শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ নিয়ে তুঘলকি কান্ড : আমি বিস্মিত, আমি অবাক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:৩৫ অপরাহ্ণ
সুহেল আহমেদ চৌধুরী:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের এ পর্যন্ত সম্ভবত পাঁচটি তালিকা প্রকাশ হয়েছে। এই পাঁচ তালিকায় নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য নানা তুঘলকি কাণ্ডও হয়েছে। একজন কলেজ শিক্ষকের প্রাণও গেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের এ পর্যন্ত সম্ভবত পাঁচটি তালিকা প্রকাশ হয়েছে। এই পাঁচ তালিকায় নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য নানা তুঘলকি কাণ্ডও হয়েছে। একজন কলেজ শিক্ষকের প্রাণও গেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য কোন নীতিমালা ফেলো করা হয় কি না, আমি নিশ্চিত নয়। বছর কয়েক আগে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বলেছিলেন প্রত্যেক উপজেলা সদরে একটি করে স্কুল এবং কলেজ জাতীয়করণ করবেন। এরই ধারাবাহিকতায় পাঁচ দফায় এ পর্যন্ত চারশ’র বেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের ঘোষণা এসেছে। সরকারীকরণের ঘোষণা আসলেও এখন পর্যন্ত কোন জাতীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সরকারী সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন বলে জানতে পারিনি!
জাতীয়করণের ক্ষেত্রে যদি উপজেলা সদরের কথা বিবেচনা করা হয়, তবে প্রশ্ন আসবে সহ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান নাকি শুধু বালক অথবা শুধু বালিকাদের প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ হবে? যদি ঐতিহ্যবাহী বিবেচনায় করা হয় তবে প্রশ্ন আসবে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার সন কবে? যদি যোগাযোগ বিবেচনায় করা হয় তবে কোন প্রতিষ্ঠান ওয়েল কমিউনিকেটেড সে প্রশ্ন চলে আসবে?
সর্বশেষ ৯টি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করার ঘোষণা এসেছে, তারমধ্যে নবগঠিত ওসমানীনগর উপজেলার একটি প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে। সেটি হল গোয়ালাবাজার আদর্শ মহিলা কলেজ। সেটি নিঃসন্দেহে ওসমানীনগর উপজেলাবাসীর জন্য সুসংবাদ বটে। কিন্তু প্রশ্ন হল এই জাতীয়করণ কিসের ভিত্তিতে হল? উপজেলা সদর, সহ শিক্ষা নাকি ঐতিহ্য বিবেচনায়? এই তিনটির কোনটি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে আমার জানা নেই। তবে উপজেলা সদর হলে তাজপুর ডিগ্রী কলেজের নাম চলে আসার কথা কিংবা ঐতিহ্য বিবেচনায় হলে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত উপজেলার সর্ব প্রাচীন তাজপুর কলেজের নাম বাদ পড়ায় আমি বিস্মিত, কিংবা সহ শিক্ষা বিবেচনায় হলে তাজপুর ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণ না হওয়ায় অবাক হতে হয়েছে।
যদি উপরোল্লিখিত কোন বিবেচনায় না হয়ে থাকে তবে নিশ্চয় দলীয় লাল্লু পাঞ্জুদের সাথে যাদের দহরম মরহম তারা নিজেদের সরকারীকরণের অন্তর্ভুক্ত করতে পরেছেন। যাদের কোন হুমরা ছোমরা গোছের নেতা নেই তারা কি কখনও ইকুয়াল ডেভেলপমেন্টের অংশীদার হতে পারেন না?
