নগরীরতে মেয়র আরিফকে ম্যানেজ করে চলছে নিষিদ্ধ টমটম ব্যবসা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
নগরীর লামাবাজারে ৮টি দোকানে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা বিক্রি করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন তাদেরকে এসব ব্যবসা বন্ধ করতে বা শহরের বাইরের স্থানান্তর করার জন্য বললেও কোন কাজ হয়নি। পরে ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে এসব দোকান সিলগালা করে দেয়া হয়। এরপর ব্যবসায়ীদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিতে দুই মাসের সময় দেয়া হয়। তবে দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ব্যবসায়ীরা মালামাল সরিয়ে নেননি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা, নগরীর লামাবাজারে দি সততা এন্টারপ্রাইজ, খুশি এন্টারপ্রাইজ, সিটি অটো, সিটি অটো-২, সাফা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স জনতা এন্টারপ্রাইজ, সাফা এন্টারপ্রাইজ-২, হযরত গরম দেওয়ান অটোস নামের ৮ টি দোকান এখনও তাদের কোন মালামাল সরিয়ে নেয়নি। কেন মালামাল সরিয়ে নেয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আর মেয়র আরিফ ভুল করে তাদের দোকানে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করেছিলেন। পরে তাকে ‘ম্যানেজ’ করা হয়েছে। এজন্য বর্তমানে মালামাল সরানোর কোন প্রয়োজন নেই।
তবে পুলিশ বলছে, নগরীর নিয়মিত এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু রাতের বেলায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এসব যানবাহনের দৌরত্ম বেড়ে যায়। এজন্য এর বিক্রি বন্ধ করতে হবে। মেসার্স জনতা এন্টারপ্রাইজের ইফতেখার আহমদ সুমন ও খুশি এন্টারপ্রাইজের মো. আমিন বলেন, ২০ জুলাই সিসিকের একটি জায়গা উদ্ধার করতে নগরীর লামাবাজারে অভিযান করেন মেয়র আরিফ। অভিযান শেষে আমাদের দোকান দেখে তিনি হুট করেই অভিযান শুরু করেন। এসময় আমাদের দু-তিনটি দোকান সিলগালা করে দেন। এরপর আমরা সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে দোকান খুলে দেয়ার জন্য আবেদন করি। আবেদনের প্রেক্ষিতে আমাদের দোকান খুলে দেয়া হয়। পরে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে আমরা কথা বলে বিষয়টি সুন্দরভাবে ম্যানেজ করেছি। এখন কোন সমস্যা হচ্ছে না বলেও জানান এ দুই ব্যবসায়ী। এসময় কিভাবে ম্যানেজ করা হয়েছে জানতে চাইলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তবে ম্যানেজ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ম্যানেজ হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমরা সিলগালা করার পর তারা নিজেদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য দুই মাস সময় চান। পরে তাদেরকে সময় দেয়া হয়। সেই সময় অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা যে কোন সময় অভিযান পরিচালনা করতে পারি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়ছল মাহমুদ বলেন, আমরা নিয়মিত এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। তবুও আমাদের অগোচরে হয়তো অনেকেই চালায়। আসলে যেখান থেকে এসব যানবাহন বিক্রি হচ্ছে সেই জায়গাগুলো বন্ধ করে দিলেই এই সমস্যার বেশিরভাগ সমাধান হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে সরকারি এক আদেশে সিলেট নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল, বিক্রি ও বাজারজাত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক সমিতি সরকারি এই নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে উচ্চ আদালতে একটি রিট করলে তা খারিজ হয়ে যায়। এদিকে অবৈধ ইজিবাইক টমটম চলাচলে দক্ষিণ সুরমার সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায়। অবৈধ ইজিবাইক টমটম চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও দক্ষিণ সুরমা এলাকায় সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী রাজনৈতিক কিছু সহকর্মী তা পরিচালনা করে আসছেন। এতে করে দক্ষিণ সুরমার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। পাপ্পু-জগলু ও জনি নামের তিন ব্যক্তির তত্বাবধানে চন্ডিপুল থেকে ক্বীনব্রীজের মুখ পর্যন্ত অবৈধ ইজিবাইক টমটম চলাচল করছে।
ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করার জন্য প্রতিটি ইজিবাইক হতে তারা প্রতিদিন ১৩০ টাকা করে আদায় করে নিচ্ছে বলে জানা যায়। আর রাসেল নামে এক ছাত্রদল নেতা পুরাতন পুলের মুখ থেকে কদমতলী পয়েন্ট পর্যন্ত টমটম চালিয়ে আসছেন। ইজিবাইক টমটমের চালকদের সাথে কথা বললে জানান, তারা প্রতিদিন পাপ্পু, জগলু, জনি ও রাসেলকে ১৩০ টাকা করে দিয়ে আসছেন। এদিকে শিববাড়ী থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্বর পর্যন্ত টমটম চালানোর জন্য রাসেল ও তার সহযোগিদের প্রতিদিন টাকা প্রদান করেন টমটম চালকরা।
এ ব্যাপারে এসএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) নিকোলিন চাকমার সাথে কথা বললে তিনি জানান, অবৈধ টমটম চলতে পারেনা। যারা এগুলোর সাথে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। গত ১৫/২০ দিন আগে ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ তৌফিক বক্স লিপনের মটরসাইকেলে একটি ইজিবাইক টমটম ধাক্কা দিলে মটরসাইকেলটি দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং কাউন্সিলর সামান্য আহত হন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা জানান, অবৈধ টমটম সিসিক মেয়রকে ম্যানেজ করে চালাচ্ছে, এতে করে প্রায় সময় দূর্ঘটনা ঘটছে আর যানজট তো লেগেই আছে।