জুড়ীর মৃত বাজারকে জীবিত করল প্রশাসন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ এপ্রিল ২০২০, ৯:৪৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মৌলভীবাজারের জুড়ীর কামিনীগঞ্জ বাজারে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনার সংক্রমণরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে রাস্তার দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ বাজারগুলো উচ্ছেদ করেছে উপজেলা প্রশাসন। ১৫ এপ্রিল বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অসীম চন্দ্র বণিকের নেতৃত্বে সকাল ১০টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন নির্ধারিত কামিনীগঞ্জ বাজারের পাশে খোলা জায়গায় বাজারটি স্থানান্তর করা হয়েছে। এতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। অভিযানে জুড়ী থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম সরদার, জায়ফরনগর ইউপির চেয়ারম্যান মাছুম রেজাসহ জুড়ী থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নে অবস্থিত কামিনীগঞ্জ বাজারের রাস্তার দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ কাঁচাবাজার, সবজি ও মাছ বাজার থাকার কারণে দীর্ঘদিন থেকে তীব্র যানজট লেগেই থাকত। কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারত না। এতে মানুষদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হতো।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে এই বাজারে কোনোভাবেই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ছিল বেশি। সরকার থেকে নির্দেশনা আসে খোলা জায়গায় বাজার নিতে হবে। ব্যবসায়ীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজার নিয়ে বসবে। অবশেষে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরীনের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বণিক ওই অবৈধ বাজারগুলো উচ্ছেদে মাঠে নামেন। এবং নির্ধারিত স্থানে বাজার স্থানান্তর করতে সক্ষম হয় উপজেলা প্রশাসন ও জুড়ী থানা পুলিশ। এ সময় ইউএনও অসীম চন্দ্র বণিক এবং জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম সরদার বাজারের ব্যবসায়ীদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলেন এবং করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা বললে ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে বাজার সরাতে রাজি হয়। পরে তাদের সরকার নির্ধারিত কামিনীগঞ্জ বাজারের গরুর হাটের পাশে খালি জায়গায় স্থানান্তর করা হয়।
জুড়ী নদীর পাশে গড়ে ওঠা জুড়ীর কামিনীগঞ্জ বাজার একসময় ছিল জুড়ীর ঐতিহাসিক ও প্রধান বাজার। এই বাজারের অনেক ঐতিহ্য ও জৌলুস ছিল। কিন্তু তৎকালীন বাজারের ইজারাদার ও একটি মহলের নিষ্ঠুরতার কারণে বাজারের সকল ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাজারটি স্বাভাবিক ও প্রাণবন্ত করা যায়নি। যার ফলে বাজার জনশূন্য হয়ে পড়ে এবং ব্যবসায়ীরা উপায়ন্তর না দেখে রাস্তার পাশে অবৈধভাবে বাজার গড়ে তোলে। এই বাজার থেকে সরকার অনেক রাজস্ব পেত।
বর্তমানে এই কামিনীগঞ্জ বাজারে গরুর হাটটি ৭০ লাখ ১৪ হাজার টাকা সরকারি ইজারামূল্য ইজারা নেন জায়ফরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাছুম রেজা। সেই বাজারের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ বাজার অপসারণ করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাজারটি এখন অতীতের জৌলুস ও ইতিহাস ফিরে পেয়েছে।
জুড়ী থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম সরদার বলেন, কামিনীগঞ্জ বাজারটি জুড়ীর সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই নিরাপদ। করোনার সংক্রমণ এড়াতে আজকের উচ্ছেদ অভিযানের মূল উদ্দেশ্যে হলো ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপদ রাখা। সবধরনের জনসমাগম এড়াতে এই বাজারটি স্থানান্তর করা হয়েছে। তা ছাড়া জুড়ীর বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় কাঁচাবাজারগুলো অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বণিক বলেন, জুড়ী বাজারে যা অবিশ্বাস্য ছিল জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ তা বাস্তবায়ন করা হলো। এই বাজারটি প্রায় মৃত ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জুড়ীর একমাত্র বাজার আজ নতুন রূপে প্রতিষ্ঠিত হলো। সাধারণ ব্যবসায়ীদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখা গেছে তাদের মনে কোনো কষ্ট নেই, তারা খুবই খুশি। কাঁচামাল ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবনমান উন্নয়নে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই বাজারে আমরা বিনিয়োগ করব। তাদের কথা চিন্তা করে হাটবাজার তহবিল থেকে খুব শিগগিরই টিনশেডের ঘর করে দেওয়া হবে। যাতে ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ বাজারকে অতীতের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।