কমলগঞ্জে করোনাভাইরাসে দুর্ভোগে দেড় সহস্রাধিক তাঁতী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ এপ্রিল ২০২০, ৭:৫২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
২৪ মার্চ থেকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারা দেশের মতো বন্ধ রয়েছে তাঁতবস্ত্র বুনন কেন্দ্র। তবে তাঁতীরা নিজ বাড়িতে তাঁতবস্ত্র বুনন চললেও বাজারে সরবরাহ করতে না পেরে নানা সমস্যায় পড়ে দুর্ভোগে দেড় সহস্রাধিক তাঁতী।
আদমপুর মণিপুরি কমপ্লেক্সে গেলে সেখানকার মণিপুরি তাঁতবস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান প্রশিক্ষক সৌদামনি সিনহা বলেন, এখানে নিচতলায় ৭টি তাঁত ফ্রেম রয়েছে। এখানে বেশ উন্নত মানের তাঁতের শাড়ি, ওড়না ও ইনাফি তৈরি হয়। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে তাঁতের ৫টি ফ্রেম। দ্বিতীয় তলার ফ্রেম তাঁতে সিল্কের ও ভারতীয় সুতা দিয়ে উন্নতমানের ওড়না ও ইনাফি তৈরি হয়। এ কমপ্লেক্সে ১৬ জন তাঁতী কাজ করেন। করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি নির্দেশনায় ২৪ মার্চ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক এই তাঁত কারখানা বন্ধ রয়েছে। মৈতৈ, বিষ্ণুপ্রিয়া ও পাঙাল (মণিপুরি মুসলিম) এই তিন সম্প্রদায়ের কমপক্ষে এক হাজার তাঁতী নিজ নিজ বাড়িতে কোমর ও ফ্রেম তাঁতে কাজ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক কারখানায় কাজ বন্ধ থাকলেও তারা বাড়ির তাঁতে কাজ করছেন। বাজার বন্ধ থাকায় চাহিদা মতো সুতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাদের তৈরি তাঁতবস্ত্র বাজারজাতও করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে তারা মহাজনের কাছে আটকা রয়েছেন।
সৌদামনি সিনহা আরো বলেন, যে শাড়ির দাম আগে ১৪০০ টাকা ছিল এখন তা মহাজনের কাছে ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। তাও আবার সময়মতো টাকা পাচ্ছেন না তারা।
আদমপুরের তেতইগাঁও গ্রামে গেলে দেখা যায়, অনেকেই নিজ ঘরে তাঁত বুনছেন। তবে সুতার অভার রয়েছে। আলাপকালে মণিপুরি তাঁতী জয়ন্তি দেবী জানান, বাজার বন্ধ। তাই বাজার দরের চেয়ে অনেক কম দামে তাঁতবস্ত্র বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজার খোলা থাকলে তৈরি বস্ত্র হাতে রেখে যাচাই করে বিক্রি করা যেত। এ জন্য এখন মণিপুরি তাঁতীরা দুর্ভোগের শিকার বলে তারা জানান।
একইভাবে আদমপুর ইউপির জালালপুর গ্রামের বেশ কয়েক বছর ধরে তারাও মনিপুরি তাঁতবস্ত্র তৈরি কাজ করেন। সেখানে কমপক্ষে ৫০০ বাঙালি তাঁতী রয়েছেন। তারা বর্তমান সময়ে বাড়িতে তাঁতবস্ত্র বুনন করলেও বাজারজাত করতে না পারায় মহাজনের দয়ার উপর নির্ভরশীল। সুতার দাম তেমন না বাড়লেও তৈরি বস্ত্র বাজারে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে মহাজনের দেওয়া দামে বস্ত্র বিক্রি করতে হচ্ছে।
আদমপুরের সূতা ব্যবসায়ী ও তাঁতবস্ত্র ক্রয়কারী মহাজন মজর আলী বলেন, সুতার দাম বাড়েনি। তবে বাজার বন্ধ থাকায় তাঁতীরা তৈরি বস্ত্র বিক্রি করতে পারছেন না। তিনিও তৈরি বস্ত্র সামান্য মূল্য হাতে রেখে ক্রয় করছেন।
কমলগঞ্জ ক্ষুদ্র্রশিল্প উদ্যোক্তা সমিতির উপদেষ্টা আহমদ সিরাজ বলেন, বর্তমানের করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সবকিছু বন্ধ থাকার বড় প্রভাব পড়েছে মণিপুরী ও বাঙালি তাঁতীদের উপর। এই ক্রান্তিকাল পার হওয়ার পর বাঙালি ও মনিপুরি তাঁতীদের মাঝে বিশেষ ক্ষুদ্রঋণ প্রদান না করলে তাদের এই শিল্পকে ঠেকানো যাবে না।