সুনামগঞ্জে সরকারিভাবে শুরু হয়নি ধান ক্রয়, ক্ষতির আশঙ্কা চাষিদের
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ এপ্রিল ২০২০, ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সুনামগঞ্জে এখনো সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে নির্দেশনা মোতাবেক ধান কেনা শুরু হয়নি। এ নিয়ে হাওড়ের জেলা সুনামগঞ্জের কৃষকদের মাঝে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে কৃষকরা ধান দিতে পারবেন কী-না এই দুশ্চিন্তা তাদের যেন পিছু ছাড়ছে না।
কৃষক সংগঠকরা জানিয়েছেন, গত রোববার থেকে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লাসহ ১১ উপজেলায় ধান ক্রয় শুরু হবার কথা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি এবং ফড়িয়া-টাউট ও মিল মালিকদের কম দামে ধান কেনার সুযোগ দিতেই তালিকা করতে বিলম্ব করে ধান ক্রয়ের দিন-তারিখ পেছানো হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা থেকে সরকার এবার ২৫ হাজার ৮৬৬ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করবেন বলে জানা গেছে। প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ৪০ টাকা করে নির্ধারণ হয়েছে।
চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর বোরো জমিতে বোরো ধানের চাষি করেছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে কৃষকের ঘরে ধান উঠতে শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগের দাবি এ বছর ১২ লাখের টনেরও বেশি ধানের উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলার বিভিন্ন হাওড়ে এখন পর্যন্ত ৫০ ভাগের বেশি ধান কাটা শেষ হয়েছে। কিন্তু এমন ভালো খবরের পরও কৃষকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। রোববার-সোমবার জেলার কোথাও প্রতি মণ ধানের মূল্য ৫শ’ থেকে সাড়ে পাঁচশ’ টাকার বেশি ছিল না। এমন কম দামেও অনেকে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
জামালগঞ্জে কৃষক ফারুখ মিয়া বলেন, এক মণ ধানের উৎপাদন খরচ ৬শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা। কিন্তু কৃষকরা প্রতি মণ ধান বিক্রি করছেন ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকায়। ধান কাটার ব্যাপারী খরচ দেওয়া, মহাজনের ঋণ শোধ করা এবং প্রতিদিন খরচের জন্য ধানের খলা থেকেই কৃষকরা কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষকদের এই অসহায়ত্বের সুযোগ প্রতিবছরের মতো এবারও নিচ্ছে ফড়িয়া, টাউটরা।
একই কথা জানিয়েছেন উপজেলার গজারিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষক আমির হোসেন প্রবাল।
তাহিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জেলা বিএনপি সহসভাপতি বলেন, সরকারিভাবে ধান ক্রয় শুরু না হলে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে। সরকার দ্রুত ধান কেনার উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন উপজেলায় এখনো ধান ক্রয় কমিটি ধান কেনা শুরু করতে পারেনি। এই সুযোগে ফড়িয়ারা কম দামে ধান কেনার সুয়োগ পাচ্ছে।
কৃষক তুতা মিয়া বলেন, এক একর জমির ধান কাটতে ৭-৮ হাজার টাকা লাগে। এই টাকাও কৃষকরা মহাজনদের কাছ থেকে ২ মণ ধান দেবার শর্তে ১ হাজার টাকা অনেন। অনেক কৃষক সুদেও অর্থ আনেন। সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান ক্রয় বিলম্বিত হলে কৃষকরা কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। এতে কৃষকের লাভ তো দুরের কথা লোকশানই হবে বেশি।
জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা থেকে ২ হাজার ৭৭৫ টন, জগন্নাথপুরে ২ হাজার ৬০৮ টন, সদরে ১ হাজার ৯৯০ টন, বিশ্বম্ভরপুরে ১ হাজার ২৯৪ টন, ছাতকে ১ হাজার ৮০২ টন, দোয়ারাবাজারে ১ হাজার ৫৭৪ টন ধান কিনবে সরকার। জামালগঞ্জে ২ হাজার ৮২৮ টন, ধর্মপাশা ৩ হাজার ৮৩৩ টন, তাহিরপুরে ২ হাজার ৭৭ টন, দিরাই ৩ হাজার ৬৮২ টন, শাল্লায় ১ হাজার ৪০৩ টন ধান ক্রয করা হবে।
জেলা ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ২৬ এপ্রিল থেকে ধান ক্রয়ের নির্দেশনা ছিল। কৃষকরা হাওড়ের ধান কাটায় ব্যস্ত এ কারণে কৃষকদের সুবিধার্থে ধান ক্রয় কিছু দিন পেছানো হয়েছে। তবে ৩০ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি ও যাচাই-বাছাই করে লটারির মাধ্যমে কৃষক বাছাই করে সরাসরি তাদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। এতে কোনো অনিয়মের প্রমাণ পেলে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। চলতি বছর একজন কৃষক ৩ টন ধান দিতে পারবেন বলেও জানান তিনি।