ইলিয়াস গুমের ১২ বছর : কাটেনি অপেক্ষার প্রহর, মানসিক অস্থিরতায় পরিবার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৭:৫০ অপরাহ্ণ
বাবার ছবিখানাই তাদের মূল সম্পদ। এ ছবি দেখলেই তাদের বুকের ভেতরটায় রক্তক্ষরণ হতে থাকে। চোখ ভিজে যায়, অশান্ত হয় মন। সবকিছু থেকেও আজ নিঃস্ব তারা। বলছিলাম নিখোঁজ সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর তিন সন্তানের কথা। আবরার, লাবিব ও সাইয়ারা নাওয়াল। শিশু অবস্থা কাটিয়ে এখন তারা বড় হয়েছে। বুঝতে শিখেছে যা ১২ বছর আগে বুঝেনি।
আজ ১৭ এপ্রিল। আজ থেকে ১২ বছর আগে ২০১২ সালের ঠিক এই দিনে তৎকালীন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন। রাতে রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। সন্তানরা জানে না ছবির বাবাটি একদিন নড়েচড়ে বসবে কিনা।
এম ইলিয়াস আলী যখন নিখোঁজ হন, তখন তার বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস অর্ণব স্কুলে পড়তেন। সেই আবরার এখন ব্যারিস্টার। অন্য ছেলে লাবিব ও একমাত্র কন্যা সাইয়ারা নাওয়ালও বড় হয়ে গেছেন। কিন্তু বাবার আদর সোহাগ পায়নি।
এদিকে স্বামীকে সেবার সুযোগ চিরতরে হারিয়েছেন কি না তাও জানেন না স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা। তেমনি মা সূর্যবান বিবিও জানেন না ইলিয়াসের মুখে মা ডাক আর শুনবেন কিনা। সন্তানের ফিরে আসার অপেক্ষায় আজো পথ চেয়ে বসে থাকেন মা সূর্যবান বিবি।
ইলিয়াস আলী গুম হবার গত ১২ বছর পরে এসে তার পরিবারের সদস্যরা চেষ্টা করছেন শোক সামাল দিতে, কিন্তু মানুষটি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন এই নিয়ে দ্বিধার কারণে সব সময় একটা মানসিক অস্থিরতার মধ্যে থাকতে হচ্ছে তাদের।
দীর্ঘ একযুগ ধরে তার সন্ধান চেয়ে বিএনপি ও তার সুহৃদরা দেশ-বিদেশে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎসহ নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। ইলিয়াস আলীর পরিবার ও তার কর্মী-সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধে আছেন তার ফেরার অপেক্ষায়। এ জন্য সরকারের উদ্যোগ চান তারা। শুরু থেকে ইলিয়াস আলীর ‘গুমের’ জন্য সরকারকে দায়ী করে আসছে তার অনুসারীরা এবং দলগতভাবে বিএনপি।
নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর পত্নী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা তাহসিনা রুশদির লুনা বলেন, ১২ বছর ধরে আমাদের বাসায় হাসির কোন পরিবেশ নেই। কোথাও কোন অনুষ্ঠানে গেলেই সবারই একটাই প্রশ্ন- ইলিয়াস আলীর কোন খবর আছে কি না? সবসময় এসব প্রশ্ন আমাদের ফেস করতে হয়।
এদিকে ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত বছরও প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন সিলেট জেলা বিএনপির নেতারা। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও প্রতিবাদ কর্মসূচি করবেন বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপি নেতারা।