মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়ায় ‘মহা বিপন্ন’ প্রজাতির উল্লুক উদ্ধার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মে ২০২০, ৫:৪৬ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার:
লাউয়াছড়ার অসুস্থ অবস্থায় একটি উল্লুক উদ্ধার করা হয়েছে। উল্লুকটি মহা বিপন্ন প্রজাতির বলে জানিয়েছেন বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল । বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিকালে মৌলভীবাজার জেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পাশে ফুলবাড়ি চা বাগান এলাকা থেকে উল্লুকটি উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় উল্লুকটি অসুস্থ অবস্থায় ধীরে ধীরে হেঁটে বেড়াচ্ছিল। সাধারণত উল্লুকরা কখনোই মাটিতে নামে না। এরা দিবাচর এবং সম্পূর্ণভাবে বৃক্ষচারী প্রাণী।
মাটিতে এভাবে উল্লুকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় এক বন্যপ্রাণী এবং ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন এলায়েন্স এর ফিল্ড এসিসট্যান্ট চঞ্চল গোয়ালা অবাক হয়ে পড়েন। তিনি বিষয়টি সাথে সাথে শ্রীমঙ্গলের এক সংবাদকর্মীকে জানায়। পরে ওই সংবাদকর্মীর সহায়তায় মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের রেঞ্জকর্মকর্তা মোনায়েম হোসেনকে অবহিত করা হয়। পরে তার নির্দেশনায় স্থানীয়দের সাহায্যে উল্লুকটি আটক করে কাছের বাগমারা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সন্ধ্যার দিকে এটিকে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগ) আ.ন.ম আব্দুল ওয়াদুদ এর নির্দেশে শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল এর কাছে সেবা-শুশ্রুষার জন্য দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী চঞ্চল গোয়ালা জানান, “লাউয়াছড়ার পার্শ্ববর্তী চা বাগানের একটি কালো রঙের উল্লুক অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকার খবর পাই। পরে উল্লুকটিকে মাটিতে দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছে এর কিছু একটা হয়েছে। পরে আমি রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে বলেন, উল্লুকটিকে তাড়াতাড়ি ধরে পাশের বাগমারা বিট অফিসে নিয়ে যেতে।”
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের রেঞ্জকর্মকর্তা মোনায়েম হোসেনের বলেন, উল্লুকটি সম্ভবত ডাল ভেঙে নিচে পড়ে অসুস্থ হয়ে গেছে। তারপর হাঁটতে হাঁটতে চা বাগানের ভেতর সে ঢুকে পড়ে। আর উঠতে পারেনি গাছে।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল বলেন, এই অসুস্থ উল্লুকটিকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন সেটা কিছুটা সুস্থ। তবে কোমড়টাতে বেশি আহত হয়েছে কোমড় তুলতে পারছে না। তার মাথায় যখম ছিল রক্ত বের হচ্ছিলো। এখন রক্ত পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। নরম খাবার খাচ্ছে। সে শক্ত খাবার আপেলটা এখনো সে খেতে পারছে না, তবে কলা, অংগুর খাচ্ছে। কলার ভেতর ঔষুধ দিয়ে তাকে খাওয়ানো হচ্ছে।
উল্লুক গোলাকার দেহের লেজবিহীন মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। পুরুষের দেহ কালো এবং চোখের উপর মোটা সাদা ভ্রু। স্ত্রীর দেহ হলদে-ধূসর। তারও চোখের ভ্রু সাদাটে। তাদের হাত পায়ের তুলনায় দীর্ঘ। ইংরেজি নাম ঐড়ড়ষড়শ এরননড়হ এবং বৈজ্ঞানিক নাম ঐড়ড়ষড়পশ যড়ড়ষড়পশ । এরা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র ‘বনমানুষ’ (অচঈ)।
এরা সচরাচর জোড়ায় বা ৩ থেকে ৫ সদস্যদের পারিবারিক দলে গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। এরা অতি উচ্চস্বরে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে থাকে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের মিশ্র সবুজ বনে এদের দেখা যায়। আইইউসিএন এর রেডলিস্ট অনুযায়ী এ প্রজাতির উল্লুক পৃথিবীব্যাপী ‘মহাবিপন্ন’ প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত।