নানা সমস্যায় জর্জরিত দক্ষিণ সুরমার দাউদপুর ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ৩:৪৫ পূর্বাহ্ণ
ইমাদ উদ্দিন নাসিরীঃ সিলেট শহরের প্রবেশদ্বার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ৯নং দাউদপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড। মানিকপুর মির্জানগর ও ইনাতআলী পুর গ্রাম নিয়ে এ ওয়ার্ড গঠিত। কয়েক হাজার মানুষ বসবাসকারী উক্ত গ্রামগুলোতে যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে এখনো অনেক অনেক পিছিয়ে। উন্নয়ন বঞ্চিত এই গ্রামগুলো্তে বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন দেশে বিদেশে অবস্থানরত উক্ত গ্রামগুলোর বাসিন্দারা।
চতুরদিক হাওর বেষ্টিত এ গ্রামগুলো বর্ষা মৌসুমে মনে হয় এক একটি গ্রাম এক একটি দ্বীপ । দূর থেকে দেখলে মনে হয় পানির উপরে ভাসছে গ্রামগুলো। মাছে ভাতে সমৃদ্ধ এ গ্রামগুলোর অধিকাংশেরও বেশি লোক কৃষক, বোরো, ফসলই তাদের একমাত্র অবলম্বন। চাকুরীজীবি লোকজন তেমন নেই, কিছু সংখ্যক লোকজন আছেন বহিঃবিশ্বের বিভিন্ন দেশে, গ্রামগুলিতে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও নেই কোন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক পর্যায় ও নেই কোন স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ। স্বাধীনতার কয়েক যুগ পেরিয়ে গেলেও আজ অবদী সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি এ গ্রামে। নামে মাত্র তিন দিক দিয়ে রাস্তা বিদ্যমান থাকলেও কোনটি চলাচলের উপযোগী নয়।
যাতায়াতের মাধ্যম হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে নৌকায়, আর শুষ্ক মৌসুমে ৬-৭ কিলোমিটার হাওর বেষ্টিত কাঁদামাটি পেরিয়ে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ রোড কিংবা মোগলাবাজার-ঢাকাদক্ষিণ (ডিএম) রোড পর্যন্ত পৌছে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমা। যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় উপরোক্ত গ্রামগুলোর লোকজন বিশেষ করে মাধ্যমিক ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রামগুলোতে যে দু’টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, সে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আসতে চান না। আসলেও নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। সুযোগ বুঝে অন্যত্র বদলী হয়ে যান। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোনভাবে পঞ্চম শ্রেণী উত্তীর্ণ হলেও মাধ্যমিক পর্যায় পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না ছাত্র-ছাত্রীরা। যার ফলশ্রুতিতে প্রাথমিক পর্যায় শিক্ষা জীবনের ইতি টানছে কিংবা ঝড়ে পড়ছে।
সিলেট-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরী এ অঞ্চলের জীবন যাত্রার মান্নোয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। বিশেষ করে রাস্তার উন্নয়নে বরাদ্দ, প্রাইমারী স্কুলে নতুন বিল্ডিং নির্মাণ, ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণ, গ্রামের এক প্রাইমারী লেভেলের স্কুলকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বর্ধিত করণ এবং একটি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ শুরু করছেন। ইতি পূর্বে উপজেলা পরিষদ থেকে রাস্তার উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি মানিকপুর-মির্জানগরের প্রবাসে অবস্থানরত ভাইয়েরা মিমা প্রবাসী গ্রুপ রখালগঞ্জ-মানিকপুর অংশে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয় করে মাটি ভরাট সম্পাদন করেছেন। যোগাযোগের উপযোগী রাস্তা নির্মাণে এতো উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার পরও অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় নানা কারণে চলাচলের উপযোগী রাস্তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছুদিন পূর্বে একদল সাংবাদিক নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে আমার কাছে প্রতিয়মান হয়েছে যে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৯০টি ওয়ার্ডের মধ্যে দাউদপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড এখনো অনেক পিছিয়ে।
উপজেলার অন্যান্য ওয়ার্ডের মাটির কাজের তেমন প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও এ ওয়ার্ডে প্রচুর মাটির কাজের যতেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। বিগত ও বর্তমান বঙ্গুবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ম জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্যানেল স্পিকার যিনি দেশের বিভিন্ন জাতীয় কমিটিতে অধিষ্টিত থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। জনাব আলহাজ্ব মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরী তার সংসদীয় আসনে যোগান্তকারী উন্নয়ন কর্মকান্ডে ভূমিকা রেখে চলছেন। বিশেষ করে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ৯০টি ওয়ার্ডের এমন কোন গ্রাম বা স্থান নেই, যেখানে উন্নয়ন কর্মকান্ডে স্থান পায়নি। বিভিন্ন রাস্তা ঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। গুটি কয়েক রাস্তা ব্যতিত তেমন কোন কাজ দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় আছে বলে মনে হয় না।
দাউদপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডকে সরাসরি যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসলে পুরো উপজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থায় চলে আসবে। এতে করে সমালোচনাকারীরা আর কোন সুযোগ পাবে না। সর্বত্র উন্নয়নের মাইল ফলক বিবেচিত হবে। রাস্তার উন্নয়নে কাবিখা, কাবিটা প্রদানের মাধ্যমে এ ওয়ার্ডের তিনটি গ্রামের প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। এই জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস ও প্রকল্প গঠন। বিশেষ করে পূর্ণাঙ্গ সড়ক যোগাযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে মোগলাবাজার-ঢাকা দক্ষিণ (ডিএম) সড়ক রাখালগঞ্জ বাজার হতে মানিকপুর, মির্জানগর ও ইনাতআলীপুর গ্রাম হয়ে সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ রোডের পূর্ণাখলা পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সুদৃঢ়করণের লক্ষ্যে নিমাই ও কেসরখালী নদীতে ব্রিজ নির্মাণ, নদী-খাল খনন কর্মসূচি প্রনয়ন, মাধ্যমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে সুবিধা বঞ্চিত এ অঞ্চলের লোকজনের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র সুদৃষ্টি কামনা করছি।
লেখকঃ
ভাইস চেয়ারম্যান
প্যানেল চেয়ারম্যান-১
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদ
সিলেট।