লন্ডনের জঙ্গলে জুড়ীর শাহনুরের লাশ: ৩০ সদস্যের দলকে খুঁজছে পুলিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মার্চ ২০২০, ১:০৩ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
পূর্ব লন্ডনের বেকটন গ্যালিয়ন্স রিচ ডিএলআর স্টেশনের নিকটবর্তী জঙ্গল থেকে শাহনুর আহমদ (১৬) নামে এক বৃটিশ-বাংলাদেশী কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শাহনুর আহমদ নিউহ্যামের নিউভিক সিক্সথ ফর্ম কলেজের ছাত্র। তার পিতা শরীফ আহমদ একজন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। তার পরিবার পূর্ব লন্ডনের মেনরপার্কে বসবাস করেন। দেশের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী গ্রামে। তার দাদা গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফিক উদ্দিন আহমদ সিলেটের শহরের হাউজিং এস্টেটের স্থায়ী বাসিন্দা। শাহনুর আহমদ দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। ছোট ভাইয়ের নাম শারফরাজ আহমদ।
নিহত কিশোর শাহনুর আহমদের চাচা যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহেদ আহমদ তালুকদার তাঁর ভাতিজা নিখোঁজ হওয়া ও লাশ উদ্ধারের মর্মান্তিক ঘটনা বর্ণনা করেছেন। বুধবার রাতে টেলিফোনে তিনি জানান, গত ২ মার্চ সোমবার বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে মাকে নিয়ে স্থানীয় জিপিতে যায় শাহনুর আহমদ। জিপি থেকে ঘরে ফেরার পর পরই তার মোবাইলে একটি কল আসে। এ সময় সে তার মাকে বলে তার এক বন্ধু হাসপাতালে আছে তাকে দেখতে যাবে। এই বলেই সে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর বিকেল ৬টা পর্যন্ত তার সাথে টেলিফোনে পরিবারের যোগাযোগ ছিলো। কিন্তু সোয়া ৬টার দিকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন পরিবারের লোকজন মনে করেন হয়তো মোবাইলের চার্জ চলে গেছে। তাই তারা আরো কয়েক ঘণ্টা যোগাযোগের অপেক্ষায় থাকেন। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর শাহনুর ঘরে না ফিরে আসায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং পুলিশে নিখোঁজ হওয়ার খবর জানান। গভীর রাত পর্যন্ত শাহনুরের বন্ধু-বান্ধবদেরকে ফোন করে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন, সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে তল্লাশী চালান কিন্তু কোনো সন্ধান পাননা।
পর দিন ৩ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে পুলিশ তাদেরকে ফোন করে জানায়, গ্যালিয়ন্স রিচ স্টেশনের পাশের জঙ্গল থেকে তারা একটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের লোকজন সেখানে পৌঁছেন। পুলিশ তাদের কাছ থেকে শাহনুর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চায়। জানতে চায়, নিখোঁজ হওয়ার সময় তার পরনে কী পোষাক ছিলো। সাথে কী ছিলো? সে দেখতে কেমন। এর ১ ঘণ্টা পরে পুলিশ তাদের ম্যানরপার্কের বাসায় যায় এবং উদ্ধারকৃত কিশোরের পকেটে একটি ওয়েস্টার পাওয়া গেছে বলে জানায়। যে ওয়েস্টার কার্ডটি ছিলো শাহনুর আহমদের।
এরপর পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে যান এবং সেখানে টিস্যুপেপার এবং রক্তাক্ত ঘাস দেখতে পেয়ে পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামতগুলো নিয়ে যায়। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার লাশ দেখতে দেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। বর্তমানে লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। পুলিশের দুটি ইউনিট এই ঘটনা তদন্ত করছে।
জাহেদ আহমদ আরো জানান তাঁরা একটি সুত্রে জানতে পেরেছেন, তাঁর ভাতিজা শাহনুর আহমদ ওইদিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে সেখানে বেড়াতে যায়। ওই সময় একদল যুবক তাদেরকে ধাওয়া করে। এসময় তারা দৌঁড়ে পালিয়ে আসে। কিছুদূর আসার পর দেখতে পায় শাহনুর তাদের সাথে নেই। এরপর তারা আবার শাহনুরের খোঁজে ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু পথিমধ্যে একটি গাড়ি থেকে বেরিয়ে আরো কয়েকজন যুবক তাদের ধাওয়া করে। তাই তারা ঘটনাস্থলের দিকে না গিয়ে ভয়ে ফিরে আসে।
জাহেদ আহমদ জানান, তারা ভাতিজা খুবই শান্তশিষ্ট নম্র ও ভদ্র স্বভাবের ছিলো। কোনো দিন কারো সাথে ঝগড়া বিবাদে জড়ায়নি। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধূলা করতো। ফুটবল খেলতো। তারা বাবার সাথে বেডমিন্টন খেলতো। বাবার সাথে মসজিদে নামাজে যেতো। তিনি বলেন, আমি আমার বড় ভাইর (শরীফ আহমদ) ঘরে ৪ বছর ছিলাম। আমি ও আমার ভাতিজা একই রুমে থাকতাম। আমি তাকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। কোনোদিন তার মুখে সিগারেটেরও গন্ধ পাইনি। তিনি বলেন, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। তার ভাতিজা গ্যাং হামলার শিকার হয়েছে। শাহনুরের লাশ উদ্ধারের খবর নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তারা মা-বাবা পুত্র শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন। তিনি কমিউনিটির মানুষের দোয়া চান এবং এই হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত বিচার দাবী করেন।
এদিকে বুধবার বৃটিশ দৈনিক দ্যা সান এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলের পাশে আগের দিন সোমবার সন্ধ্যায় বেইসবল বেটসসহ ৩০ জনের একটি যুবকদলকে সেখানে দেখা গেছে। পুলিশ তাদেরকে খুঁজছে। ওইদিন সেখানে কেউ যুবকদলকে দেখে থাকলে পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। পুলিশ এই ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বিবেচনায় তদন্ত শুরু করেছে। দ্যা সান এর রিপোর্টে আরো বলা হয়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা দিকে ডিএলআর স্টেশনের একজন ক্লিনার একটি কিশোরকে পাশের জঙ্গলে ঘাসের মধ্যে মুখ নিচের দিকে দিয়ে চিত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তার পরনে ছিলো কালো পোষাক। সঙ্গে ছিলো একটি র্যাকসাক ব্যাগ। ক্লিনার তাকে হাতদিয়ে নাড়াচাড়া করে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ৯৯৯ এ কল করেন।
মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এই হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কমিউনিটিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়ে। শাহনুর আহমদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।