ক্বিন ব্রিজের নীচে দেহ ব্যবসা ও গাজা সেবন, প্রশাসন কি নজর দেবে?
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ২:৩১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেট মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সুরমা পয়েন্টের নিকটবর্তী, সুরমা নদীর তীরবর্তী সিলেটের মহানগরীর ইতিহাস ঐতিহ্যের ক্বিন ব্রিজের নিচে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় প্রকাশ্যে দেহ ব্যবসা আর দিনের আলো থেকে রাতের আধারে চলে নির্ভয়ে গাজা সেবন ও উন্মুক্ত প্রস্রাব করা।
সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ক্বিন ব্রিজের নিচ দিয়ে সার্কিট হাউজের পাশের রাস্তা ধরে দৃষ্টি নন্দন নদীর তীরের দিকে হেঁটে গেলেই যে, কারো নজরে পরবে সার্কিট হাউজের দেয়াল ঘেষা ফুটপাতে কয়েক জন দেহ ব্যবসায়ী নারী খদ্দেরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। একজন খদ্দের পেলেই দেহ ব্যবসায়ী নারীরা ঢুকে যান খদ্দের নিয়ে অন্ধকার নোংরা ব্রিজের নিচে। এই দেহ ব্যবসায়ী নারীদের খদ্দের অধিকাংশ নিন্ম শ্রেণীর পুরুষ ও উঠতি বয়সি যুবকরা। প্রতিদিন চলছে এভাবে অসামাজিক কার্যকলাপ।
দিনের আলো কিংবা রাতের আধারে সার্কিট হাউজের দেয়াল ঘেষা ফুটপাত যেন উন্মুক্ত প্রস্রাব খানা। আর রাস্থার দু-পাশ যেন গাজা সেবনের নিরাপদ স্থান। এই পথ ধরে হাটলেই যে কোন সময়, যে কারো চোখে পরবেই লাইনে দাঁড়িয়ে ফুটপাতের পথচারী, দোকানী, রিক্সার কিংবা ভ্যান ড্রাইভারদের প্রস্রাব করার দৃশ্য। আর নাকে ভেসে আসবে গাঁজা সেবনের ঝাঁঝালো গন্ধ। যদিও প্রশাসনের কারো নজরেই পরেনা।
ক্বিন ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে যাচ্ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী স্থানীয় দর্শনার্থী। কথা হয় উনার সাথে। উনি নাক চেপে ধরে জানালেন এখানে আসছি ছবি তুলতে। আমার প্রবাসের (যুক্তরাজ্য) বিদেশী বন্ধুদের সাথে আমাদের দেশ ও শহরের পরিচয় ও ইতিহাস ঐতিজ্য সংস্কৃতি তুলে ধরবো বলে। তারপর তাদেরকে আমাদের দেশে, আমাদের শহরে আমন্ত্রণ জানাবো। কিন্তু এখানে আমি নিজেই প্রস্রাবের দুর্গন্ধ আর কি একটা ঝাঁঝালো গন্ধে (গাঁজা) নাক চেপে ধরে আছি। একটা ছবিও তুলতে পারিনি এই দুর্গন্ধের যন্ত্রণায়। কি ভাবে আমার যুক্তরাজ্যের বন্ধুদের নিমন্ত্রণ জানাই ভেবেই পাচ্ছিনা। যদি এই দুর্গন্ধ আমাকে লজ্জায় ফেলে দেয় তাদের কাছে। বুঝতেই তো পারছেন ওরা পরিছন্য যুক্তরাজ্যের নাগরিক।
সন্ধ্যার দিকে দৃষ্টি নন্দন সুরমা নদীর তীরের ফোয়ারার দেয়ালে বসে ছিলেন কয়েকজন তরুন যুবক। কারো হাতে ছিল ফুচকার প্লেইট, কারো হাতে চটপটির প্লেইট। উনাদের সাথে কথা বলে জানা গেল উনারা ঢাকা থেকে সিলেটে আসছেন কোন এক বড় ভাইর আমন্ত্রণে। যিনি সিলেটের কোন এক প্রাইভেট ফার্মে চাকরিরত আছেন। আমি উনাদের উদ্যেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম কেমন লাগছে সিলেটে বেড়াতে এসে?
