মন্তব্য কলাম : নিউইয়র্কে হিজাব পড়ে মডেলিং
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১০:১১ অপরাহ্ণ
সুহেল আহমেদ চৌধুরীঃ নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকে প্রথমবারের মতো হিজাব পড়ে মডেলরা অংশ নিয়েছেন।হিজাব পড়ে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম নারীরা যখন প্রতিবন্ধকতার শিকার তখন এই খবরটি নিঃসন্দেহে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিবিসি বাংলায় তাদের অনলাইন ভার্সনে খবরটি প্রকাশ করেছে।মুসলিম ডিজাইনার আনিসা হাসিবুয়ানের করা ডিজাইনে মডেলরা পোশাক পরে ক্যাটওয়াকে অংশ নেন বলে বিবিসি বাংলা উল্লেখ করে।
হিজাব শব্দটির ইংরেজি হল Headscarf or Veil ।আরবি সাহিত্যে যার অর্থ “ অন্তঃপট বা পর্দা”। বাঙ্গালি মুসলিম সমাজে যা নেকাব নামে পরিচিত। প্রচলিত অর্থে নেকাব যা মাথা এবং বুক আবৃত করে থাকে। সামগ্রীক অর্থে বয়ঃসন্ধিকালীন সময় থেকে মুসলিম নারীদের কর্তৃক পরিহিত পোশাক যা তাদের পরিবারের বাহিরের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের প্রত্যক্ষতা এড়াতে সাহায্য করে। এতে করে মুখ বা শরীর আবৃত করা যায় যা শালীনতাবোধের নিশ্চিত মানদণ্ড হিসাবে জ্ঞান করা হয়।
যে কারণে খবরটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তা হল এদেশে নারীর সামাজিক নিরাপত্তার ভয়াবহ অবস্থা। চলতি বছরের প্রথম কোয়ার্টারে বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুসারে ১৬৯জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এই হিসাব কেবল যে ঘটনাগুলো পত্রিকার পাতায় স্থান পেয়েছে । প্রকৃত চিত্র তার দ্বিগুণ বা আর বেশী হতে পারে ।
২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫-তে নারীর প্রতি সহিংসতা নির্যাতন বেড়েছে ২৩ শতাংশ। শুধু ধর্ষণ বেড়েছে ২১ শতাংশ। গত বছর প্রতিদিন গড়ে দুজনের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গণধর্ষণ বেড়েছে ১৪ শতাংশ। তবে ২০১৬ সালে এখন পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটেছে তাতে আগের পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যাবে বলে বিভিন্ন সংস্থা আশংকা করছে।
ব্র্যাকের নিজস্ব কর্মীদের মাধ্যমে ৫৫টি জেলায় সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা নারীর প্রতি সহিংস ঘটনার ৬৮ শতাংশই নথিভুক্ত হয় না।
ভয়াবহ নারী নির্যাতনের ঊর্ধ্বমুখী হারের নানামুখী কারণ রয়েছে। অন্যতম কারণ হতে পারে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা এবং নৈতিক সমাজব্যবস্থার বাহিবে আমাদের অবস্থান, সর্বোপরি উগ্র পোশাক পরিচ্ছদ।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে একটি কথা বিশ্বাস করি সেটা হল উপস্থাপন। একজন মানুষ যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবে তার জীবনাচারের উপর ভিত্তি করে তার বন্ধু বান্ধব জুটবে। যারা নিজেকে উগ্রভাবে পোষাকে উপস্থাপন করবে তার কাছের মানুষটি কখনও নম্র ভদ্র স্বভাবের হতে পারে না। উগ্র পোশাক ডেকে আনে সামাজিক লাঞ্ছনার নানা ঘটনা।
যে যাই পোশাক পড়ুক এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, আনত-নয়ন বিশিষ্ট হওয়াই নিষিদ্ধ দৃষ্টি থেকে আত্মার ও দৃষ্টির পবিত্রতা বিধানের প্রকৃষ্ট পদ্ধতি-কৌশল। স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালাই আমাদের এ শিক্ষা দিয়েছেন।
এজন্য মহা গ্রন্থ আল-কুরআনে বলা হয়েছে, “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন”। (সূরা আন নূর:৩০)