অতিবর্ষণে মৌলভীবাজারে ৯৩টি চা বাগানে উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ আগস্ট ২০১৭, ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
গত কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতে মৌলভীবাজারের ৯৩টি চা বাগানে চা উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বাগান মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি ৭৫ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা বছরের মাত্রা ছাড়িয়েছে। গত বছরে এ সময় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৪১ ইঞ্চি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের অতিমাত্রার বৃষ্টি চা বাগানে নতুন পাতা গজানো ৬০ শতাংশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
বাগান মালিকরা জানান, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে চা গাছের সারিগুলো থেকে মাটি সরে গেছে।বৃষ্টির পানিতে সার ধুয়ে গেছে। মশাসহ পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে। এতে করে চা-গাছের কুঁড়ির বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চায়ের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ পরিমাণ কম হতে পারে।
চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চা উৎপাদনে রোদ এবং বৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই রোদ কম ও বৃষ্টি বেশি হওয়ার ফলে পাতা উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। বছরের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় চা-গাছে নতুন কুঁড়ি আসতে থাকে। এই বৃষ্টিপাতকে চা-পাতা উৎপাদনের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে মনে করলেও তিরিক্ত বৃষ্টিতে আশাহত উৎপাদনকারীরা।
গত বছর বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদিত হয়েছিল। উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮৫ মিলিয়ন কেজি। এবার সেই পরিমাণ চা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা কম। বৃষ্টি কমে গেলেও যদি তাপমাত্রা কমে যায়, তাহলেও উৎপাদন কম হবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশের ১৬২টি বাগানে চা উৎপাদন হয়েছে সাড়ে আট কোটি কেজি। প্রতি কাপ চা তৈরিতে দুই গ্রাম চা-পাতা দরকার হয়। এ হিসাবে গত বছর ৪ হাজার ২৫২ কোটি কাপ চা তৈরির সমান চা উৎপাদিত হয়েছে ।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের সূত্র জানায়, গত বছর চায়ের চাহিদা ছিল ৮ কোটি ১৬ লাখ কেজি। এ হিসাবে চাহিদার চেয়ে চা উৎপাদন বেশি হয়েছে ৩৪ লাখ কেজি। এ সময়ে চা আমদানি হয়েছে ৭৭ লাখ কেজি। এবার সেই পরিমাণ চা উৎপাদন না হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া কার্যালয়ের সিনিয়র পর্যবেক্ষক হারুন অর রশীদ বলেন,‘এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ২ হাজার ৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত বছর এই সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটার। বিগত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ বৃষ্টি হয়েছে। আর আগের বছরগুলোর তুলনায় এবারের বৃষ্টির পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি ।’
বাংলাদেশ চা সংসদের সিলেট শাখার চেয়ারম্যান গোলাম মো. শিবলী বলেন, ‘চায়ের জন্য যেমন বৃষ্টি দরকার, তেমনি রোদও দরকার। এবার এত বৃষ্টি হয়েছে যে, তাতে টপ সয়েল ধুয়ে গেছে। সার ধুয়ে গেছে। গত দুই মাসে যা বৃষ্টি হয়েছে, বিগত ২০ বছরেও এই সময়ে এত বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টির কারণে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ছে। মশা, লাল মাকড়সা বাড়ছে। এ পর্যন্ত অন্য বছরের তুলনায় চায়ের উৎপাদন স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ শতাংশ কম আছে। রোদ-বৃষ্টি স্বাভাবিক হলে হয়তো কিছুটা পূরণ করা যাবে। কিন্তু পুরোটা পূরণ করা যাবে না।’
শ্রীমঙ্গল নাহার চা বাগানের ব্যবস্থাপক পীযুষ কান্তি ভট্রাচার্য্য বলেন, ‘চা উৎপাদন ৩০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। গত বছর বৃষ্টিপাত ৪১ ইঞ্চি হলেও সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে তা ৭৫ ইঞ্চি ছাড়িয়েছে, যা চা গাছে নতুন পাতা গজাতে বাধাগ্রস্ত করবে। ফলে দেশে চায়ের চাহিদা মেটানো কঠিন হবে বলে মনে করছি।’