শ্রমিক সংকটে মৌলভীবাজারে ধান কাটা নিয়ে দু:শ্চিন্তায় কৃষকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ এপ্রিল ২০২০, ৪:২২ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে বিগত এক সপ্তাহ ধরে। করোনাভাইরাসের আতঙ্কের কারণে এবার কৃষি শ্রমিক সংকট থাকায় অনেক কৃষক জমির পাকা ধান কাটতে পারায় পড়েছেন বিপাকে। এ অবস্থায় জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ি এলাকায় বোরো ধান কাটাতে মাঠে নেমেছেন গ্রামের স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। বুধবার(১৫ এপ্রিল) দেশের সর্ব বৃহৎ হাকালুকি হাওর ঘুরে জমিতে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ধান কাটাতে দেখা গেছে।
কুলাউড়ার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কৃষক জব্বার, শফিক জয়ন্ত, কৃপেশের সাথে কথা বলে জানা গেছে প্রতিবছর বোরো ধান কাটার মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষি শ্রমিকরা হাকালুকি হাওরে আসতেন। করোনাভাইরাসের কারণে এবছর এখনো কোন কৃষি শ্রমিক না আসায় অনেক কৃষক জমির পাকা ধান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। হাওর পাড়ের সুসেন্দ্র জানান,আমি এবার প্রায় ২১ কেয়ার জমিতে বোরো আবাদ করেছি। তারমধ্যে দশ কেয়ার জমির ব্রি-২৮ ধান জমিতে পেকে রয়েছে।
প্রতি বছর নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ থেকে আমাদের এলাকায় শ’শ শ্রমিক আসতো এবার করোনাভাইরাসের কারণে কৃষি শ্রমিকরা আসতে পারছে না। তাই জমির পাকা ধান নিয়ে আমরা এখন বেকায়দায় পড়েছি।
কৃষকরা জানান, এক সপ্তাহ মধ্যে জমির ধান না কাটতে না পারলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে। অন্যান্য জাতের ধান আগামী ১০ দিনের মধ্যে কেটে শেষ করতে হবে। তানা হলে হাওরে পানি চলে আসতে পারে। এখন কী করবো আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। দেশের মোট বোরে ফসলের প্রায় ১৯ শতাংশ আসে এসব হাওর থেকে। গত দুই বছর অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে কৃষকরা বোরো ধান ঘরে উঠাতে পারেননি। এতে একফসলি জমির ওপর নির্ভরশীল কয়েক হাজার পরিবার অনেকটা নিঃস্ব হয়ে গেছে।
তাই বাধ্য হয়ে এলাকার স্বুল কলেজ পড়ুয়া ১২ জন শিক্ষার্থী স্বইচ্ছায় আমার জমির ধান কেটে দিতে রাজি হয়েছে। তাদেরকে নিয়ে আমি গতকাল মঙ্গলবার দুই কেয়ার জমির ধান কোন রকম কেটেছি।
ধানকাটার সময় কথা হয় ছকাপন হাই স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী জয়দেব ও ভুকশিমইল মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের ছাত্র সিপারের সাথে তারা জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ থাকায় আমরা এখন অবসর সময় কাটাচ্ছি। তাই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিজের ও প্রতিবেশীদের জমির ধান কেটে দিচ্ছি। তারা বলেন, আমরা ২০-২৫ জনের একটি দল কৃষকদের দূর্ভোগের কথা ভেবে ধান কাটার কাজ করছি। পারিশ্রমিক হিসেবে কৃষকরা আমাদের যা দিচ্ছেন তাই নিচ্ছি।
হাওর পাড়ের কাড়েরা. কালেসার গ্রামের কৃষক সোলেমান, রাব্বী ও হরি দাস বলেন, আমাদের গ্রামের স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ধান কেটে কৃষকদের সহায়তা করায় আমরা জমির পাকা ধান ঘওে তুলতে পারছি এটি একটি ভালো উদ্যাগ।
কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জগলুল হায়দার বলেন, কুলাউড়ায় ৬ হাজার ৯ শ’ ২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৩ শ’ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের ধান কাটার যে উদ্যাগ নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে ধান কাটার জন্য এক এলাকার শ্রমিক অন্য এলাকায় যেতে চাইলে জেলায় চলমান লক ডাউনে কোন সমস্যা হবেনা। বরং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সার্বিক সহায়তা দেয়া হবে।