নৌকা আর সাঁকোই তাদের পারাপারের মাধ্যম
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুলাই ২০১৭, ৭:৩২ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
দিন বদলের ছোয়া লাগেনি রাজাপুর খেয়াঘাট এলাকার আশেপাশের মানুষের গায়ে। নির্বাচন আসলেই বাড়ে এইসব এলাকার মানুষের কদর। দেশ স্বাধীনের পর থেকে আজও পরিবর্তন হয়নি তাদের ভাগ্যের। এখনো তারা বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র সম্বল। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার মনু নদীর তীরবর্তী তিন ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম নৌকা আর বাঁশের সাঁকো।
শরীফপুর, হাজিপুর ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সংযোগ রাস্তাটিই হচ্ছে রাজাপুর খেয়াঘাট। এই তিন ইউনিয়নের স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই যাতায়াত করতে হয় বাঁশের সাঁকো আর নৌকা দিয়ে। হাজিপুর ও শরিফপুর ইউনিয়নের মানুষ জরুরী কোন রোগীকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নিয়ে আসতে হলেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। একটি সেতুর অভাবে শরিফপুর ও হাজিপুর ইউনিয়নের লোকজন কুলাউড়া উপজেলা সদরে আসতে হলে অতিরিক্ত প্রায় ২৫-৩০ কি.মি রাস্তা ঘুরতে হয়।
নির্বাচন এলেই অনেকেই আসেন, অনেক প্রতিশ্রুতিও দেন বটে। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সাধারণ মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তারা ভুলেজান বলে দাবি করেন এলাকাবাসী।
চরম ঝুঁকি নিয়ে শরিফপুর ও হাজিপুর ইউনিয়নের মাদানগর, আলীনগর, আন্দ্রকোনা, আলীপুর, ভূইগাঁও, নিশ্চিন্তপুর, সুখনাভি, দত্তগ্রামসহ প্রায় ৩০ টি গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করতে আসেন।
শিক্ষার্থী শিমা আক্তার, তাহমিনা বেগম, আলফা বেগম, রুহিনা, মাহমুদুর, ফাহিম, সানি, চয়ন, সবুজ, সোনিয়া, মাসুমা, সুরমা, ফাহমিদা, মার্জানা জানান, প্রতিদিনই আমরা নৌকা ও সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। নদী পারাপারের জন্য খেঁয়াঘাটের ইজাদারকে প্রতিবছর এক হাজার টাকা অথবা সমপরিমান অর্থের ধান দিতে হয়। সচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য এই টাকা দেওয়া সম্ভব হলেও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এই খরচ বহন করা অনেক কষ্টসাধ্য হয়েপড়ে। নদী পারাপারে জীবনের ঝুঁকি ও অতিরিক্ত খরচের জন্য অনেকেই পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়েছন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রতিবার খেয়াঘাট পারাপার হতে ইজারাদারকে জন প্রতি ৫ টাকা করে দিতে হয়। এইসব গ্রামে উৎপাদিত কৃষিপন্য নৌকা দিয়ে ও শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে উপজেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী রবিরবাজারসহ স্থানীয় হাটগুলোতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে ৫টাকা করে ইজারাদারকে দিতে হয় নতুবা ২৫-৩০ কি.মি জায়গা ঘুরে যেতে হয়।
তাদের দাবি, রাজাপুর এলাকায় সেতু নির্মাণ হলে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি শিক্ষা, কৃষি শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হবে। তারা জাতীয় সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এ ব্যপারে যোগাযোগ করা হলে মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ জানান, সেতুটি নির্মাণের জন্য যতটুকু জায়গার প্রয়োজন তা কিনে নিতে হবে। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবগত করেছি।