মন্তব্য কলাম:সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্নে আমাদের একটি ঐতিহ্য ছিলো
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ নভেম্বর ২০১৬, ৮:৪৬ অপরাহ্ণ
সুহেল আহমেদ চৌধুরীঃ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্নে আমাদের একটি ঐতিহ্য ছিল। ছিল গর্ব করার মত পারষ্পারিক সহাবস্থান। ভারতের সাথে তুলনা করে এই নিয়ে সবসময় আমার আত্মতুষ্টি ছিল। সেই তৃপ্তির ঢেকুর হিসাবে একবছর আগের আজকের এইদিনে ফেইসবুকে যে স্ট্যাটাস লিখেছিলাম মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোঃ ছায়েদুল হকের আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে সে স্ট্যাটাসটি নিজের কাছেই এখন স্ববৈভব মিথ্যাচার! আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় একজন মন্ত্রী কিভাবে জনসমাবেশে এমন সাম্প্রদায়িক বিষ ঢেলে দিতে পারেন! অন্য কোন এমপি/মন্ত্রী এ মন্তব্য করলে ছিল ভিন্ন কথা। ১ম, ৭ম, ৮ম, ৯ম এবং ১০ম সংসদের পার্লামেন্টারিয়ান, ঢাকা ইউনির্ভারসিটির গ্রাজুয়েট, সুপ্রীম কোর্টের সাবেক আইনজীবী এমন নানা বিশেষণে বিশেষায়িত মন্ত্রী ছায়েদুল হক যখন জনসমাবেশে এমন সব শব্দ ছুড়ে মারেন তখন বুঝতে বাকি থাকে না আমরা কি পরিমাণ উদারতার দন্যতায় ভুগছি। আমাদের মানসিকতা কতটা দীন হীন তা পরিমাপের জন্য এই একটি শব্দই যথেষ্ট।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গালি হয়ে যাওয়ার একটি শব্দ হল মালাউন। এটি একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ অভিশপ্ত বা আল্লাহর অভিশাপ প্রাপ্ত। কিন্তু বাংলাদেশে মূলত জাতিবিদ্বেষমূলক গালি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বাঙালি হিন্দুদের উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক মুসলমানেরা ব্যবহার করে থাকে। যদি এমন হত যারা মালা পরেন তারা মালাউন, যারা তকি(টুপি)পরেন তারা তকিউন। শব্দটি এভাবে ব্যবহার হয় না। হলে হয়ত কোন সম্প্রদায়ের এতটা আঘাত লাগত না।
বিশ্ব মুসলিমের পরম শ্রদ্ধার জায়গা কাবা ঘর। স্বাভাবিক কারণে কাবা ঘরের এই সম্মান ভূলুণ্ঠিত হউক তা কেউ তা বরদাশত করবে না। জৈনক হিন্দু যুবক যার নাম কিনা রসরাজ। তিনি ২৮ অক্টোবর সেই কাবাঘরের ছবির সাথে শিবের ছবি জুড়ে দিয়ে ফেইসবুকে পোষ্ট দিলেন। এরপর কি হল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রসরাজ কে ধরে স্থানীয়রা উত্তম মধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। শনিবারেই রসরাজ গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু তারপরে রবিবারে নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করে যে তাণ্ডব হয় তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত অমানবিক। কোন বিবেক সম্পন্ন মানুষের পক্ষে এমন সাম্প্রদায়িক মানসিকতা নিয়ে তারই প্রতিবেশীর উপর হামলা করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
রসরাজ যা করেছে অবশ্য তা ধিক্কার যোগ্য এবং সেজন্য তার পরিণাম সে ভোগ করেছে। কিন্তু একজন রসরাজের জন্য পুরো এলাকার হিন্দুরা পরিস্থিতির শিকার হবে কেন? কেন তাদের বাড়ী, ঘর, মন্দির ভাঙ্গা হবে? কেন তাদের অত্যাচার করা হবে? তারা কি এদেশের জনগণ নয়? তারা কি ’৭১ আত্মাহুতি দেয় নি? দেশ স্বাধীনে তাদের কোন অবদান নেই? যদি থেকে তাকে তবে কেন জনসমাবেশে ছায়েদুল’রা মালাউন বলে গালি দেবেন? দাবী উঠেছে ছায়াদুলের মন্ত্রিত্ব হয়ত যাবে, কিন্তু সাম্প্রদায়িক যে বিষ তিনি ঢেলেছেন সে বিষ কি সহজে দূরীভূত হবে?
(সুরমানিউজ এর পাঠককলামে প্রকাশিত সব লেখা পাঠক কিংবা লেখকের নিজস্ব মতামত। এই সংক্রান্ত কোনো ধরনের দায় সুরমানিউজ বহন করবে না। সুরমানিউজ এর কোনো লেখা কেউ বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করতে পারবেন না।)