শিশু নির্যাতন এবং আমরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মে ২০১৭, ৪:৪৪ অপরাহ্ণ
সারওয়ার চৌধুরী:
বাংলাদেশে শিশুদের একটা বড় অংশ শিক্ষা , স্বাস্থ্য , পুষ্টি সহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত । এছাড়াও শিশুরা ব্যাপকভাবে ঘরে – বাইরে , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয় । শিশু নির্যাতনের প্রকৃতি ও ভয়াবহতা দিনে দিনে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । বর্তমান পরিস্থিতিতে শিশুরাই সম্ভবত সমাজের সব চাইতে বঞ্চিত অংশ । ঘরে – বাইরে , সমাজে কোথাও শিশুদের নিজস্বতাকে গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করা হয় না । ফলশ্রুতিতে তারা অতি সহজেই যে কোন নির্যাতনের স্বীকার হয় ।
শিশুরা হল পরিবার , সমাজ তথা রাষ্ট্রের সম্পদ । ভবিষ্যত্ জাতি গঠনের কারিগর । তাই সবার দায়িত্ব হল তাদের যথাযথ শারীরিক , মানসিক ও মানবিক উন্নয়নের দ্বার উন্মুক্ত করা । কিন্তু প্রকৃত সত্য হল প্রতিদিন পৃথিবীতে অগণিত শিশু বিভিন্ন ধরনের বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে , যেগুলো তাদের শারীরিক ও মানসিক মানোন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে । বাংলাদেশ হল ব্যাপক হারে বর্ধিত জনসংখ্যার দেশ , যার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ষোলো কোটি । জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই শিশু যাদের বয়স আঠারো কিংবা তার নিচে । এদের মধ্যে আবার প্রায় দুই কোটির বয়স পাঁচ কিংবা তার নিচে । এই বাচ্চাগুলির মৌলিক অধিকারের অন্যতম হচ্ছে শিক্ষা , স্বাস্থ্য , পুষ্টি , নিরাপত্তা , নিরাপদ বাসস্হান , আনন্দ বিনোদনের সুযোগ -সুবিধা ইত্যাদি । বেশীরভাগ শিশুরাই উপরোক্ত মৌলিক অধিকার গুলি থেকে চরমভাবে বঞ্চিত ।
বাংলাদেশে শিশু নির্যাতন এতই ভয়াবহ যে , শিশুদের প্রকাশ্যে নির্যাতন করতেও কেউ দ্বিধা করে না । দারিদ্রতা , শিক্ষায় অনগ্রসরতা , নির্যাতন সম্পর্কে পিতামাতার অস্পষ্ট ধারণা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে শিশুরা নির্যাতনের স্বীকার হয় । কিছু কিছু নির্যাতনের মাত্রা গুলি এতই প্রকট যে অনেক সময় অনেক শিশুর প্রাণহানী পর্যন্ত ঘটে থাকে ।
আমাদের মানবিক মূল্যবোধের এতটাই স্খলন ঘটেছে যে , চোখের সামনে অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয় , প্রাণহানী ঘটে যেক্ষেত্রে আমরা একটু সোচ্ছার হলেই নির্যাতন বা প্রাণহানী রোধ সম্ভব , আমরা সেটা না করে ব্যস্ত থাকি ভিডিও রেকর্ডিং কিংবা নির্যাতনের দৃশ্য অবলোকনের মাধ্যমে পাশবিক মনোরন্জনে ।
শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন রয়েছে , কিন্তু সমস্যা হল আইনের যথাযথ এবং নিরপেক্ষ প্রয়োগ । যে সমস্ত নির্যাতন গুলি প্রকাশ্যে হয় এবং যার বিভিন্ন প্রমাণাদি খুঁজে পাওয়া কঠিন নয় , সেগুলি যদি দ্রুত বিচার ব্যবস্হার আওতায় এনে নিষ্পত্তি করা হয় তবে শিশু নির্যাতনের মাত্রা অনেকাংশেই কমে আসবে । সে ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সচেতন , সুশীল নাগরিক সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।
লেখকঃ সারওয়ার চৌধুরী,
আমেরিকা প্রবাসী।