সুনামগঞ্জের হাওরে ধান কাটলে খাবার দেবে জেলা প্রশাসন
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২০, ৮:১৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সুনামগঞ্জের মাঠে মাঠে দুলছে বোরো ধান। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংকট নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। প্রতিবছর বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার জন্য মানুষ এলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এবার বাইরে থেকে শ্রমিক না আনার জন্য অনুরোধ করেছে প্রশাসন। তবে স্থানীয় বালুমহাল ও বারকি শ্রমিকদেরও কাজ বন্ধ করে হাওরে গিয়ে ধান কাটতে আহ্বান জানিয়েছে প্রশাসন। তবুও কৃষকদের আশঙ্কা শ্রমিক না পেলে সোনালী ধান হয়তো পানিতে ভেসে যাবে। তাই কৃষকদের সহায়তা এবং শ্রমিকদের উৎসাহ দিতে নতুন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে প্রশাসন। সেখানে বলা হচ্ছে যারা ধান কাটতে মাঠে যাবেন তাদের খাবার সামগ্রী দেয়া হবে।
শুক্রবার রাতে ফেসবুকে সকল উপজেলার হাওরগুলোতে ধান কাটার জন্য শ্রমিক নিয়োজিত করতে এলাকায় মাইকিং করার জন্য চেয়ারম্যানদের অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। একইসঙ্গে যারা মাঠে কাজে যাবেন তাদেরকে খাদ্য সামগ্রী উপহার দেয়া হবে বলেও জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্যনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার ছোট বড় ১৫৪টি হাওরে এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মাধ্যমে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জামিতে বোরো ধানের আবাদ হলেও তার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, সঠিক সময়ে যদি ধান কৃষক ঘরে তুলতে না পারে তাহলে বৃষ্টিতে সব ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের দাবি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দ্রুততার সঙ্গে হাওরের বোরো ধান তুলে নেয়া হোক। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর ৯ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিও প্রদান করেছে সংগঠনটি।
এ ব্যপারে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, এখন কৃষকদের ধান কাটার উপযুক্ত সময়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে কৃষকরা বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক না আনতে পারায় অনেক দুশচিন্তায় রয়েছেন। তাই আমরা চাই যারা এ করোনা ভাইরাসের কারণে বেকার জীবনযাপন করছেন যেমন বালুমহাল ও বারকি শ্রমিকদের হাওরে গিয়ে ধান কাটতে হবে। যে বা যারা ধান কাটার জন্য যাবেন তাদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হবে এবং কৃষক যেন সরাসরি ধান খাদ্য গুদামে দিতে পারেন সেজন্য প্রশাসনের কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যদি আমরা আমাদের ধানগুলো ঘরে তুলতে না পারি আর বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় তাহলে কৃষকের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ধান কাটলে আশা করি আমাদের এখানে সংক্রমণ হবে না।
এদিকে জেলা প্রশাসন থেকেও ইতোমধ্যে হাওরে ধান কাটার জন্য দুর্গম এলাকার কৃষকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসায় থাকার ব্যবস্থা করা এবং যারা মাঠেই থাকবেন তাদের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে তাবু সংগ্রহ করার অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, সুনামগঞ্জের কৃষকরা যেনো বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারে সেজন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। বারকি ও বালুমহাল শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে হাওরে গিয়ে ধান কাটার জন্য অনুরোধ করেছি এবং যে বা যারা হাওরে ধান কাটতে কৃষকদের সহায়তা করবেন আমরা তাদের খাদ্য সামগ্রী দেব। কারণ যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ধানগুলো ঘরে তুলে নিতে হবে।