আমি বদলাতে পারলেই আমার চারপাশ বদলাবে !
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুন ২০১৭, ৩:২৯ পূর্বাহ্ণ
বাদশা মিয়া:
সিলেটি( অন্য জায়গা সম্পর্কে আমার ধারণা খুবই নগন্য। তবে অন্য জায়গায় সিলেটের মতো জোড়ালো না এসব প্রথা এটা নিশ্চিত) একটি প্রথা বর্তমানে জগন্য রূপ লাভ করেছে! আর তা হলো বিবাহিত দম্পতিকে কেন্দ্র করে মেয়ে পক্ষ ছেলে পক্ষের বাড়িতে গ্রীষ্ম মৌসুমে আম কাঠাল আর রামাদ্বান মাসে ইফতারি পাঠানো। দেখা বা জানা মতে এই প্রথা কে এমন ভাবে পালন করা হয় যেন মেয়ের বাড়ি কর্তৃক ছেলের বাড়িতে আমকাঠাল বা ইফতারি না পাঠানো গর্হিত অপরাধ। একটু লক্ষ করলেই সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন শ্রেণির(এখানে নিম্ন শ্রেণী বলতে দিন আনে দিন খায় পরিবারকে বোঝানো হয়েছে) পরিবারে এই প্রথার কুফল বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এইসব পরিবারের একজন বধুকে কি যে মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় এই সকল প্রথার জন্য- তা হয়তো এই সব প্রথাবাদীর দৃষ্টিগোচর হবে না! শারীরিক নির্যাতনের চেয়েও জগন্য এইসকল মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেক পরিবার ভেঙে গেছে অথবা অনেকেই আত্মহত্যা করেছে তা হয়তো আমাদের জানার বাহিরে ।
আমার আশপাশের অনেককেই এই সকল প্রথা সম্পর্কে তাদের অভিমত জানতে চাই। কিছু সংখ্যক সচেতনতার সহিত এই সকল প্রথা বন্ধ হওয়া জরুরি বলে মত প্রকাশ করেন। আর বেশিরভাগ যুক্তি ধার করান এই ভাবে যে, এই সকল প্রথা আছে বলেই আমাদের আত্মীয়তার বন্ধন এখনো মজবুদ আছে দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায়। আমি উনাদের এই যুক্তির বিরোধীতা না করে প্রশ্ন রাখি আত্নীয়তার বন্ধন মজবুদ রাখার কর্তব্য কি এক পক্ষের উপর বর্তায়?কেন শুধু এক পক্ষ দিয়ে যাবে আর আরেক পক্ষ গলাধঃকরণ করবে? যদি এর মাধ্যমে আসলেই আত্মীয়তার বন্ধন মজবুদ হয় তাহলে কেন উভয় পক্ষ কর্তৃক পালন করা হয় না?
আশানুরূপ জবাব না পেলেও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন এই প্রথার জগন্য কুফল রয়েছে আমাদের সমাজে।
হে স্বীকার করছি এই প্রথার মাধ্যমে পারিবারিক মিলনব্যবস্থা শক্ত হয়! তাই যদি এই প্রথা আপনি পালন করতেই হয় তাহলে উভয় পক্ষ কর্তৃক পালন করুন! আপনি আপনার ঘর থেকে আন্দোলন শুরু করুন এই প্রথাকে সার্বজনীনতা থেকে বের করে আনতে । আপনি বা আপনার ভাই বিয়ে করলে তাকেও বলুন শশুর বাড়িতে আমকাঠাল বা ইফতারি নিয়ে যেতে।
এতে করে একটা প্রচলন শুরু হবে। আর এর মধ্য দিয়ে যেসব পরিবার এসব প্রথা অপারগ হয়ে পালন করে তারা তা বর্জন করতে শুরু করবে। যখন দেখবে উভয়কেই এই প্রথার কুফল ভোগ করতে হচ্ছে। কারণ আমরা মানব প্রাণী নিজের উপর কিছু না পড়লে সেটার সুফল- কুফল বোঝতে পারি না!
এইসকল প্রথার কারণে যেন আর কোন মেয়ে তার শশুর বাড়ির মানুষের দ্বারা মানুষিক নির্যাতনের স্বীকার না হয় তার বিরোদ্ধে সোচ্চার হতে হবে আপনি, আমি আমরা সবাই।
আপনি আপনার ঘর থেকে শুরু করুন! কারণ আপনার বদলের মধ্য দিয়েই আপনার চারপাশ বদলাতে বাধ্য।
বিঃদ্র:- শুধুমাত্র আত্নীয়তার বন্ধনের দোহাই দিয়ে এই প্রথাকে সমাজে আরো প্রতিষ্ঠিত করতে এর পক্ষ নিবেন না।হয় উভয় পক্ষ কর্তৃক পালন করুন নয় এই জগন্য প্রথাকে না বলুন। মানুষের পাশাপাশি মানবিক হতে চেষ্টা করুন।
লেখকঃ বাদশা মিয়া- শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি)
(সুরমানিউজ এর পাঠককলামে প্রকাশিত সব লেখা পাঠক কিংবা লেখকের নিজস্ব মতামত। এই সংক্রান্ত কোনো ধরনের দায় সুরমানিউজ বহন করবে না। সুরমানিউজ এর কোনো লেখা কেউ বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করতে পারবেন না।)