তাহিরপুরে হাওরে ব্যস্ত শিশু শিক্ষার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ এপ্রিল ২০২০, ৭:২৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মহামারি করোনায় স্কুলসহ সব সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। আর এ বৈশাখে হাওর জুড়েই পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে হঠাৎ হঠাৎ হানা দিচ্ছে কাল বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি। এতে ফসল হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন হাওরবাসী।
হাওরের কৃষকদের এমন শঙ্কিত অবস্থায় বসে নেই তাদের শিশু সন্তানরা। বাবা-মা ও ভাইকে শ্রম দিয়ে ফসল তোলার কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষক পরিবারের সন্তান তাই ঘর ছেড়ে চলে এসেছে খলায়। বাবা, মা আর ভাইয়ের কষ্টের ফলানো বোরো ধান শুকানোর কাজে সহযোগিতা করতে। কখনো নিজের মতো করে আবার কখনো মা, ভাইয়ের চাহিদা অনুযায়ী জিনিস এনে দিচ্ছে ছয় বছরের শিশু মিনহা বেগম।
এমন দৃশ্য দেখা যায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউপির তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন মমিসিংঙ্গা হাটির সামনের শনির হাওর পাড়ে ধান শুকানোর খলায়।
এক পাশে শনির হাওরের মধ্যে থেকে শ্রমিকরা ধান কেটে আনছে ঠেলাগাড়ি দিয়ে। এনে ফেলছে পাশের খলায়। এরপর কেউ মাড়াই করছে, কেউ বা আবার ধান রোদে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। আর এসব কাজে কোমল হাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে খলায় আরো অনেক শিশুরা।
শিশু মিনহা জানায়, তাদের বাড়ি উপজেলা সদর ইউপির মধ্য তাহিরপুর গ্রামের মমিসিংগা হাটি আর লেখা পড়া করছে মধ্য তাহিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে। পরিবারে তিন ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে ছোট সে। সে জানায়, স্কুল বন্ধ, ঘরে কাজ নেই তাই মা, বাবা আর ভাইদেরকে ধান শুকানোর কাজে সহযোগিতা করার জন্য এসেছে।
একইচিত্র দেখা গেছে ভাটি তাহিরপুর গ্রামের পাশের খলায়। সেখানে কাজ করছে হুসাইন মিয়া(৬), এলিনা বেগম(৭)।
তারাও স্কুলে লেখাপড়া করছে। তাদের বাবা শনির হাওরে এবার বোরো ধানের চাষ করে ফলন ভালো পেয়েছেন। করোনার কারণে এখন শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি রয়েছে কাল বৈশাখী ঝড়, বজ্রপাত, বৃষ্টি আর ভারতীয় মেঘালয়ে পাহাড়ি ঢলে ফসল ডুবির আশঙ্কা।
হাওর পাড়ের কৃষক আমিন মিয়া বলেন, আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। বছরের এই সময়টাই আমরা সবাই মিলে বোরো ধান কেটে আনন্দ করি পরিবারের সবাইকে নিয়ে। আর এ কাজে স্কুল পড়ুয়া শিশুরাও আসে আনন্দের সঙ্গে কাজে সহযোগিতা করতে তারাও এ কাজে আনন্দ পায়। আর আমরাও খাবার পানি আনা, বা ছাতা, ঝাড়ু এমন ছোটখাট কাজে তাদের সহযোগিতা নেই। করোনাভাইরাসের কারণে বড় আতঙ্কের মাঝে আছি।
তাহিরপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, হাওরাঞ্চলে কৃষক ও তাদের পরিবারের সন্তানরা খুবই পরিশ্রমী। স্কুল বন্ধ তাই এ সময়টায় তারা তাদের মা বাবার সঙ্গে ধান কাটা মাড়াই করার জন্য খলায় গিয়ে কাজে সহযোগিতা করে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সংকট কালীন সময়ে হাওরের ধান কাটার শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে শনি ও মাটিয়ান হাওরসহ ছোট বড় মোট ২৩টি হাওরের কৃষকদের ধান কাটতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংঘঠনসহ উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও।