৩৬ বছর পর সিলেটে হচ্ছে ইজতেমা : সমাগম ঘটবে প্রায় ১২ লাখ মুসল্লির
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১:৩৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মুসল্লিদের কলরব আর ‘আমিন’ ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে এবার মুখরিত হবে সিলেট। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর এই প্রথম সিলেটে হচ্ছে তাবলিগ জামাতের ইজতেমা। বিশ্ব ইজতেমার অংশ হিসেবে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের সুনামগঞ্জ বাইপাস সড়ক সংলগ্ন বিশাল মাঠে এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৯, ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর এ ইজতেমায় ১০ থেকে ১২ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরেজমিনে ইজতেমার মাঠে গেলে জানা গেল, ৬শ’ কেদার জমির উপর সিলেট জেলার ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। ধর্মপ্রাণ মানুষের যাতে কোনো কষ্ট না হয়, সেজন্য প্যান্ডেল ধারা সাজানো হচ্ছে বিশাল মাঠ। ওই মাঠে ১১টি খিত্তা থাকবে। ১৬টি করে এক একটি পয়েন্টে সাজানো মাঠে ২শ’টি মসজিদ ওয়ালি হবে। এ ছাড়া মাঠের দক্ষিণ পাশে ৫ থেকে ৬ হাজার মুসল্লি যাতে এক সাথে ওজু করতে পারেন, সেজন্য থাকবে একটি বিশাল ওজুখানা। এই ওজুখানা ছাড়াও আরো ৩৫ থেকে ৪০টি ছোট ওজু খানার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মাঠের একপাশে অন্তত ২ হাজার শৌচাগার থাকবে; ৫টি গভীর নলকূপসহ প্রায় ১২ থেকে ১৫টি নলকূপ বসানো হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, ইজতেমার জন্য আমরা সার্বিক সহযোগিতা করছি। নলকূপ বসানো, বিদ্যুতের ব্যবস্থা, রাস্তা করা এবং রাস্তার উন্নয়নসহ প্রায় অধিকাংশ কাজে জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, মুসল্লিরা যাতে সুন্দরভাবে ইজতেমায় অংশ নিতে পারেন, সেজন্য পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন সার্বিক দিকে দৃষ্টি রাখছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, ইতোমধ্যে দুটি গভীর নলকূপ দেওয়া হয়েছে। পানির ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। লাইট দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতা থাকবে।
তবলিগ জামাতের একাধিক সাথিও কর্মী জানান, জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে টঙ্গীর তুরাগ নদীর পারে দু’ধাপে ৩২টি জেলার বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তুরাগ তীরের এক সপ্তাহ আগে সিলেটের ইজতেমা হওয়ায় অন্তত ১০ থেকে ১২ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। সিলেটের ইজতেমায় বিপুল সংখ্যক বিদেশি মুসল্লিরও সমাগম ঘটবে জানিয়ে তাঁরা বলেন, আল্লার নামে কোনো কাজ শুরু করলে তা আটকে থাকে না। এর কারণ হচ্ছে, সিলেটের তাবলিগের মুরুব্বিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিলেটে ৩ দিনের ইজতেমা হবে। এজন্য কোনো সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব কাউকে দেয়া হয়নি। কোনো টাকার ব্যবস্থা ছাড়াই ইজতেমার মাঠের কাজ শুরু হয়। আল্লাহর নামের জন্য সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকলেই সহযোগিতা করছেন। কোনো শ্রমিক টাকায় আনা হয়নি। মানুষ নিজ উদ্যোগে শ্রম দিয়ে ইজতেমার মাঠ মুসল্লিদের জন্য করে দিচ্ছেন। অনেকে কাজ করছেন বিনা পারিশ্রমিকে। কেউ কেউ বাঁশ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। সিলেটের জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন এবং রাজনৈতিক নেতারাও বিভিন্ন কাজ করিয়ে দিয়ে আল্লাহর নামের কাজে শামিল হচ্ছেন।
ইজতেমার মাঠের কাজ পরিদর্শনকালে গতকাল শনিবার জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ জানান, প্রশাসনের সাথে বৈঠক হয়েছে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় বিপুল সংখ্যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, সবশ্রেণি-পেশার মানুষ সিলেটের ইজতেমা সফল করতে এগিয়ে এসেছেন। সদর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মুসল্লিদের পানি দেয়া হবে, ইতোমধ্যে গভীর নলকূপ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, রোলার দিয়ে মাঠের মাঠি সমান করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে আশফাক আহমদ বলেন, আল্লাহর নামের কাজে আল্লাহর মেহেরবাণী সবচেয়ে বেশি থাকে। গত কয়েকদিন আগে এ মাঠের মাঠি একেবারেই নরম ছিল। এখন পুরো শক্ত হয়ে গেছে।
তাবলিগের সাথি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আল্লাহর মেহেরবাণীতে সব কাজ চলছে। আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, তিন দিন ইজতেমা চলবে। ৩১ ডিসেম্বর হবে আখেরি মুনাজাত। ইজতেমা শেষে অনেক মুসল্লি আল্লাহর রাস্তায় সময় লাগাতে চিল্লায় যাবেন। তিনি বলেন, বিদেশি মেহমানদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখার চেষ্টা করা হবে। তাঁদের জন্য আলাদা প্যান্ডেল করে তাঁবু দিয়ে ইবাদত করার সুযোগ করে দেয়া হবে। যারা মাঠে থাকতে অসুবিধা মনে মনে করবেন, তাঁদেরকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। ইজতেমার আয়োজনের মূল কারণ হচ্ছে, আল্লাহর পথে সময় দেয়া, রাসূল (স.) পথে চলাকে অনুসরণ করে দিনের দাওয়াত দেয়া। তিনি বলেন, সিলেটের ইজতেমা সফল করতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অর্থ ও শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন এই দুআ সব সময় করি।
তাবলিগের সিনিয়র মুরুব্বি সৈয়দ ইব্রাহিম জানান, ৩৬ বছর পর সিলেটে ইজতেমা হচ্ছে। ৩৬ বছর আগে পলিটেকনিক মাঠে জেলা পর্যায়ে একটি ইজতেমা হয়েছিল। সিলেট জেলার ইজতেমা সফল করতে সবাই এগিয়ে এসেছেন।
এদিকে, ইজতেমার আশপাশে বসানো হচ্ছে বিপুল সংখ্যক দোকান। বসছে রেস্টুরেন্টও। স্থানীয়রা বলছেন, ওই এলাকায় এবার ইজতেমা হওয়ায় ব্যবসায়ীদেরও ব্যবসা ভালো হবে।
সূত্র জানায়, তবলিগের শীর্ষ মুরুব্বিদের নতুন সিদ্ধান্তের চলতি বছরের বিশ্ব ইজতেমায় দেশের যে ৩২টি জেলা বাদ পড়ে, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বে সেই ৩২ জেলার তবলিগ জামাত সদস্যরা অংশ নেবেন।
জেলাগুলো হচ্ছে, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, লালমনিরহাট, কুডিগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা, জয়পুরহাট, যশোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও বরগুনা। এসব জেলার মুসল্লিরা এবার টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমায় অংশ নেবেন। বাকি ৩২টি জেলায় মুসল্লিরা এবার নিজেদের জেলায় ইজতেমা করবেন । এই ৩২টি জেলার মুসল্লিরা ২০১৮ সালে তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমায় যোগ দেবেন।