স্বপ্নের কানাডার নামে ভারতে নিয়ে সিলেটী তরুণকে লোমহর্ষক নির্যাতন, অতঃপর…
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ৪:১৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
স্বপ্নের দেশ কানাডায় যাওয়ার কথা ছিল হতভাগা যুবক তরিকুল ইসলাম তারিকের। ১৩লক্ষ টাকায় কানাডার ভিসা দেয়া হবে বলে চুক্তি করা হয়। দালাল নান্টু ও লাবনী কানাডার ভিসার জন্য তারিককে নিয়ে যায় ঢাকায়। ঢাকা থেকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। সেখানে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে তের লক্ষ টাকা মুক্তিপন আদায় করে দালালরা। অবশেষে এসএমপি পুলিশের তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এক অপহরণকারীকে গ্রেফতার এবং ভিকটিম তরিকুলকে উদ্ধার করা হয়। এসএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ধরনের চাঞ্চল্যকর ও ভয়ংকর ঘটনা জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার রাউতকান্দি গ্রামের আব্দুল আহাদের পুত্র তরিকুল ইসলাম তারিক (৩২)। তারিকের পিতা আব্দুল আহাদ তার ছেলেকে কানাডা পাঠানোর জন্য দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকার মোশারফ হোসেন নান্টু এবং লাবনী বেগমের সাথে তের লক্ষ টাকায় চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী লাবনী ও নান্টু ভিসার জন্য তরিকুলকে নিয়ে গত ২৭ নভেম্বর ঢাকায় যায়। পরবর্তীতে ভিসা আনার কথা বলে ২৯ নভেম্বর ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় তরিকুলকে। সেখানে নিয়ে ঘটে লোমহর্ষক ঘটনা। তারিককে ভারতের দিল্লিসহ বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। অপহরণকারীরা বাংলাদেশে তারিকের পিতাকে তের লক্ষ টাকা মুক্তিপন দিতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাপ দিতে থাকে। অন্যথায় তারিককে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। ছেলের প্রাণ বাঁচাতে তারিকের পিতা অপহরণকারীদের কথামত ১৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপন প্রদান করেন।
এ ঘটনায় তারিকের পিতা আব্দুল আহাদ গত ১৮ ডিসেম্বর নান্টু ও লাবনীকে আসামী করে ঘটনার বিবরণ দিয়ে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৬। এই মামলার প্রেক্ষিতে এসএমপির দক্ষিণ সুরমা থানার সহকারী কমিশনার (চলতি দায়িত্বে) মাহফুজ্জামান সরকার ও দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ মো: হারুন অর রশিদ এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ গত ২ জানুয়ারি তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপহরণকারী লাবনীকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে। লাবনী পুলিশের হেফাজতে আসার পর বের হয়ে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। একে একে সে তারিককে অপহরণ ও ভারতে তারিকের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাবনীকে তারিক ফেরত না আসলে হত্যা মামলায় জড়ানোর ভয় দেখায়। হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে হলে তার সহযোগীদের নিকট থেকে তারিককে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলে পুলিশ। লাবনী হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে তার সহযোগীদের আকুতি জানিয়ে তারিককে ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানায়। পুলিশ লাবনীর দেয়া তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয় সিলেটের সুতারকান্দি বর্ডার দিয়ে তারিককে বাংলাদেশ পাঠিয়েছে অপহরণকারীরা। অবশেষে ১৩ জানুয়ারী রাতে এসি মাহফুজ্জামান এবং ওসি শাহ হারুন অর রশিদ এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ বিয়ানীবাজার থানার সুতারকান্দি বাজার এলাকা থেকে ভিকটিম তারিকুল ইসলাম তারিককে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ গত ১৪ জানুয়ারি শনিবার ভিকটিম তারিকুল ইসলাম ও অপহরণকারী লাবনীকে আদালতে হাজির করলে আদালত তারিককে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেন এবং লাবনীকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে এসএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা বলেন, মর্মান্তিক এ ঘটনায় ভিকটিমের পিতা থানায় অভিযোগ দেয়ার পর পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অভিযানে নামে। অবশেষে ভিকটিমকে উদ্ধার ও এক অপহরণকারীকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের গ্রেফতারেও তৎপর রয়েছে পুলিশ।