অভিভাবকহীন সিলেট সিটি করপোরেশন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ
চৌধুরী মুমতাজ আহমদ, সিলেট:
দরজার বাইরে দর্শনার্থী-আগন্তুকদের আনাগোনা নেই। ফাইল নিয়ে কেউ দরজা ঠেলে ভেতরেও ঢুকছেন না। কারণ ভেতরে কর্তার চেয়ার শূন্য। সিলেট সিটি করপোরেশনের (এসসিসি) শীর্ষ চেয়ারটি দেড় বছর ধরে শূন্যই পড়ে আছে। নাগরিক জীবনের দুঃখ-যাতনার কথা দায়িত্ব নিয়ে শোনার মতো কেউ না থাকায় দুর্ভোগে আছেন নগরবাসী। যাকে তারা ভোট দিয়ে এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি একটি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে জেলে আছেন, পদও হারিয়েছেন সাময়িকভাবে। নিজেদের বিভেদের কারণে পদটি পূরণ করার সুযোগ হারিয়েছেন মেয়র প্যানেলের সদস্যরাও। শূন্য এ পদে সরকারের তরফ থেকেও কাউকে বসানো হয়নি। সব মিলিয়ে সিলেটবাসীর দিন কাটছে অভিভাবকহীন অবস্থাতেই। দেখভালের মতো প্রকৃত অভিভাবক কেউ না থাকায় নাগরিক সেবা থেকে উন্নয়ন সবকিছুই চলছে মন্থর গতিতে। মেয়রের অবর্তমানে করপোরেশন সামলানোর কথা মেয়র প্যানেল সদস্যদের। আইন অনুযায়ী সিলেট সিটি করপোরেশনে ৩ সদস্যের মেয়র প্যানেল থাকলেও নিজেদের লড়াইয়ের কারণে তারা কেউই সুযোগ পাননি। লড়াইটা উস্কে দিয়েছিলেন এসসিসি’র বরখাস্ত হওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নিজেই। কারান্তরীণ হওয়ার আগে মেয়র প্যানেলের প্রথম সদস্য রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে ডিঙিয়ে দ্বিতীয় সদস্য অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়ে যান তিনি। এ নিয়ে সিটি করপোরেশনে ‘যুদ্ধ’ও হয় দুজনের মাঝে। মীমাংসার জন্য বিষয়টি গড়ায় উচ্চ আদালতে। দুজনেই দাবি করেন মেয়রের দায়িত্ব। এ বিরোধকে সামনে রেখে মেয়র প্যানেলের তৃতীয় সদস্য অ্যাডভোকেট রোকসানা বেগম শাহনাজও উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। তিনিও দাবি করেন মেয়রের চেয়ার।
মেয়র প্যানেলের দুই সদস্যের লড়াইয়ে কপাল খুলে এসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার। তিনিই এখন করপোরেশনের ‘সর্বেসর্বা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে দেড় বছর ধরে এসসিসি’র প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিবের হাতেই রয়েছে। ২০১৫ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সেই ক্ষমতার বলেই প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি নাগরিক সেবার দায়িত্বও তাকেই সামলাতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি, কেবল তাকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আইনের ৬২ ধারার ২ নং উপধারায় উল্লেখ রয়েছে ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা করপোরেশনের সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং প্রশাসন পরিচালনার জন্য দায়ী থাকিবেন।’ তবে মন্ত্রণালয়ের আদেশের বলে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তও গ্রহণ করছেন এসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। মেয়র বা প্রশাসক না হয়েও ‘কর্তা’র দায়িত্ব ঠিকই সামলাচ্ছেন তিনি। এমনকি প্রশাসকের চেয়ে বেশি সুযোগ পেয়েছেন তিনি। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ অনুসারে প্রশাসকেরও ১৮০ দিনের বেশি দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। অথচ প্রশাসক না হয়েও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এর তিন গুণেরও বেশি সময় ধরে করপোরেশন সামলাচ্ছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব।- মানবজমিন