জুড়ীতে অনন্য এক স্বেচ্ছাসেবক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ এপ্রিল ২০২০, ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন ফুলতলা। করোনা পরিস্থিতির কারণে এই ইউনিয়নের প্রবেশমুখে স্থানীয়দের উদ্যোগে গেইট বসানো হয়েছে।
গেইট দিয়ে কোন যানবাহন প্রবেশকালে দাঁড়ান এসে একটি লোক। গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে করেন, তারপর প্রবেশ করতে দেন।
এভাবে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তায়ই থাকছেন তিনি। এই পথে চলাচলকারী প্রতিটি গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটাচ্ছেন। এখানে তিনি এখন পরিচিত মুখ।
নাম মনা মিয়া।দিনমজুর, একজন খেটে-খাওয়া মানুষ। করোনা পরিস্থিতিতে তার আয় রোজগার সব এখন বন্ধ। তারপরও খেয়ে না খেয়ে কোনো ধরনের পারিশ্রমিক ছাড়া এই সংকট মুহূর্তে সেবা করেই যাচ্ছেন। সকাল ৮ টা থেকে রাত ১ টা। টানা ১৭ ঘন্টা রাস্তায়ই দেখা যাচ্ছে তাকে।
গত ১৩ এপ্রিল থেকে সিলেট বিভাগের অন্যান্য জেলার মতো মৌলভীবাজার জেলাও লকডাউনে। এ সময় সবাই ভীত থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অনন্য স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে চলেছেন এই মনা মিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনা মিয়া স্থানীয় বাসিন্দা। ফুলতলা ইউনিয়নেই তার বাড়ি। মনা মিয়ার এই স্বেচ্ছাসেবা দেখে মুগ্ধ অনেকেই। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে অভিনন্দনও জানাচ্ছেন। পাশাপাশি সরকার ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের কাছে অনুরোধ করছেন তাকে যেন সহযোগিতা করা হয়।
ফুলতলা ইউনিয়নের বাসিন্দা রহমান বলেন, ‘মনারাই এই দেশের সুনাগরিক। দেশের প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক। কিন্তু দেশের সুসময়ে অধিকার পেতে ব্যর্থ তবুও দেশের দুঃসময়ে তারাই অগ্রসারিতে।’
পার্শ্ববর্তী এলাকার আহসান তামিম বলেন, ‘পেশায় তিনি একজন দিনমজুর মানুষ। এই মানুষটি নিঃস্বার্থভাবে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে তা সত্যিই অতুলনীয়। সকলের কাছে শুধু একটিই চাওয়া বিপদের সময় মনাদের মত যে সমস্ত মানুষেরা আমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে পরবর্তী সময়ে আমরা যেন তাদের ভুলে না যাই।’
মনা মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতাম। রেস্টুরেন্টে বন্ধ হওয়ায় এখনতো আর কোনো কাম কাজ নাই। পুরোদিনই বাড়িতে বেকার বসে থাকতে হয়। তাই এই কাজটি মানবসেবা হিসেবে বেছে নিলাম। আমি প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত বারোটা-একটা পর্যন্ত এখানে থাকি।’
তিনি বলেন, ‘ফুলতলা ইউনিয়ন থেকে আমাকে এই জীবাণুনাশক স্প্রে গুলো দেওয়া হয়েছে। রাস্তা দিয়ে যেসকল গাড়ি যায় সকল গাড়ির পুরো বডিতে বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই জীবাণুনাশক স্প্রে করি। তারপর পাহারা দেই বহিরাগত কেউ যাতে না ঢুকে। আমি অনেক বহিরাগতকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।’
কীভাবে চলছেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন থেকে ৩ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ডাল ২ কজি আর ১ টি সাবান পেয়েছি। তা দিয়েতো দুই একদিন চলা যাবে। কিন্তু পরে কি করবো, সেটাই চিন্তার।’
ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইমতিয়াজ গফুর মারুফ বলেন, ‘মনা মিয়ার বিষয়ে আমি অবগত আছি। কারণ সে ইউনিয়নের জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটাইতেছে, এলাকার লকডাউন গেইট পাহারা দিচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিষদের ত্রাণ তো সীমিত। সে কারণে সেভাবে সহযোগিতা করা যাচ্ছে না। তারপরও যে সময়ই ত্রাণ আসে তাকে আমরা ত্রাণ দিচ্ছি।’
ফুলতলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. মাসুক আহমদ বলেন, ‘ইউনিয়নে জন্য সে ভালো একটি কাজ করে যাচ্ছে। সত্যিই প্রশংসনীয়। আবারও দ্রুত আমি ত্রাণের ব্যবস্থা করছি তার জন্য।’