তাজপুর ডিগ্রী কলেজে সরকারীকরণে দৌড়ঝাঁপের একটু সমস্যা থাকতে পারে। এখানকার নিয়োগ প্রাপ্ত অধ্যক্ষ কানাডায় স্থায়ী বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি । আমি যেটুকু জানি তিনি এ পর্যন্ত চার দফা ছুটি নিয়ে কানাডা অবস্থান করেছেন। বর্তমানেও কানাডা অবস্থান করছেন। এরমধ্যে তিনি একবার শিক্ষা ছুটি নিয়ে গেছেন, আমি জানি না বোবা গভর্নিং বডি তার কাছে জানতে চেয়েছিলও কি না তিনি কি ডিগ্রী অর্জন করেছেন? বেতন গ্রহণ করবেন কলেজের বসবাস করবেন কানাডায় সে ছুটি গভর্নিং বডি কেন মঞ্জুর করবে? কলেজের অধ্যক্ষ কলেজ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি তাকে ছুটিতে পাঠালে সঙ্গত কারণেই কলেজের ক্ষতি হতে পারে। সে জায়গায় চারবারের ছুটি কলেজ গভর্নিং বডি কিসের বিবেচনায় কার স্বার্থে করে? প্রথমেই একজন পিএইচডি হোল্ডার কে অধ্যক্ষ নিয়োগ করা যেত , তা না করে যে কোন একজন কে প্রশাসনের নিয়ে শিক্ষা ছুটি দিয়ে তাকে যোগ্য করে তোলার গভর্নিং বডি উদ্যোগ কে আমি তাদের জ্ঞানের গরজ বলে অভিহিত করবো। ভাল কর্তার অভাবে প্রতিষ্ঠান অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে, সুবিধা বঞ্চিত হতে পারে তার প্রমাণ তাজপুর ডিগ্রী কলেজ!
জাতীয়করণ হলে এলাকাবাসী কতটা লাভবান হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন। সরকারী করার সময় প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদ সরকারকে রেজিস্ট্রি করে দিতে হয়। প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে আসন সীমাবদ্ধতা, জিপিএ’র মার্জিন এবং প্রশাসনের কর্তারা হবেন গভর্নিং বডির কর্তা কাজেই স্থানীয়দের অংশগ্রহণ কমে আসে অনেকাংশে এবং সব ধরণের শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায় ।
মূলত লাভের অধিকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ যারা এখন মূল বেতন পান কিন্তু বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পান না তারা সরকারীকরণ হলেন একজন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সুযোগ পাবেন, তবে তাদের মর্যাদা নিয়ে শিক্ষা ক্যাডাররা আন্দোলন করছে।
তাজপুর কলেজে ছাত্র ভর্তি নিয়েও তুঘলকি কাণ্ড শুনি, যেমন কলেজের পরিবর্তে কতিপয় নেতা ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তির ফাইল ও টাকা নিজেদের কাছে নেন। পরে ২০/৩০ জনের টাকা গ্রহণ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ নামমাত্র টাকা দিয়ে ফাইল জমা দেন! অর্থমন্ত্রীর ভাষায় এইসব বদমাশ নেতাদের লাগাম ধরার রাস্তা হল মদনমোহনের মত টেলিটকের মাধ্যমে অনলাইনে পেমেন্টের ব্যবস্থা করা। তখন কলেজে শতভাগ ফি আদায় হবে, সেখান থেকে প্রকৃত গরীব মেধাবীদের বৃত্তি প্রদান করা যাবে, যা সারা দেশের জন্য একটি মডেল হতে পারে।
সরকারীকরণের আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ করা গেছে, কিন্তু কলেজের মানোন্নয়নে কোন ভূমিকা চোখে পড়েনি। তবু আমি আশাবাদী এলাকার দাবীর সাথে সরকারের র্শীষ মহল একমত হবেন। কারণ ঐতিহ্যের এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারীকরণ হলে কতিপয়ের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে। প্রতিষ্ঠানটি হাজার বছর ধরে জ্ঞানের আলো বিতরণ করবে, একদিন সতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে। আমাদের সে স্বপ্ন বাস্থবায়নের সিডি সরকারীকরণ। কাজেই এ্ দাবী আপামর জনতার দাবী।
(সুরমানিউজ এর পাঠককলামে প্রকাশিত সব লেখা পাঠক কিংবা লেখকের নিজস্ব মতামত। এই সংক্রান্ত কোনো ধরনের দায় সুরমানিউজ বহন করবে না। সুরমানিউজ এর কোনো লেখা কেউ বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করতে পারবেন না।)