্রামের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বা অংকে ভালো করতে পারছে না। শিক্ষক সংকট বা যোগ্য শিক্ষকের অভাব এ ক্ষেত্রে বড় কারণ হয়ে থাকতে পারে। আগের কয়েক বছরের ফলাফলের সাথে এবারের ফলাফলে ব্যবধান কেনো বেড়েছে তা পর্যালোচনা করা দরকার।যদি উত্তরপত্র যথাযথ মূল্যায়নের কারণে এই ফলাফল হয়ে থাকে, তাহলে আগের বছর গুলোতে কেনো এমনভাবে উত্তরপত্র দেখা হলো না? মাছরাঙা টেলিভিশন এর একটি নিউজ ভিডিও দেশের সর্বত্র সাড়া ফেলেছিল, তোলপাড় সৃষ্টি হওয়া এই ভিডিও নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়েছিল অনেক। এমন ও হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র অনলাইন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এগুলো নিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এসএসসি পরিক্ষার্থী একজন ছাত্রের লিখার ধরণ এমন যে ক্লাস ২-৩ ছাত্রের লিখাও এর থেকে ভালো। এই শিক্ষার্থী কে এতদূর নিয়ে আসার জন্য অবদান কার শিক্ষক অভিভাবক নাকি শিক্ষামন্ত্রনালয় এর?
অভিযোগ ছিল পাসের হার বাড়ানোর জন্য শিক্ষকদের হাতখুলে বা বেশি নম্বর দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হতো। উচ্চমহলের অনেকেই মনে করতেন পাসের হার বৃদ্ধি মানে শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং এটা সরকারের সাফল্যের অন্যতম সূচক। এভাবে পাসের হার বেশি দেখানোর প্রবণতা শিক্ষাক্ষেত্রে বিপর্যয় সৃষ্টি করছিল।
সফলতার তকমা নিজের গায়ে নেবার জন্য যে পন্থা ব্যবহার করা হয়েছে যার জন্য আজ অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে। নতুন শিক্ষা ও পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, এখন সামগ্রিকভাবে এর মূল্যায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। আগের কয়েক বছরের ফলাফলের সাথে এবারের ফলাফলে কেন ব্যবধান বেড়েছে তা পর্যালোচনা করা দরকার। বিশেষ করে গ্রাম ও শহরের ব্যবধান কমিয়ে আনতে না পারলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়তে থাকবে।