আগামীকাল শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা : প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাত রবিবার
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জানুয়ারি ২০১৭, ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব আগামী ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে। ১৫ই জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। মাঝে ৫ দিন বিরতি দিয়ে ২০শে জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। ২২শে জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে। এরই মধ্যে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমা ময়দান মুসল্লিদের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশাল ময়দানজুড়ে টাঙানো হয়েছে চটের শামিয়ানা। জেলাওয়ারি খিত্তার ভাগসহ বিদেশি মেহমানদের জন্য ইজতেমা ময়দানের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে টিনশেডের আলাদা থাকার জায়গা। ইজতেমা সফলভাবে সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
প্রথম পর্বে ১৬টি জেলার মুসলিমরা অংশ নেবেন। ইজতেমার সার্বিক কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজতেমার মুরব্বি মাওলানা গিয়াস উদ্দিন। তিনি জানান, বিশ্ব ইজতেমা সফল ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন এবং দ্বীনের মেহনত কায়েমের লক্ষ্যে জোড় ইজতেমা থেকেই মুসল্লিরা দলে দলে ভাগ হয়ে ইজতেমার মাঠে কাজ করছেন। প্রতি বছরের মতো স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইজতেমা মাঠে প্রস্ততিমূলক কাজ করেন। তাবলীগ জামাতের উদ্যোগে ১৬০ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ইজতেমা মাঠে বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলীগ জামাতের অনুসারী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেন। তারা এখানে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান। গত রোববার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ে ইজতেমার সভায় মাঠ প্রস্তুতিসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
বিশেষ বাস সার্ভিস: মুসল্লিদের সুবিধার্থে আজ ১২ই জানুয়ারি থেকে বিআরটিসি ৩শ’টি স্পেশাল বাস সার্ভিস ১৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
বিশেষ ট্রেন সার্ভিস: বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যাতায়াতে সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২৮টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে। এ ছাড়া সব আন্তঃনগর, মেইল এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনে অতিরিক্ত ২০টি কোচ সংযোজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, দুই পর্বের ইজতেমার প্রথম পর্বের শুক্রবার ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা দুটি ‘জুমা স্পেশাল, আখেরি মোনাজাতের আগের দু’দিন জামালপুর ও আখাউড়া থেকে দুটি করে চারটি অতিরিক্ত ট্রেন পরিচালনা করা হবে। আখেরি মোনাজাতের আগের দিন লাকসাম-টঙ্গী একটি, আখেরি মোনাজাতের দিন ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা সাতটি, টঙ্গী-ঢাকা সাতটি, টঙ্গী-লাকসাম একটি, টঙ্গী-আখাউড়া দুটি, টঙ্গী-ময়মনসিংহ চারটিসহ মোট ২১টি আখেরি মোনাজাত স্পেশাল ট্রেন চালু থাকবে। মুসল্লিদের সুবিধার্থে ১২ থেকে ১৬ই জানুয়ারি মহানগর প্রভাতী/গোধূলি, ১৯ থেকে ২৩শে জানুয়ারি সোমবার তিস্তা এক্সপ্রেস শুক্রবার সুর্বণ এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো সাপ্তাহিক বন্ধের দিনগুলোতেও চলাচল করবে।
ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের সদস্যরা তুরাগ নদীর ৭টি স্থানে (পন্টুন) ভাসমান সেতু নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন: ইজতেমা মাঠে স্থাপিত ১৩টি উৎপাদন নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন সাড়ে তিন কোটি লিটারেরও বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অজু-গোসলের হাউস ও টয়লেটসহ প্রয়োজনী স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও পাকা দালানে প্রায় ৭ হাজারের মতো টয়লেট ইউনিট রয়েছে। এদের মধ্যে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত অজু-গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো ইতিমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন, র্যাব, পুলিশ, আনসার ভিডিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য ৫টি কন্টোল রুম এবং র্যাব ও পুলিশের জন্য ১৪টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, ২০টি ফগার মেশিন দিয়ে ইজতেমা ময়দানে মশক নিধন, ইজতেমা চলাকালীন সময়ে ২০টি ট্রাকের মাধ্যমে রাত দিন বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা, ইজতেমা চলাকালীন রাতদিন ২৪ ঘণ্টা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সেবা কার্যক্রম, ইজতেমা ময়দানে বিনা মূলে ৪৫টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ: ডেসকো কর্তৃপক্ষ জানান, ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে মূল ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। যেকোনো একটি গ্রিড নষ্ট হলেও সামগ্রিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হবে না। ইজতেমা এলাকায় ৪টি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর এবং ৫টি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফরমারও সংরক্ষণ করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস: ফায়ার সার্ভিস জানান, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা অবস্থান করবেন। ময়দানের প্রতি খিত্তায় ফায়ার ডিস্টিংগুইসারসহ ফায়ারম্যান, গুদামঘর ও বিদেশি মেহমান খানা এলাকায় ৩টি পানিবাহী গাড়ি, ৩ সদস্যের ডুবুরি ইউনিট, ১টি স্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট এবং ৫টি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। ইজতেমা মাঠের ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে মাঠের আশপাশের এলাকায় পানি ছিটানো হবে।
চিকিৎসা সেবা: টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পারভেজ হোসেন জানান, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নিয়মিত শয্যা ছাড়াও অতিরিক্ত শয্যা বাড়িয়ে মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিকেল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারাখানার গেট ও টঙ্গী হাসপাতাল মাঠসহ ৬টি অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ণ, চক্ষু এবং ওআরটি কর্ণারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসা দেবেন। রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা পুলিশ: গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ থেকে ৬ হাজার পুলিশ সদস্য ২৪ ঘণ্টা মুসল্লিদের নিরাপত্তাদানে নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পর্যাপ্ত সদস্য নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে।