‘ভোট জালিয়াতি’র তরিকা জানালেন আ’লীগ নেতা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মে ২০২৪, ২:০৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
নির্বাচনে ‘ভোট জালিয়াতি’ কীভাবে করতে হয় সেটার তরিকা বাতলালেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। তার নাম কামরুল হাসান খোকন। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী। তার ওই বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। খোকন বলেন, রহস্যটা হচ্ছে, ‘শুধু যে ছাপ্পা ভোট হচ্ছে তা’ নয়।
খেলাটা চলছে প্রিসাইডিং অফিসারের মাধ্যমে। তালিকায় থাকা প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের নামগুলো আমাদের নেতারা সিলেক্ট করে দিতেন। এরপর তাদের মনোনীত প্রার্থীর হয়ে প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে ২শ পাতার একটি করে বই (ব্যালট পেপার) দিয়ে দিতেন। এরপর জোহরের নামাজের বিরতির সময় সিল মেরে ওই বইয়ের পাতাগুলো ব্যালটে ঢুকানো হতো। এভাবে যদি ব্যালটে ২শ পাতা ঢুকানো হয়, তাহলে ১৮৫টি কেন্দ্রে ৩৬ হাজার ভোট একজন প্রার্থীর পক্ষে এমনিতে হয়ে যায়।
অবশেষে প্রার্থী নির্বাচনে জিতে যায়। কামরুল হাসান খোকন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঠাকুরগাঁও পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য।
উপজেলা নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় কামরুল হাসান খোকনসহ চারজন প্রার্থী। অন্যরা হলেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান অরুনাংশু দত্ত টিটো, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোশারুল ইসলাম সরকার, সহসভাপতি রওশনুল হক তুষার। নির্বাচনে প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কামরুল হাসান খোকন বুধবার উপজেলার বেগুনবাড়ীসহ কয়েকটি এলাকায় নির্বাচনি সভায় বক্তব্য দেন।
সন্ধ্যায় বেগুনবাড়ীতে তিনি বলেন, ‘মানুষের ভোট হচ্ছে পবিত্র আমানত। আমানতকে যারা খেয়ানত করেছে তাদের জবাব দেওয়ার সময় এসেছে আগামী ২১ তারিখের নির্বাচনে। ১৫ বছর আমরা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় আছি। নির্বাচন এলে আমরা জনগণের কাছে গুছিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলি। এত গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলি যে, জনগণ বিভ্রান্ত হয়। পাবলিককে আমরা বোকা বানাই।’
খোকন বলেন, ২১ তারিখের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁওয়ে ‘একজন নয়া মৌলভী সেজেছেন, মসজিদে মসজিদে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। নানারকম ফন্দিফিকির করছেন। আরেক প্রার্থী মন্দিরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের কাছে কেউ যায় না। ১৫ বছর ধরে আমরা ক্ষমতায়। অথচ ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষিভিত্তিক একটি শিল্প আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। অনেক আগে এ জেলায় একটি বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এখন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। এই বিমানবন্দরটিও আমরা চালু করতে পারিনি।’
খোকন বলেন, আমাদের এই জেলায় অনেক রাস্তা এখনো কাঁচা, যেখানে সাইকেল তো দূরের কথা, হেঁটে পর্যন্ত যাওয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতারা আগে খেত বিড়ি, এখন গোল্ডলিফ খাচ্ছে, বেনসন খাচ্ছে। যার মিল চাতাল ছিল না তার এখন মিল ও চাতাল হয়েছে। ও আবার ঢাকায় গিয়ে ফ্ল্যাট কিনছে। আবার ঢাকায় যাদের বাড়ি হয়েছে, তারা আবার দেশের বাইরে গিয়ে বাড়ি কিনছে ফ্ল্যাট কিনছে।’
কামরুল হাসান খোকন নিজ দলের (আওয়ামী লীগ) নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এত টাকা আমাদের কীভাবে হলো। কিসের আয় আমাদের? কিসের ব্যবসা আমাদের যে এত আয়! আসলে এগুলো সব গরিব মেহনতি মানুষের টাকা, তারা শোষণ করে অর্থ কামাই করছে। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।’
খোকন বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে আমরা কি দিতে পেরেছি এ দেশের জনগণকে? টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও আমরা কি করতে পেরেছি জনগণের জন্য? এভাবে দেশ চালানো নিয়ে আমাদেরও সংশয় আছে, আমাদেরও বুকে রক্তক্ষরণ হয়। আমরা মানুষের কাছে যাই না, মানুষকে ধোঁকা দিই, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিই। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় বলেন, আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত থেকে নির্বাচনি সভায় এমন বক্তব্য কোনোভাবেই আশা করা যায় না। এ ব্যাপারে তাকে সতর্ক করা হবে।
তবে কামরুল হাসান খোকন বলেন, ‘ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে, আমি আওয়ামী লীগ করি বলে এটা তো অস্বীকার করতে পারি না। ভোটারের ক্ষোভ কমিয়ে এনে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করতেই এমন বক্তব্য দিয়েছি।’