ধর্মপাশায় মসজিদের অধীনে থাকা একটি জলমহলে দুর্বৃত্তের বিষ প্রয়োগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মার্চ ২০২০, ৯:৩৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার দিগজান গ্রামের জামে মসজিদের অধীনে থাকা একটি জলমহলে দুর্বৃত্তরা বিষ প্রয়োগ করে প্রায় ৩০-৩৫ লাখ টাকার মাছ মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বুধবার বিকেলে ওই জলমহলের ইজারাদার উপজেলার সুখাইড়-রাজাপুর উওর ইউনিয়নের দিগজান গ্রামের বাসিন্দা মফিজুর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে একই গ্রামের মৃত আরশাদ আলীর ছেলে সুলতান মিয়া (৫০) ও একই গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে তৈমুরসহ আটজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৮-১০ জনকে আসামি করে ধর্মপাশা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দিগজান গ্রামের জামে মসজিদের উন্নয়নের সার্থে ওই গ্রামের বাসিন্দারা ওই গ্রামের পশ্চিম পার্শ্বে থাকা তাদের মালিকানাধীন প্রায় ৪ একর জমি ওই মসজিদের নামে স্বাধীনতার পর পরই দান করে দেন। তখন থেকেই বর্ষার পানির তুড়ে মসজিদের ওই স্থানটি ভেঙে গিয়ে সেখানে বিশাল আকৃতির একটি জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। উক্ত জলাশয়টি এলাকায় দিগজান গ্রামের মসজিদের খুড় (গভীর গর্ত) নামে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি পায়। আর তখন থেকেই ওই জলমহলটি মসজিদ কমিটির কাছ থেকে স্থানীয় ইজারাদাররা কখনো তিন বছর আবার কখনো ৬ বছর মেয়াদে ইজারায় নিয়ে তারা সেখানে মাছ রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। এ অবস্থায় ওই মসজিদের বৃহত্তর উন্নয়নের স্বার্থে উক্ত মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে ছয় বছর মেয়াদে ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ইজারায় পত্তন নেন দিগজান গ্রামের বাসিন্দা মফিজুর রহমান চৌধুরী নামে একজন ইজারাদার। তিনি জলমহলটি ইজারা পাওয়ার পর থেকেই জলমহলটিতে লাখ লাখ টাকার পোনা মাছ ছেড়ে সেখানে গাছের ডাল ও বাঁশ পেলে তা রক্ষনাবেক্ষণ করে আসছিলেন। এদিকে মফিজুর রহমান চৌধুরী ওই জলমহলটি ইজারা নেওয়ার পর থেকেই একই গ্রামের সুলতান মিয়া, তৈমুর মিয়াসহ তাদের লোকজন রাতের আধারে জাল দিয়ে চুরি করে মাছ ধরাসহ বিভিন্নভাবে তার জলমহলে ক্ষতি করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে ইজারাদারের পক্ষ থেকে ধর্মপাশা থানায় একাধিক মামলা দায়ের করেও তাদের অত্যাচার থেকে জলমহলটিকে নিরাপদে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না।
গত শনিবার দিবাগত রাতে সুলতান ও তৈমুরের নেতৃত্বে তাদের লোকজন ওই জলমহলে চুরি করে জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন। এ সময় জলমহলে নিয়োগকৃত পাহারাদাররা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তারা তাদের সাথে থাকা লোহার রড ও লাঠি দিয়ে জলমহলের পাহারাদার মোস্তাক, রোকন ও মাসুদ মিয়াসহ পাঁচজনকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করে। পরে ইজারাদার রবিবার রাতে ওই দুর্বৃত্তদের আসামি করে ধর্মপাশা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরই জের ধরে মঙ্গলবার রাতে সুলতান ও তৈমুরের নেতৃত্বে ১০- ১২ জন দুর্বৃত্ত ওই জলমহলে বিষ প্রয়োগ করে। এ সময় বিষয়টি টের পেয়ে জলমহলের পাহারাদাররা টস লাইট জ্বালিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলে তার দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এরপর আজ বুধবার সকাল থেকেই ওই জলমহল থেকে বোয়াল, আইড়, রুই, কাতলা, মিনারকাপ, বাউশ, পাবদা, গোলাসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির বিপুল পরিমাণ মাছ মরে ভেসে উঠেতে থাকে। এতে করে ওই জলমহলের প্রায় ৩০- ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হবে বলে দাবি করছেন ইজারাদার।
ওই জলমহলের ইজারাদার মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, জলমহলটি মসজিদ কমিটির কাছ থেকে আমি ইজারায় আনার পর থেকেই কাটা-বাঁশ দিয়ে সেটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছি। ওই গ্রামের সুলতান ও তৈমুরের নেতৃত্বে ১০- ১২ জন দুষ্কৃতিকারী বিষ প্রয়োগ করে আমার জলমহলের সব মাছ মেরে আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সুলতান মিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন এটি আমাদের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র।
দিগজান জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর হক চৌধুরী ওই জলমহলটি মসজিদের উন্নয়নের স্বার্থে কমিটির পক্ষ থেকে মফিজুল হকের কাছে ইজারা দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, কে বা কারা ওই জলমহলটিতে বিষ প্রয়োগ করেছে তা আমি কিছুই বলতে পারব না। তবে এভাবে বিষ দিয়ে মাছ মারার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখ জনক।
এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।