লাকি শুধু পণ্য বিক্রি করেন না, তিনি স্বপ্ন ছড়িয়ে দেন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১:১৪ অপরাহ্ণ

ফারজানা মৃদুলা:
নারী উদ্যোক্তারা এখন আর শহরের বড় বড় নামেই সীমাবদ্ধ নন, প্রান্তিক অঞ্চল থেকেও উঠে আসছে এমন অনেক নারী, যারা নিজের শক্তিতে আলোকিত করছেন পরিবার, সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। এমনই একজন পরিশ্রমী ও অদম্য নারী লাকি বেগম, সিলেট সিটির ২নং ওয়ার্ডের এক অনুপ্রেরণাদায়ী মুখ। যিনি জীবনসংগ্রামের কঠিন বাস্তবতা পেরিয়ে হয়েছেন একজন আত্মনির্ভরশীল নারী।
বলছিলাম গল্পের নায়িকা দিলরুবা পারভীন লাকির কথা। চ্যালেঞ্জ এসেছে, বাঁধাও ছিল, কিন্তু কখনো থেমে যাননি। ধৈর্য আর অধ্যবসায়ই ছিল তাঁর শক্তি। একা হাতে ব্যবসা দাঁড় করানো, ক্রেতাদের আস্থা অর্জন, ও নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সম্মান পাওয়া সবই এসেছে তার আত্মবিশ্বাস আর নিষ্ঠার পুরস্কার।
আজ তিনি শুধু একজন উদ্যোক্তা নন, নতুনদের চোখে একজন গাইড, একজন পথপ্রদর্শকও। আলোকিত পথের এই যাত্রী আমাদের মনে করিয়ে দেন “বিশ্বাস, পরিশ্রম আর আল্লাহর উপর ভরসা থাকলে, কোনো পথই অসম্ভব নয়।”
একজন পরিশ্রমী ও নিবেদিতপ্রাণ এই নারী উদ্যোক্তা। সিলেটের বিভিন্ন মেলায় তিনি অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং নিজের পণ্যগুলো সবার সামনে তুলে ধরেন আন্তরিকতায় ও পেশাদারিত্বে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। তিনি মনে করেন, মেলায় অংশগ্রহণের মূল উদ্দেশ্য শুধু বিক্রিবাট্টা নয়, বরং প্রচারণা ও মানুষের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এই মনোভাবই তাঁকে একজন ভিন্নধর্মী ও ভবিষ্যতদর্শী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে
জীবনের শুরুটা সহজ ছিল না, একসময় তার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেবেন আলো। কিন্তু জীবন তাকে টেনে নিয়েছে অন্য পথে। মা ছিলেন তার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। মায়ের আদর্শ ও সাহস থেকেই আজকের লাকি। সংসার, সন্তান, সমাজের দায়িত্ব সব একা হাতে সামলে আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা এমআরএফ ক্লথিং স্টোর আজ তার স্বপ্নের ভুবন।
শুভ্রতার সাদা রঙ পছন্দ তার চরিত্রের মতোই। সাদামাটা জীবনযাপন পছন্দ করেন লাকি বেগম। প্রিয় ঋতু শীতকাল, যেখানে স্নিগ্ধতা ও ধৈর্যের মিল খুঁজে পান তিনি। পবিত্র হজ্ব করা তার মনের সুপ্ত বাসনা। জীবনসঙ্গীর প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা আর সন্তানের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়ই তাকে প্রতিনিয়ত সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।কঠোর কথা নয়, ভালোবাসা চান তিনি ।
ব্যক্তিত্বে দৃঢ়, আত্মমর্যাদায় অটল এই নারী সবচেয়ে কষ্ট পান যখন কেউ কঠিনভাবে কথা বলেন। কষ্ট পেলে আশ্রয় নেন সৃষ্টিকর্তার কাছে। জায়নামাজে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রার্থনা করেন, “হে আল্লাহ, তুমি আমাকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দাও। এই আস্থা আর প্রার্থনাই তাকে জীবনসংগ্রামে সাহস জুগিয়েছে বারবার।
নারীদের জন্য কিছু করতে চান বরাবরই উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে শুধু নিজের স্বাবলম্বিতা নয়, রয়েছে বৃহৎ চিন্তা। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে কাজ করতে চান। চান, যেসব নারী এখনও ভয় আর দ্বিধার বেড়াজালে বন্দি, তারা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখে। নিজের উপার্জন দিয়ে নারীদের পাশে দাঁড়াতে চান নিঃস্বার্থভাবে।
তার প্রতিষ্ঠানে ক্রেতারা সন্তুষ্ট, রিভিউ-প্রতিক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত উঠে আসে প্রশংসা। সেবা ও পণ্যের গুণমান তাকে একজন নির্ভরযোগ্য উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। ক্রেতারা যেমন তার কর্মনিষ্ঠায় সন্তুষ্ট, তেমনি তাকে একজন আন্তরিক ও মানবিক ব্যবসায়ী হিসেবেও বিবেচনা করেন।
লাকি মানেই সাহস, লাকি মানেই আলোর পথচলা শুধু ব্যবসা নয়, সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলাই লাকির লক্ষ্য। তার মতে, “নারী যদি চায়, তবে তার প্রতিভা কাজে লাগিয়ে ঘরে বসেই বিশাল কিছু গড়া সম্ভব।”
প্রান্তিক সিলেট থেকে উঠে আসা লাকি বেগম আজ এক অনুপ্রেরণা। জীবনের কঠিন বাস্তবতার মাঝেও তিনি হেরে যাননি। হার মানাননি বিশ্বাসকে। একজন নারী কীভাবে নিজের আত্মশক্তিতে আলো ছড়াতে পারে, লাকি বেগম তার উজ্জ্বল উদাহরণ।
তাকে নিয়ে আমাদের গর্ব। এরকম লাকিদের নিয়ে বহুদূর এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ।






