কুলাউড়ায় ১২ সপ্তাহ মজুরি বন্ধ, চা শ্রমিকদের ভুখা মিছিল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ এপ্রিল ২০২০, ১০:১৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে অবস্থিত কালিটি চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি প্রায় আড়াই মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে ৫৩৬ স্থায়ী শ্রমিক পরিবারসহ হাজারখানেক শ্রমিক পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে বুধবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভুখা মিছিল করেছে বাগানের শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা জানান, কালিটি চা-বাগানটি ‘কালিটি টি কম্পানি লিমিটেড’ নামে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। বাগানে মোট ৫৩৬ জন নিয়মিত শ্রমিক কাজ করেন। প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক ১০২ টাকা করে মজুরি পান। প্রতিসপ্তাহে তা পরিশোধের কথা। কিন্তু ১২ সপ্তাহ ধরে শ্রমিকরা তাদের মজুরি পাচ্ছেন না। এতে করে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা আরো বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। একদিকে বাগানের মজুরি না পাওয়ায় ক্ষুধার জ্বালায় দিশেহারা তারা অন্যদিকে বাইরে কোথায় গিয়েও কোনো কাজ করতে পারছে না তারা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরীন কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ টি এম ফরহাদ চৌধুরীর মাধ্যমে জানতে পারেন বাগানের শ্রমিকদের দুর্ভোগের কথা। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাগানের ৪০০ শ্রমিকের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়।
বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার জানান, শ্রমিকরা এমনিতেই সামান্য মজুরি পান। আর যদি ১২ সপ্তাহ থেকে কেউ সেই মজুরি পায় না, তাহলে কি অবস্থা হতে পারে? ঘরে চাল-ডাল নেই। উপোস দিন কাটাতে হচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষ আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করছে।
বাগান পঞ্চায়েতের অ্যাডহক কমিটির সাবেক সভাপতি বিশ্বজিৎ দাশ অভিযোগ করেন, বাগানে দীর্ঘদিন ধরে চলছে নানা সমস্যা। আগের মজুরিরও বেশ কিছু টাকা বকেয়া পড়ে আছে শ্রমিকদের। বেশির ভাগ শ্রমিক জরাজীর্ণ কাঁচাঘরে বাস করেন। এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। অবসরে যাওয়া শ্রমিকরা তহবিলের টাকা পাচ্ছেন না। অথচ মজুরি থেকে সাত শতাংশ করে ভবিষ্যৎ তহবিলের টাকা কেটে রাখা হয়।
বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শম্ভু চৌধুরী দাশ বলেন, এর সঙ্গে মালিকপক্ষ আরো সাত শতাংশ যোগ করে মোট ১৫ শতাংশ টাকা শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেওয়ার কথা। বাগান কর্তৃপক্ষ তা-ও করছে না। বাগানে চিকিৎসক নেই। বাগানে বিরাজমান এসব সমস্যার প্রতিকারের জন্য শ্রমিকরা শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন। কিন্তু ১২ সপ্তাহ যাবৎ কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা কোনো উপায় না পেয়ে আজ ভুখা মিছিল করছি।
কালিটি চা বাগানের ব্যবস্থাপক প্রণব কান্তি দেব জানান, কম্পানির কাছ থেকে যথাসময়ে টাকা না পাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মালিক পক্ষ জানিয়েছে, খুব শিগগিরই শ্রমিকদের মজুরিসহ বিবিধ সমস্যার পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে। তিনিসহ বাগানের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১১ মাসের বেতন-ভাতা বন্ধ আছে।
কালিটি টি কম্পানি লিমিটেডের এমডি কয়ছর আহমদ বুধবার মুঠোফোনে জানান, বর্তমানে আর্থিক সমস্যায় রয়েছি। তা ছাড়া পরিস্থিতিতে সবকিছু লকডাউন থাকায় শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তবে তাদের রেশন দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত বাগানের সকল সমস্যার সমাধান করা হবে। সরকার গার্মেন্টশিল্পে শ্রমিকদের প্রণোদনা দিচ্ছে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, বাগানের শ্রমিকদের বাঁচাতে সরকারি সহযোগিতা বা ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, বাগানের শ্রমিকদের মজুরিসহ সামগ্রিক সমস্যার বিষয়ে বাগান মালিক পক্ষের সাথে কয়েকবার কথা হয়েছে। কিন্তু তারা সমস্যা সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখছেন না। এ বিষয়ে সরেজমিন তদন্তপূর্বক বাগানের সামগ্রিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে একটা প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসক স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন। এদিকে বাগানের শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপনের কথা শুনে জেলা প্রশাসক স্যারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ৪০০ শ্রমিকদের মধ্যে সরকারি ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বাকি শ্রমিকদের ত্রাণ সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে।