আল-আক্বসার বিজয় হবে রক্তপাতহীন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯:৪১ অপরাহ্ণ
আল আমিন:
আমরা যদি ১০০০ বা ১১০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু ধরি আর ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ মাঝামাঝি বা শেষ ধরি তাহলে এই ৩০০ বছরে মুসলমানদের ওপর সবচেয়ে বড় বড় তিনটি বিপদ গেছে। এক মাছজিদে আক্বছা হারিয়ে ফেলা। মাছজিদে আক্বছা কাদের হাতে হারিয়েছি ক্রসেডারদের হাতে। ক্রসেডাররা এসেছিল ইউরোপের দেশ ইতালি ফ্রান্স এবং স্পেইন থেকে।
দুই ইরাক্বের বাগদাদে আব্বাসীয় খিলাফাতের পতন হয়েছিল মঙ্গোলীয়দের হাতে যারা এসেছিল চায়নার পার্শ্ববর্তী দেশ মঙ্গলীয় থেকে। তারা এতই দুধূর্ষ ছিল পৃথিবীর কেউ তাদের পরাজিত করতে পারেনি। স্রোতের মত তারা এক শহর থেকে আরেক শহর বিজয় করতে করতে ইরাক্বে বাগদাদকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে তারপর তারা ক্ষান্ত হয়েছে। তাদের দুধুর্ষ তান্ডবে তৎকালীন আলেমরা ধরে নিয়েছিলেন এরা ইয়াযুজ-মা’জুজ। সূরা কাহাফে আল্লাহ ইয়াযুজ-মাজুজ সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করেছেন। তৎকালীন আলেমরা সন্দেহে পড়েছিলেন এরা ইয়াযুজ-মা’জুজ কারন কোথায় চায়না আর কোথায় ইরাক্ব। তান্ডব চালিয়ে একের পর এক মুসলিম এলাকা কিরগিজস্থান কাজাখাস্থান ছমরখন্দ বূখারা তিশাপুর ইরান ইরাক্ব তারপর ইন্ডিয়ার পাশের কিছু অংশ আফগানিস্থান পাকিস্থান বিজয় করতে করতে ইরাক্বে রাজধানীর আব্বাসীয় খিলাফার রাজধানী দখল করেছে। তারা এতটাই নৃসংশ পশুত্ব তাদের মধ্যে ছিল টানা চারদিন লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে জবাই করেছে এবং মুসলমানদের কাটা মাথা দিয়ে মিনার তৈরী করছে।
তৃতিয় হচ্ছে কর্ডোবা বা গ্রানাডার পতন। কর্ডোবা বা গ্রানাডা স্পেইনের পতন হয়েছে ১২৩৬ ঘ্রিস্টাব্দে বা একই সময়ে।
এই তিনটি বড় ঘটনার মত কোন ঘটনা একসাথে মুসলমানদের সাথে যায় নাই। এই মুহুর্তে মুসলমানরা যে বিপদ আপদ জুলুম নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে তার চেয়ে ভয়ংকর বিপদ আপদ জাতিগতভাবে মুসলমান জাতি তা অতিক্রম করেছে। মুসলমান জাতি তাদের এই ক্রান্তিকাল থেকে কি বের হতে পেরেছিল। হ্যা এখান থেকে মুসলমানরা বের হতে পেরেছিল আল্লাহতালা বের করার রাস্তা বের করে দিয়েছিলেন।
এক মাছজিদুল আক্বছা সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ূবীর মাধ্যমে বিজয় দান করেছিলেন।
সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী মাছজিদুল আক্বছা বিজয়ের জন্য কয়েকটি পয়েন্টে কাজ করেছিলেন। এই পয়েন্টগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গোটা মুসলিম এলাকা মুনাফিক্বে ভরে গিয়েছিল। সব আমীর উমারারা মোনাফিক্ব হয়ে গিয়েছিল। খ্রিস্টান ক্রসেডারদের নারী এবং টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। একই সময় সবচেয়ে বেশী শত্রুতামী করেছিল শিয়ারা। ঐ সময় শিয়াদের শাষন ছিল মিশরে। তৎকালীন ফাতেমীয় মিশরীয় শাষকরা প্রতিষ্টা করেছিল জামে আল আজহার। আজকের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় শিয়ারা প্রতিষ্টা করেছিল শিয়া মাজহাব প্রচার করার জন্য।
সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী (রাঃ) দুটি টার্গেট ছিল- মিশর এবং সিরিয়াকে এক করতে হবে। তখন তিনি ধরে নিয়েছিলেন মিশর এবং সিরিয়া এক না করা পর্যন্ত আমি মাছজিদ আল আক্বছা বিজয় করতে পারব না। এখানে উল্লেখ্য যে ইসলামের ইতিহাসের তৃতিয় খলিফা হযরতউমর ইবনূল খাত্তাব (রাঃ) যখন বায়তুল মোক্বাদ্দাস বিজয় করেন তখনও মুসলমানরা মিসর এবং সিরিয়া একত্রিত করেছিল। মিসর এবং সিরিয়ার বিজয় সম্পন্ন করে মাছজিদ আল আক্বছা বিজয় করেছিলেন। কেননা ভৌগলিকভাবে আজও মাছজিদ আল আক্বছা বিজয় করা কঠিন যদি মিসর ও সিরিয়া আপনার হাতে না থাকে। ফিলিস্তিন বিজয় করা কঠিন যদি মিসর ও সিরিয়া আপনার হাতে না থাকে। এর মধ্যে অনেক ভৌগলিক বিশ্লেষন রয়েছে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ভূমধ্যেসাগর। ফিলিস্তিন বিজয় করতে হলে প্রথমে আপনাকে ভূমধ্যেসাগরের পানির নিয়ন্ত্রন নিতে হবে আপনাকে। কারন ক্রসেডাররা পানি পথেই বেশী স্থল পথে যে আসে নাই এমন নয় তবে ভূমধ্যেসাগরের জলপথ দিয়ে এসেছে বেশী। ভূমধ্যেসাগরের তীর নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সিরিয়া এবং মিসরের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে তবেই ভূমধ্যেসাগরের পানি পথ সম্পূর্ণ আপনার নিয়ন্ত্রনে আসবে। ভূমধ্যেসাগরের তীর আপনার নিয়ন্ত্রনে মিসর এবং সিরিয়ার স্থলপথ আপনার নিয়ন্ত্রনে এবার মাছজিদুল আক্বছা আপনি বিজয় করতে পারবেন। এটাই ছিল সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী (রাঃ)র এক নাম্বার কৌশল। দুই সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী (রাঃ) আক্বীদ্বার যুদ্ধে লড়ে ছিলেন। তিনি শিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। যত বেশী মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী (রাঃ) মুসলিম শাষক ও মোনাফেক্বদের বিরুদ্ধে তত যুদ্ধ তিনি ক্রসেডারদের সাথেও করেন নি। এমনকি তত যুদ্ধ তিনি খ্রিস্টানদের সাথেও করেন নি। সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী (রাঃ)র বয়স প্রায় শেষ হয়ে গেছে শুধু মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে। মুসলিম আমীর উমারাদের মুনাফেক্বী দূর করতে করতে। তার প্রথম ও প্রধানত কারন ছিল শিয়া মাজহাব।
এই শিয়া মাজহাব থেকে মিসরকে মুক্ত করার জন্য আরেকটি মাদ্রাসার প্রতিষ্টা হল মাদ্রাসায়ে নিজামিয়া। নিজামুল মুল্ক এই মাদ্রাসা প্রতিষ্টা করছিলেন তার নামেই মাদ্রাসার নাম হল মাদ্রসায়ে নিজামিয়া। মাদ্রাসায়ে নিজামিয়াকে প্রতিষ্টা করা হয়েছিল জামে আল আজহারের মোক্বাবিলায় যার অর্থ হল শিয়া মাজহাবকে আরব বিশ্ব ধেকে উৎখাতের জন্য মাদ্রাসায়ে নিজামিয়ার প্রতিষ্টা হয়। এই মাদ্রাসায়ে নিজামিয়ার ছাত্রদের বড় ভূমিকা ছিল। পরবর্তীতে মঙ্গোলীয়দের পতন ঘটাতে, ক্রুসেডারদের পতন ঘটাতে এবং শিয়া মাজহাবকে আরব বিশ্ব থেকে বিতাড়িত করতে মাদ্রাসায়ে নিজামিয়ার ছাত্রদের বড় অবদান ছিল। ইতিহাসের বড় বড় আলেম ছিলেন এই মাদ্রাসার ছাত্র। এই মাদ্রাসার ছাত্র ইবনে আজাকের ত্বারেক্ব তেমাসক্বের লেখক, ইমাম গাজ্জালি (রঃ) এবং এই মাদ্রাসার পরবর্তী উত্তরসূরিরা ছিলেন ইবনে কাসির (রঃ), ইবনূল আযীর (রঃ), ইবনে তাঈমিয়া (রঃ) তাদের আগে ও পরে অনেক জগৎ দ্বিখ্যাত ব্যক্তিরা এই মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন।