প্রায় সবাই এক সাথে বলে উঠলেন অনেক ভাল। উনাদের মধ্য থেকে চশমা পরা একজন বলে উঠলেন সত্যি কথা বলতে কি আমরা আজ সকালেই সিলেটে আসছি। সারাদিন রেষ্ট নিয়ে সন্ধ্যা বেলা এখানে আসছি। কাল শাহজালাল ও শাহপরান মাজার ও চা বাগান দেখতে যাবো। তারপরের দিন যাবো জাফলং। এর পরের দিন হয়তো সিলেটের সুন্দরবন খ্যাত রাতারগুল। কিন্তু এখানে আসার পথে ঐ জায়গায় (ক্বীন ব্রিজের ঘোরার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে) যে দৃশ্য দেখলাম বলতেই উনার সাথের সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন। তখন আমি নিজেই লজ্জিত বোধ করলাম। কারন এই শহর আমার শহর। এই শহর আমার জন্মভূমি। চশমা পরা যুবকটি বুঝতে পারলেন আমার লজ্জিত বোধটা। তাই উনি সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন সরি আমি আপনাকে লজ্জায় ফেলে দিলাম। আসলে এ রকম প্রকাশ্যে অসামাজিক কার্যকলাপ সত্যিই লজ্জার। ভাগ্যিস বাবা মা ভাই বোনদের নিয়ে এমন নোংরা দৃশ্য ও পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়নি।
সিলেট মহানগরীর ইতিহাস ঐতিজ্যের ক্বীন ব্রিজ, দেশের দীর্ঘতম সুরমা নদী, আলী আমজাদের ঘড়ি, আলী আমজাদের ঘড়ি, পীর হাবিবুর রহমান লাইব্রেরী, সারদা হল, দৃষ্টিনন্দন সিলেট সার্কিট হাউসকে ঘিরে লেগে থাকে দিন রাত দেশী বিদেশী পর্যটকদের ভীর। এখানে বেড়াতে আসা হাজার হাজার পর্যটক গাজার ঝাঁঝালো গন্ধে বিরক্ত হোন। এবং বউ বাচ্ছাকে নিয়ে আসা পর্যটকরা সন্ধ্যার পরে প্রকাশ্যে দেহ ব্যবসা দেখে লজ্জিত হয়ে চেহারায় বিরক্ত প্রকাশ করেন। যা সিলেট মহানগরবাসীর জন্যও লজ্জা।
গত শতাব্দীর নব্বই দশকের শেষের দিকে সুরমা নদীর পাড় ছিল অবৈধ্য শতশত ঝুলন্ত দোকান, দেহ ব্যবসায়ী নারী ও তাদের দালালদের দখলে। সিলেট শহরের সবচেয়ে খারাপ জায়গা ছিল এই স্থানটি। সাধারন মানুষের কাছে পুলের তল (খারাপ অর্থে ব্যবহৃত শব্দ)নামে পরিচিত ছিল।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সে সময়ের স্থানীয় এমপি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের উদ্যোগে সুরমা নদীর পাড় থেকে উচ্ছেদ করা হয় অবৈধ্য ঝুলন্ত দোকান, দেহ ব্যবসায়ী নারী ও তাদের দালালদের। সুরমা নদীর দু-পাড় বাঁধানো হয় সিমেন্টের তৈরি স্ল্যাব দিয়ে। কৃত্রিম ফোয়ারা, এসএস পাইপ এর রেলিং, ফ্লোর টাইলস, দৃষ্টি কারা আলোক সজ্জা, আধুনিক ফুলের টব সহ চেনা অচেনা গাছ গাছালি দিয়ে সাজানো হয় সুরমা নদীর দুই পাড়। ইতিহাস ঐতিজ্যকে অঠুট রেখে নতুন ভাবে সাজানো হয় ক্বীন ব্রিজ, আলী আমজাদের সিড়ি, ও ঘড়ি। পুরাতন জরাজীর্ণ সার্কিট হাউসকে ভেঙ্গে নতুন ভাবে সাজানো হয় নান্দনিক রুপে। তারপর থেকে এই স্থানে দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। স্থানীয় ও দেশী বিদেশী পর্যটকদের কাছে হয়ে উঠে প্রিয় স্থান।
ক্বিন ব্রিজের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে সিলেট কোতোয়ালি থানা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, অস্থায়ী সিলেট সিটি কর্পোরেশন, সিলেট জেলা আদালত, ডিসি কার্যালয়, গণপূর্ত বিভাগ, জেলা পোষ্ট অফিস, নির্মাণাধীন সিলেট সিটি কর্পোরেশন, বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিলেট স্টেশন ক্লাব, পার্ক সহ অসংখ্য সরকারী বেসরকারী অফিস সমূহ। রয়েছে অসংখ্য মসজিদ, মন্দির, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, শপিংমল, কাচা বাজার।
এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রকাশ্যে দেহ ব্যবসা, গাজা সেবন ও উন্মুক্ত প্রস্রাব করা মেনে নিতে পারেন না সিলেটের নগরবাসী সহ দেশী বিদেশী পর্যটকরা। প্রশাসনের অন্ধত্বের ফলে দিন দিন এই অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে অর্শ গতিতে । যা সিলেটের পর্যটন শিল্পে বেপক ভাবে প্রভাব ফেলছে। বাড়িয়ে দিচ্ছে সিলেট মহানগর বাসী সহ পর্যটকদের স্বাস্থ্যের উপর ঝুকি। এই স্থান থেকেই দেহ ব্যবসায়ী নারী, নিন্ম শ্রেণীর পুরুষ ও উঠতি বয়সী যুবকদের অবৈধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ দৈহিক মিলনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরতে পারে মহামারী আকারে মরণ ব্যাধি এইচ.আই.ভি এইডস সহ অসংখ্য রোগবালাই। প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য গাঁজা সেবন, উন্মুক্ত প্রস্রাব যে, শুধু স্বাস্থ্যের উপর ঝুকি ফেলছে তা নয়। করছে আলো বায়ু ও পরিবেশ দূষণ। নষ্ট করছে শান্তিপ্রিয় সিলেটবাসীর সুখ শান্তি।