অজ্ঞান পার্টির টার্গেট মধ্যবিত্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মে ২০২৪, ১:৫৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
রাজধানীতে বেড়েই চলছে অজ্ঞান করে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়া চক্রের তৎপরতা। বিশেষ করে গণপরিবহনে চলাচল করা মধ্যবিত্ত পুরুষদের টার্গেট করে সখ্যতা গড়ে তুলে মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় এই চক্রের সদস্যরা। যার সর্বশেষ বলি হলেন যশোর থেকে ছেলের সঙ্গে ঢাকায় আসা নয়ন বিশ্বাস। মতিঝিলের টিটিপাড়া এলাকায় অজ্ঞান পার্টির দেয়া পানি পান করে রাস্তায় জ্ঞান হারান নয়ন বিশ্বাস। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। অজ্ঞাত লাশ হিসেবে মর্গে পড়ে ছিল নয়ন বিশ্বাসের মরদেহ। এই ঘটনায় বাবা নিখোঁজ উল্লেখ করে শাহাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে ছেলে শ্যারন বিশ্বাস। জিডির সূত্র ধরে তদন্তে নেমে নিহত নয়ন বিশ্বাসের মরদেহ শনাক্ত ও জড়িত অজ্ঞান পার্টির এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। নয়ন বিশ্বাসকে অজ্ঞান করে মোবাইল ফোন ও সঙ্গে থাকা ব্যাগ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় সাভারের আশুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় নূর মোহাম্মদকে। এ সময় নিহতের সঙ্গে থাকা দুটি মোবাইল ফোন ও হাতিয়ে নেয়া কাপড় এবং বিপুল পরিমাণ ঘুমের ওষুধ জব্দ করা হয়।
গতকাল রাজধানীর পল্টনে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপি’র মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, যশোর থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে করে গত ১১ই মে ভোরে ঢাকার কমলাপুরে আসেন শ্যারন বিশ্বাস ও তার বাবা নয়ন বিশ্বাস। সেন্ট জোসেফ স্কুলের শিক্ষার্থী শ্যারন বিশ্বাস বাবাকে কমলাপুরে বিদায় দিয়ে মোহাম্মদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। অপরদিকে তার বাবা নয়ন বিশ্বাস পায়ে হেঁটে টিটিপাড়া এলাকায় যান গাজীপুরগামী বাসে ওঠার জন্য। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। বাবাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে শাহজাহানপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। জিডির পরিপ্রেক্ষিতে নয়ন বিশ্বাসের সন্ধানে নামে পুলিশ। প্রথমে কমলাপুর থেকে টিটিপাড়া পর্যন্ত সড়কের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, নয়ন বিশ্বাস কমলাপুর থেকে পায়ে হেঁটে টিটিপাড়া এলাকার বাস কাউন্টারের সামনে আসেন। এরপর সেখানে এক ব্যক্তি তার সঙ্গে কথা বলেন। ওই ব্যক্তির দেয়া পানি খান তিনি। এরপর কমলাপুর স্টেডিয়ামের সামনে থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া রাইদা পরিবহনের বাসে ওঠেন।
ডিসি বলেন, পরবর্তীতে রাইদা পরিবহন চলাচল করা রুট সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তদন্তকারীরা। তারা জানতে পারেন, ১১ই মে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে হাতিরঝিল থানার রামপুরা টিভি গেট এলাকায় নামিয়ে দেয় বাসের হেলপার। খবর পেয়ে অচেতন অকস্থায় ওই ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ই মে বিকালে মারা যান তিনি। পরবর্তীতে নিহতের মরদেহ অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে মর্গে রাখা হয়। এ তথ্য পেয়ে নিহতের ছেলে মর্গে গিয়ে বাবা নয়ন বিশ্বাসের মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে এ ঘটনায় জড়িত অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্যকে শনাক্তে মাঠে নামেন তদন্তকারীরা। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিশ্বজিৎ কর্মকার ওরফে নূর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার দিন ১১ই মে ভোরে টিটিপাড়া এলাকায় অবস্থান করে টার্গেটের অপেক্ষা করছিলেন তিনি। নয়ন বিশ্বাসকে হেঁটে আসতে দেখে তাকে টার্গেট করেন। এরপর কৌশলে তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন বিশ্বজিৎ। গাজীপুরের উদ্দেশে বাসে ওঠার আগে তাকে পানি খেতে দেন। এরপর তার সঙ্গে বাসে উঠে পড়েন। বাসটি মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে গেলে নয়ন বিশ্বাসের দুটি মোবাইল ফোন ও কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে নেমে যান বিশ্বজিৎ। আর অসুস্থ অবস্থায় নয়ন বিশ্বাসকে রামপুরা নামিয়ে দেন বাসের হেলপার।
হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, অজ্ঞান পার্টির টার্গেট মধ্যবিত্ত। বিশেষ করে যাদের হাতে মোটামুটি দামের মোবাইল মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা থাকে। এই ধরনের মানুষ, যারা গণপরিবহনে চলাচল করেন। তাদের সঙ্গে ঠিকানা জানা হিসেবে কৌশলে পরিচিত হয়ে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এরপর আস্থা অর্জন করে পানি বা অন্য কোনো দ্রব্যের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিলিয়ে খাইয়ে দিয়ে অজ্ঞান করে সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যান। বিশ্বজিৎ ২০ বছর আগে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম নূর মোহাম্মদ নাম ধারণ করেন। মাদকাসক্ত বিশ্বজিৎ মতিঝিলের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবে ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি ১৪ বছর ধরে মতিঝিল, সায়েদাবাদ ও পল্টন এলাকায় অজ্ঞান করে সবকিছু হাতিয়ে নিতেন। গত সপ্তাহেও অন্তত দুটি অজ্ঞান করার কাজ করেছেন বলে পুলিশকে জানায়। গত ১১ই মে তিনি আরও একটি ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে রাজধানীর মুগদা, সবুজবাগসহ বিভিন্ন থানায় মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তিনি এর আগে শত শত ঘটনা ঘটিয়েছেন।