সালাহউদ্দিন আইয়ূবী (র) মিসর বিজয়ের পর জামে আল আজহার থেকে শিয়া মাজহাবকে চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ কে দিলেন। আজ পর্যন্ত মিসরে বা আল আজহার বিশ্ব বিদ্যালয়ে শিয়া মাজহাব প্রশে করতে পারে নি। তারপর সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী জেরুজালেম জয়ের উদ্দেশ্যে যভন অভিযান শুরু করলেন তখন প্রথম সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হয়েছিল হিত্তিনের প্রান্তরে। আর ইউরোপের শীতকালীন দেশ থেকে যারা এসেছিল তাদের আরবের মরুভূমির গরম সহ্য করার ক্ষমতা ছিল। অপরদিকে মুসলমানদের ইউরোপের ঠান্ডার দেশের ঠান্ড সহ্য করার ক্ষমতা ছিলনা। মুসলমানরা স্পেন পর্যন্ত গিয়ে শেষ। স্পেনের সাথে লাগানো ফ্রান্স, ইতালি পর্তুগাল মুসলমানরা বিজয় করতে পারে নি। তার সবচেয়ে বড় কারন ছিল বরফ এবং শীত এবং এর সাথে নৈতিক এবং চারিত্রিক অধঃপতন আছেই। মুসলমানরা আজীবনব ইস্তানবুল বিজয় করতে পারে নি কন্সটেন্টিনিপল এখনকার কথা বলছি।
সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী (রঃ) হিত্তিনের প্রান্তরে যুদ্ধ করছেন তাদের সাথে যারা কঠিন শীতের দেশ থেকে এসেছে। এজন্য সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী (রঃ) যুদ্ধে পরাজয়ের ভান করে তাদেরকে নিয়ে গেলেন মরুভূমির দিকে। যেখানে পানির কোন ব্যবস্থা নেই ৫০-১০০ মাইলের ভেতরে। পাশাপাশি চারিদিকে আগুন জ্বালিয়ে ব্যবস্থা করলেন অতিরিক্ত তাপের। যুদ্ধের সময় ছিল জুন-জুলাই মৌসুম। উপরে ছিল সূর্যের তাপ নিচে মরুভুমির বালুর গরমের তাপ এবং চারিদিকে আগুনের তাপ। এমন তাপ সহ্য করার ক্ষমতা জন্মগতভাবে আরবদের রয়েছে। আর ক্রসেডাররা যেহেতু শীত প্রধান দেশ থেকে এসেছিল তাই অতিরিক্ত গরমে গায়ের লোহার বর্ম খুলে ফেলতে বাধ্য হয়েছিল এবং যুদ্ধে তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত হয়ে যায়।
তবে মজার বিষয় হল হযরত ওমর (রাঃ) মাছজিদে আক্বছা বিজয়ের সময় এক ফোটা রক্ত পড়েনি, সালাহউদ্দিন আইয়ূবী (র) মাছজিদে আক্বছা বিজয় করেছেন এক ফোটা রক্ত পড়েনি এবং আমি বিশ্বাস করি আগামীতে যখন মাছজিদে আক্বছার বিজয় হবে তখনও এক ফোটা রক্ত পড়বে না। আল্লাহ তা’লা সেই ব্যবস্থা করে দিবেন- ইন-শা-আল্লাহ।
একটি গেল সালাহউদ্দিন আইয়ূবী (র) এর মাধ্যমে মাছজিদে আক্বছার বিজয়, আরেকটি হল আইনি জালূতের যুদ্ধ মঙ্গোলীয়রা বাগদাদের পতন ঘটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তিন তিনটি মাছজিদ একত্রে তাদের দখলে চলে আসবে। জেরুজালেম দখলে আসবে, মক্কা এবং মদিনা দখলে আসবে। এই মাছজিদকে বাচানোর জন্য ওই সময় কোন শক্তিশালী স্বার্থ ছিলনা। মিসরের মামলূকরা ছাড়া সালাহউদ্দিন আইয়ূবী (র) এর পরপরই ৫০-১০০ বছরের মধ্যে মঙ্গালীয়দের এই ঘটনা ঘটে। তখন মামলূকদের বাদশা ছিল সাইফুদ্দিন ক্বদস্। তাদের সাথে যুদ্ধে সর্বপ্রথম মঙ্গলীয়রা পরাজয় বরন করে।
তাহলে একদিকে জেরুজালেম উদ্ধার হল, মঙ্গলীয়দের পরাজয় হল। পরবর্তীতে মঙ্গলীয়রা নিজেরা ইসলাম গ্রহন করা শুরু করল। এজন্য আজকের প্রথিবীতে পাকিস্থান ইন্ডিয়ায় যত খান বংশ দেখা যায় তারা সবাই মঙ্গলীয়দের বংশধর। মঙ্গলীয়রা পরবর্তীতে সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিল তার প্রথম ও প্রধান কারন ছিল- মঙ্গলীয়রা ছিল অশিক্ষিত, অসভ্য ও মূর্খ। আর তারা মুসলমানদের যে সব নারী পুরুষদের ধরে নিয়ে যেত তারা সবা্ই ছিল শিক্ষিত ও উচ্চ বংশের। তাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মের অনুগত হয়েছিল। এবার অবশিষ্ট ক্রসেডাররা ইউরোপে ফিরে গেল কিন্তু আজ অবধি তারা ক্রসেড চালাচ্ছে।
– চলবে –