মৌলভীবাজারে আক্রান্ত এলাকার ৬ শতাধিক লোকের প্রবেশ : ভয়াবহ সংক্রমণের আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০২০, ২:৫২ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার:
করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মৌলভীবাজার জেলায় লকডাউন ঘোষণার পরও জেলার গ্রামগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ে দিনদিনই আশংকা রাড়ছে। এখনও গ্রামের মানুষ লকডাউন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। মানছেন না সামাজিক দূরত্ব রক্ষার স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা। বিশেষ করে যুবকেরা চোর পুলিশ খেলায় মেতে ওঠেছেন। তাদের এসব কাজ সমাজকে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা তারা অনুধাবন করতেই পারছেননা।
সকাল থেকে রাত অবধি চা ও পান সিগারেটের দোকান, সবজির দোকানে বসে সামাজিক দুরত্ব না মেনে যে যার মতো করেই আড্ডা দিয়েই চলেছেন। অধিকাংশ লোকজন মনে করছে সৃষ্টিকর্তার উপর তাদের বিশ্বাস রয়েছে এবং সে বিশ্বাসে করোনা রোগ থেকে তারা রেহাই পাচ্ছেন এবং পাবেন। বিশেষ করে উপজেলা শহরগুলোতে সেনাবাহিনী দিনে রুটিন ডিউটি করে চলে যাবার পর পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পরে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যখন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসহায় লোকজনের মাঝে ত্রাণ বিতরণসহ জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করতে ইতিমধ্যে হটলাইন চালু করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে মৌলভীবাজার জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে বাজারগুলোকে সরিয়ে খোলা মাঠে নিয়ে ক্রেতাদের সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শহরের বিভিন্নস্থানে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বাইরের জেলা থেকে লোকজন জেলায় প্রবেশে অনেক কড়াকড়ি করা হচ্ছে।
জেলায় একমাত্র রাজনগর উপজেলার আকুয়া গ্রামের সাঞ্চু মিয়া করোনায় মৃত্যু ছাড়া এপর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলায় এখনও করোনা আক্রান্ত লোকজন নেই বললেই চলে। তবে বহিরাগত অনেকেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা: তউহীদ আহমদ জানান, সারা জেলায় এপর্যন্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন আক্রান্ত এলাকা থেকে ৬ শতাধিক মানুষ জেলায় প্রবেশ করেছে। এসব লোকজনদের মধ্যে যাদেরকে শনাক্ত করা হয়েছে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে আশংকার কথা হচ্ছে যাদেরকে এখন শনাক্ত করা যায়নি তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছেন আর এদের কাছ থেকে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনে ভাইরাস ছড়ানোর আশংকা রয়েছে। সিভিল সার্জন জানান, এপর্যন্ত সারা জেলায় ১৩শ’ ৭৬জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। জেলার ৭টি উপজেলায় সরকারি আইসোলেশনের জন্য ১৩৩টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এ ভাইরাস যাতে সামাজিক ট্রান্সমিশনে না ছড়াতে পারে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।
মৌলভীবাজারের ছাত্রলীগের কর্মীরা হটলাইনের মাধ্যমে ঠিকানা সংগ্রহ করে অনেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসন বয়ষ্ক ভাতা যাতে লোকজন পায় সেবিষয়েও কাজ করে যাচ্ছেন।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার) জানান, ইতিমধ্যে শহরে থার্মাল স্ক্যানার চালু করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে লোকজনের শরীরের তাপমাত্রা মাপছেন পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া জেলার ৫টি প্রবেশ মুখে পুলিশ চেক পয়েন্ট বসানো হয়েছে। যাতে কেউ জেলার বাইরে থেকে প্রবেশ করতে না পারে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন জানান, এপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাওয়া খাদ্য সহায়তার ৭শ’ মেট্টিক টন চাল ও নগদ ৩৬ লাখ টাকা জেলার ৭টি উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া এখনও ত্রাণ সহায়তার ৬৭৫ মেট্টিক টন চাল ও নগদ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে। তিনি জানান, এসব সহায়তা দিনমজুর, পরিবহণ শ্রমিক, ভ্যান চালক, রিক্সা চালক, হিজড়া, ভবঘুরেসহ দরিদ্র লোকজনের মাধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।