এক দশকে পা রাখলো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ নভেম্বর ২০১৬, ৩:৩৫ অপরাহ্ণ
খসরু মো. সালাহউদ্দিন, সিকৃবি থেকে:
এক দশকে পা রাখলো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নিয়েছে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের এই বিদ্যাপীঠ। এগিয়ে গেছে গবেষণাও। সিলেটের মাটি ও প্রকৃতির আলোকে উদ্ভাবন করা হয়েছে ফসলের নতুন নতুন জাত। এতে উপকৃত হচ্ছেন সিলেটের কৃষকরা। পাশাপাশি অনাবাদি জমিও ফসলের আওতায় আনতে প্রক্রিয়া চলছে। এখন প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। টিলাঘেরা সবুজ পরিবেশের ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। মাত্র ৫০ একর জায়গা নিয়ে সিলেট সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ থেকে ২০০৬ সালের ২রা নভেম্বর দেশের চতুর্থ হিসেবে যাত্রা শুরু করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি সম্ভাবনার নাম। সিলেটের লালচে মাটির গুণগত মান দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্নতর। আবার বৃহত্তর সিলেটে রয়েছে হাজার হাজার একর অনাবাদি উঁচু-নিচু পাহাড়ি অসমতল ভূমি। আছে হাওর নামের বিস্তীর্ণ জলাশয়। অপার সম্ভাবনাময় এসব প্রাকৃতিক সম্পদ গবেষণার মাধ্যমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার জন্য ইতিমধ্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদ সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রোনমি অ্যান্ড হাওর এগ্রিকালচার এবং কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স নামে বিশেষ দুটি বিভাগ রয়েছে, যা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। একমাত্র সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েই বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামে পূর্ণাঙ্গ অনুষদ রয়েছে। এখন পর্যন্ত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ এবং মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে ৫টি করে ১০টি ব্যাচ বের হয়েছে। এদিকে, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্স অনুষদ থেকে ইতিমধ্যে ১৭টি ব্যাচ বেরিয়ে গেছে। সম্প্রতি কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে বেরুলো আরো তিনটি ব্যাচ। এরা সবাই এখন স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করে আছে এবং বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ছোট বড় টিলা পরিবেষ্টিত ৫০ একর আয়তনের মনোরম সিকৃবি ক্যাম্পাস। সবুজে ঘেরা, ছোট ছোট টিলা ক্যাম্পাসের পরিবেশকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর থেকেই সিকৃবি ক্যাম্পাসে গবেষণা হচ্ছে। সম্প্রতি শিমের নতুন দুটি জাত অনুমোদন পেয়েছে। প্রোটিন সমৃদ্ধ এই জাতগুলো হলো-সিকৃবি শিম-১ ও সিকৃবি শিম-২। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃক্যাম্পাস হিসেবে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ফেঞ্চুগঞ্জ-তামাবিল বাইপাস সড়ক সংলগ্ন খাদিমনগর এলাকায় ১২ দশমিক ৩ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও খেলার মাঠ উন্নয়ন, নতুন ছাত্র ও ছাত্রী হল, উপাচার্য বাসভবন, অধ্যাপক-কর্মকর্তার কোয়ার্টার, শিক্ষক-কর্মকর্তার ডরমেটরি, কর্মচারী ডরমেটরি, অতিথি ভবন, নতুন আরেকটি ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্স ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ভেটেরিনারি ক্লিনিক, অস্থায়ী খামারবাড়ি, অস্থায়ী মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এবং নতুন রাস্তা নির্মাণ। এছাড়া অসম্পূর্ণ ছাত্র হল এবং ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রটিও নির্মাণাধীন বয়েছে। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ ভবনের কাজ। শেষ হওয়ার পথে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. গোলাম শাহি আলম দেখালেন স্বপ্ন। মাত্র কয়েক বছরে ছয়টি অনুষদকে সঙ্গে নিয়ে সিকৃবি ঈর্ষণীয় সাফল্যের পথে হাঁটছে। সিকৃবির হাত ধরেই সিলেট তথা পুরো বাংলাদেশে কৃষিতে বিপ্লব আসবে, যার কর্ণধার হবে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তৈরি হওয়া যোগ্য কৃষিবিদরা।