মনু ব্যারেজ সড়কে ভাঙ্গন, ভ্রমণ পিপাসুদের দুর্ভোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুন ২০১৯, ৬:১২ অপরাহ্ণ
স্বপন কুমার দেব :
মৌলভীবাজার পর্যটন সম্ভাবনাময় “মনু ব্যারেজ” ভাঙ্গা বিধ্বস্ত সড়কে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। শহর থেকে মাত্র ২ মাইল পূর্বে মাতারকাপন এলাকায় অবস্থিত মনু ব্যারেজ একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট। নদীর দুই পাশে ছায়া ঘেরা মায়াবী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মনমাতানো অপূর্ব দৃশ্য। অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আরেক নাম । সবুজে ভরা মায়াবী স্বপ্নপুরীর সৌন্দর্যে মোড়ানো সবুজ চা বাগানে ঘেরা। এখানকার সবুজে আবৃত উঁচু-নিচু টিলার সৌন্দর্য মন কাড়ে সকল পর্যটকদের। পাহাড়ি ভূমির ঘন সবুজ অরণ্যের বুকে চিরে বয়ে চলে ঝর্ণা, পাখ-পাখালির কলকাকলি, হ্রদ, জলপ্রপাত, চা বাগান মৌলভীবাজারকে করেছে আকর্ষণীয়। এখানে রয়েছে দেখার মত অনেক আকর্ষণীয় জায়গা। আর এই মৌলভীবাজারের অপরূপ এক স্থান হিসেবে পরিচিত পেয়েছে মনু ব্যারেজ।
মৌলভীবাজার শহরতলীর মাতারকাপন এলাকায় অবস্থান মনু ব্যারেজের। ১৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মনু নদী ৯৩ কিলোমিটার ভারতীয় এলাকা অতিক্রম করে এ জেলার গোবিন্দপুর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। স্থানীয়দের কাছে ‘সুইচ গেট’ হিসেবেও পরিচিত। বিশেষ করে শীতকালে সূর্য উদয় মনোরম দৃশ্য তৈরি হয়। যা দর্শনার্থীর মন কাড়ে। পর্যটকদের আনাগোনোর কারণে এই ব্যারেজকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পার্ক ও রিসোর্ট। প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থীদের আনন্দে ঘুরে ঘুরে দেখেন এ পর্যটন এলাকা। ফলে মনু ব্যারেজ এলাকা এখন স্থানীয় ও ভ্রমণপিপাসুদের কাছে হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় স্পট। বিকেলের সময়ে বিনোদন ও প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে ভিড় জমান। নানা উৎসব আমেজও লোকে লোকারণ্য হয় মনু ব্যারেজ। এখানে রয়েছে উন্নতমানের একটি রিসোর্ট। রিসোর্টে রয়েছে বিশাল মনোমুগ্ধকর ছড়া। ছড়ায় ভাড়ায় চালিত নৌকা ভ্রমণেরও ব্যবস্থা। রয়েছে বিনোদন পার্ক। ছোট-বড় সবারই চিত্ত-বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে পার্কে। সাধারণত পর্যটকরা সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই পশ্চিম দিকে বয়ে চলা মনু নদীর বুকে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দেখতে পছন্দ করেন। ভাঙ্গা বিধ্বস্ত সড়কে বিশাল বিশাল গর্ত, ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ক্রুটি, পাহাড়ি ঢলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকসহ স্থানীয়রা দীর্ঘদিন যাবৎ চরম বেকায়দায় চলাচল করছেন। যেন জনগণের এ দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই। জনদুর্ভোগ রোধে সড়কটি গাইডওয়াল নির্মাণ করে স্থায়ী সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন পর্যটকসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- সড়কটি অধিকাংশ স্থানে ধেবে গিয়ে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় স্থানে ইট ও বলি উঠে গিয়ে হাটাচলার অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং রাস্থায় মাছ চাষের উপযোগী হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে সড়কটির কয়েকটি স্পটে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বেশ কয়েকবার বালির বস্তা ও মাটি ভরাট করে হাটা-চলার ব্যবস্থা করলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ত্র“টিজনিত কারণে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে স্থানীয়রা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মালামাল আনা-নেওয়াসহ অসুস্থ রোগী ও কোমলমতী স্কুল-কলেজ গামী শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ গন্তব্যস্থানে পৌছতে পারছেনা। বিকল্প কোন সড়ক না থাকাই ভাঙ্গা বিধ্বস্ত সড়ক দিয়ে খুব কষ্টে চলাচল করছে শত শত শিক্ষার্থী। এটি সংস্কারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অতিব জরুরী।
বেরাতে আসা পর্যটক মেধাবী ছাত্র রাহাত আহমদ সিপন বলেন- ‘অবসর সময়ে বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। যদি মনু ব্যারেজকে আরোও সৌন্দর্য বর্ধন করা যায় তাহলে অনেক বড় পর্যটন স্পট হবে। মনু ব্যারেজ এলাকার সৌন্দর্য বর্ধন করলে জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের তালিকায় স্থান পাবে। তাছাড়া শমসেরনগর সড়ক থেকে মনু ব্যারেজ এলাকা পর্যন্ত আসা সড়কটিরও সংস্কার অতিব জরুরী।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহন সার্ভিসের মাধ্যমে মৌলভীবাজার। ফকিরাপুল, সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি বাস যায় মৌলভীবাজার। ভাড়া নন এসি বাসে সাড়ে ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা। মৌলভীবাজার শহর থেকে রিক্সা বা অটোরিকশা করে পৌঁছে যেতে পারবেন মনু ব্যারেজে। যেখানে থাকবেন: মৌলভীবাজারে অনেকগুলো ভাল মানের হোটেল রয়েছে। সেখানে রাত্রিযাপন করতে পারেন।