বড়লেখায় ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে সরকারি ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও টাকা নেয়ার অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মে ২০২০, ৯:৩৫ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায় করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের চলমান হতদরিদ্রদের ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র তালিকা থেকে নাম কেটে ফেলার ভয় দেখিয়ে উপকারভোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় ও ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের সদস্য বিজয় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠেছে।
এদিকে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাওলাদার আজিজুল ইসলামকে নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, ইউপি মেম্বার বিজয় কৃষ্ণ দাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয়ের অতিদরিদ্রদের কয়েকজনের কাছ থেকে উৎকোচ না পাওয়ায় তালিকা থেকে তাদের নাম কেটে দিয়েছেন। এজন্য গত মার্চ মাসে ৮ জন হতদরিদ্র চাল পাননি।
চালের সংশ্লিষ্ট ডিলার রাখাল চক্রবর্তী জানান, ইউপি মেম্বার বিজয় কৃষ্ণ দাস গত মার্চ মাসে খাদ্যবান্ধবের তালিকা থেকে দাসেরবাজার ইউনিয়নের গুলুয়া গ্রামের সিদ্ধার্থ শংকর নাথ, বাবুল চন্দ্র দাস, মনজির আলী, পানিসাওয়া গ্রামের রিকেন্দ্র চন্দ্র দাস, দিপক দাস, চানপুর গ্রামের সত্যরঞ্জন দাস, রনজিৎ বিশ্বাস ও গপেন্দ্র বিশ্বাসের কার্ড বাতিল করে অন্য ৮ জনের নাম প্রতিস্থাপন করেছেন।
দিনমজুর মাখল লাল দাস অভিযোগ করেন, ইউপি মেম্বার বিজয় কৃষ্ণ দাস তার কাছে ১ হাজার টাকা দাবী করেন। না দেয়ায় গত বছর খাদ্যবান্ধবের তালিকা থেকে তার নাম কেটে দিয়েছেন। অনেককে নানা অজুহাত দেখিয়ে নাম বাদ দিয়েছেন। আবার অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদেরকে তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন।
এছাড়া ইউপি মেম্বার গত ২ বছর আগের বন্যায় বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় সরকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রতিমাসে নগদ ৫শ’ টাকা ও ৩০ কেজি চাল সহায়তা দিয়েছিল। যেসব কৃষকের নাম তিনি দিয়েছিলেন মাস্টার রোলে স্বাক্ষর নেয়ার পর তাদেরকে চাল দিয়ে টাকা তিনি নিয়ে নিতেন।
এদিকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের তালিকা হালনাগাদের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। স¤্প্রতি প্রত্যেকটি ইউনিয়নে চলমান তালিকা যাচাই বাচাইয়ে ট্যাগ অফিসার নিযুক্ত করা হয়। এ সুযোগে ইউপি মেম্বার বিজয় দাস তালিকা থেকে নাম কাটার ভয় দেখিয়ে হতদরিদ্রের কাছ থেকে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা আদায় করেন।
১০ টাকা কেজি দরের কর্মসূচির কার্ডধারী সুমতি রানী বিশ্বাস জানান, তিনি অত্যন্ত দরিদ্র বিধবা। কার্ড বানিয়ে দেয়ার জন্য মেম্বার ১০০ টাকা নিয়েছেন। এখন বলছেন উপজেলা থেকে অফিসাররা তদন্ত করছেন। তাদেরকে টাকা না দিলে তারা তোমার নাম কেটে ফেলবেন। ১ হাজার টাকা দাবী করলে তিনি মেম্বারকে বিকাশে ৫শ’ টাকা দিয়েছেন।
ইউপি মেম্বার বিজয় কৃষ্ণ দাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের উপকারভোগী সুমতি রানী বিশ্বাসের কাছ থেকে ৫শ’ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে জানান, এ টাকা তার পুরনো পাওনা। বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে বলেন, এগুলো তার স্থানীয় শত্রæপক্ষের অপপ্রচার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান বলেন, বিষয়টি জানার পর অভিযোগ তদন্তের জন্য তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এব্যাপারে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।