সিলেট-ম্যানচেস্টার ফ্লাইট : বিমান কর্তৃপক্ষের নীরবতায় রহস্য
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ৮:০৩ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। মে মাস থেকে অনলাইনে টিকিট অপারেটিং সিস্টেমে এখনো টিকিট নেই। ফলে বর্তমানে লাভজনক থাকা ওই রুটে বিমানের ফ্লাইট বন্ধের আশঙ্কা করছেন প্রবাসীরা। বিষয়টি নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যাও মেলেনি। সিলেট বিমান অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন; বিমান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাদের কাছেও সুস্পষ্ট কোনো মেসেজ নেই। নির্দেশনা না আসায় ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেটি বলা যাচ্ছে না। যুক্তরাজ্যের হিথ্রো ও ম্যানচেস্টার রুটে সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু রয়েছে। ওখানকার লাখ লাখ প্রবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের তরফ থেকে এই দুটি রুট চালু করা হয়। এরমধ্যে বন্ধ থাকা সিলেট-ম্যানচেস্টার রুট ২০২১ সালে ফের শুরু করা হয়েছিল। এরপর থেকে সপ্তাহে দু’দিন এ রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু রয়েছে।
ম্যানচেস্টারের ওল্ডহামে বসবাসরত সাংবাদিক মোহাম্মদ আহমেদ জুনেদ জানিয়েছেন- অতীতে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে অনেক প্রবাসী দেশে যাননি। তবে ৫ই আগস্টের পর থেকে এ রুটে বিমানের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী এখন দেশমুখী হওয়ার কারণে ১৫০০ থেকে ১৬০০ পাউন্ড দিয়েও টিকিট মিলছে না। ফলে এ রুটে বিমান লোকসানে পড়েছে সেটি বলা যাবে না। তিনি জানান- ম্যানচেস্টার রুটে শুধু যে ম্যানচেস্টারের যাত্রী চলাচল করেন তা নয়। এই রুটে নর্থ ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের প্রায় তিন লাখ সিলেটী প্রবাসী চলাচল করেন। সামনে হচ্ছে সামার মৌসুম। এই সময়ে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী সিলেট যাবেন। যদি ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায় তাহলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়বেন। তার মতে; অতীতে এভাবে টিকিটিং সিস্টেম অফ করে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে এবারো বিমান একই পদ্ধতি গ্রহণ করছে। এজন্য লন্ডন ও সিলেটে ইতিমধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। প্রবাসীরা জানিয়েছেন- বিমান কর্তৃপক্ষ যে দুটি ফ্লাইট চালু রেখেছে সেগুলো ২৭০ সিট বিশিষ্ট বোয়িং বিমান। সিলেট থেকে ম্যানচেস্টার যাওয়া-আসার সময় ফ্লাইটের টিকিট সংকট থাকে। অনেক সময় লন্ডনের যাত্রীরা ম্যানচেস্টার রুটে চলাচল করেন। এদিকে এখন পর্যন্ত বিমানের তরফ থেকে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা না পাওয়ায় আন্দোলন থামছে না। রোববার সিলেট বিমান অফিসের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন প্রবাসীরা। দুপুরে যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রবাসীদের একটি প্রতিনিধিদল সিলেট বিমান অফিসের ম্যানেজার শাহনেওয়াজ মজুমদারের সঙ্গে দেখা করে ফ্লাইট চালু রাখার দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এ সময় তার সঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও প্রচার সম্পাদক লোকমান আহমদ উপস্থিত ছিলেন। বিমান সিলেটের ম্যানেজার শাহনেওয়াজ মজুমদার প্রবাসী কমিউনিটি নেতাদের বক্তব্য শুনেন এবং এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান। শাহনেওয়াজ মজুমদার প্রবাসী নেতৃবৃন্দকে অবগত করে জানান- লন্ডন থেকে ম্যানচেস্টার রুটে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার ব্যাপারে তাদের কাছে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। ফলে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে সেটি বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতনদের নজরে আনবেন বলে প্রবাসী নেতাদের আশ্বস্ত করেন।
যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন- ম্যানচেস্টার রুটে ফ্লাইট চালু থাকা নিয়ে এখনই বিমান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চান প্রবাসীরা। এ বিষয়টি স্মারকলিপির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। তবে রহস্যজনক কারণে বিমান কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না। একজন সিনিয়র সচিব ওই রুটে ফ্লাইট বন্ধের টালবাহানা করছেন। যদি সেটি হয় তাহলে সিলেট ও যুক্তরাজ্যে একসঙ্গে আন্দোলন চালানো হবে। বিষয়টি নিয়ে ইউকে এনআরবি সোসাইটির নেতারা বিমানের চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন। এ কারণে বিপুলসংখ্যক কমিউনিটি নেতা ম্যানচেস্টার থেকে সিলেটে এসেছেন। গতকাল দুপুরে সিলেট অফিসের বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষ করে এসে প্রবাসী নেতারা অফিসের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেন। এতে যুক্তরাজ্য থেকে আসা বেশ কয়েকজন প্রবাসী নেতা অংশ নেন।
সভা শেষে সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন- অতীতে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল বিমান। এর ধারাবাহিকতায় মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে একটি লাভজনক রুটকে অলাভজনক দেখিয়ে সিলেটবিদ্বেষী একটি অংশ ম্যানচেস্টার রুটে বিমানের ফ্লাইট বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। সিলেটবাসী কখনো বিমানের এ সিদ্ধান্ত মানবেন না। বিষয়টি নিয়ে আমাদের তরফ থেকেও বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জেলা বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক লোকমান আহমদ জানিয়ে দেন; যদি ওই রুটে বিমান কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট বন্ধের পাঁয়তারা না করে তাহলে এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য প্রদান করতে বাধা কোথায়। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষের রহস্যময় নীরবতায় বিষয়টি ক্রমেই রহস্যময় হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে দ্রুতই তিনি বিমান কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দাবি করেন। -মানবজমিন