কুয়েতে ভিসার মূল্য আকাশচুম্বী, মূল্য নির্ধারণের দাবি প্রবাসীদের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ নভেম্বর ২০১৬, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ দীর্ঘ প্রায় দশ বছর বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে বাধা থাকলেও দুই দেশের সরকারের আন্তরিকতায় আবারও কুয়েতে শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বছর দুইয়ের মধ্যে অর্ধ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক ইতিমধ্যে নতুন ভিসায় কুয়েতে গিয়েছেন । প্রথম অবস্থায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ দিয়ে কুয়েত গেলেও বর্তমানে খরচ ৭ লাখের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। কুয়েতে শ্রমিক প্রেরণে বর্তমানে সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা না থাকা কিংবা থাকলেও যথাযথ প্রয়োগ না থাকার কারণে হাত বদলের পালায় পরে ভিসার মূল্য এখন আকাশচুম্বী হতে যাচ্ছে। রাতারাতি অর্থ উপার্জনের আশায় কিছু প্রবাসী মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করছেন। তাদের অনেকেই জানেন না, কোন কোম্পানির ভিসা বের হচ্ছে, কোথায় বা কি কাজ্, বেতন কত ইত্যাদি নানা বিষয়। সঠিক তথ্য না জেনে পরিচিত বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পাসপোর্ট এবং টাকা সংগ্রহ করে জমা দিচ্ছেন আরেকজনের কাছে। এই চক্রাকারে অনেক মধ্যস্ততাকারী ও সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ক্রেতারা ভিসা নিয়ে টাকা পরিশোধ করার পর জানতে পারেন ওই ভিসা বাতিল করা হয়েছে- প্রতারণার এমন অভিযোগ অনেক। এমনকি ভেরিফিকেশন, মেডিকেল চেকআপসহ পদে পদে প্রত্যেকটি কাজ সারাতে হয়রানির শিকার হন বিদেশগামীরা। তাই কুয়েতের ভিসার নির্দিষ্ট মূল নির্ধারণের দাবি কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশিদের। সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর জন্য সরকার-নির্ধারিত খরচের চেয়ে বেশি টাকা নিলে সেই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম। এক্ষেত্রে কুয়েতের ভিসার খরচটা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হলে অনেকেই প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতেন বলে মনে করছেন কুতেয় প্রবাসীরা। কুয়েতের আইনে ভিসা বেচা কেনা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এদিকে, স্থানীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে ভিসা বাণিজ্যের সাথে জড়িত কিছু কোম্পানি শ্রমিকদের বেতন ঠিকভাবে দিচ্ছে না, অনেক কোম্পানির লোকজনের কাজ নেই ইত্যাদি। তাহলে কুয়েতে ভিসা বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও কি কারণে ৭ লক্ষ টাকা ভিসার মূল্য? কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন এনডিসি, পিএসসি, (অব.) দূতাবাসের মালটিপারপাস হলে বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় বসেন। সেখানে তিনি জানতে চেয়েছিলেন ভিসার মূল্য কেন এত বেশি? কোন কোন খাতে খরচের কারণে ৬/৭ লাখ টাকা খরচ হয়? ওই সভায় কয়েকজন ভিসা ব্যাবসায়ীও উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা কেউ সঠিক হিসাব দিতে পারেননি। তবে বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী জনাব আবদুল বারেক একটি অভিযোগ করেন, তাতে বলেছিলেন তিনি কোন এক কোম্পানিতে ভিসার জন্য কন্টাক করে আসার পর দূতাবাসের কতিপয় ব্যক্তি ওই ভিসা কেনার জন্য মূল্য বাড়িয়ে দেয়। তখন রাষ্ট্রদূত প্রমাণবিহীন কারও দোষারোপ করতে নিষেধ করেন। তখন আবদুল বারেক যারা ওই কোম্পানিতে ভিসার জন্যে গিয়েছিল দূতাবাসের তিনজনের ভিজিটিং কার্ডের ছবিসহ একটি কাগজ রাষ্ট্রদূতের হাতে দেন। এরপর রাষ্ট্রদূত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করার জন্য ডিফেন্স এট্যাচি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নাসিমুল গনিকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। তবে রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন চলে গেলেও ওই ঘটনার তদন্ত শেষ হয়েছে কিনা তা কেই জানেন না। এ বিষয়ে বর্তমান রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম বলেন, এই বিষয়ে তিনি কিছুটা অবগত আছেন। তিনি জানতে পেরেছেন, যে ব্যক্তি অভিযোগ করেছিলো তাকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায় ভিসা বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই ব্যবসার সাথে জড়িতরা গোপনীয়তা রক্ষা করার চেষ্টা করেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন কন্ট্রাক্ট করলে অন্যজন মূল্য বাড়িয়ে দেয়, এটি সম্পূর্ণ আনঅফিসিয়ালভাবে ব্যবসায়ীদের মুখে অপ্রিয় সত্য কথা।” রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ”আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনের শ্রমিক এত কম বেতনে আসতে চায় না। শ্রমিক চাহিদা মেটাতে ওই দেশের শ্রমিকের বিমান ভাড়া পর্যন্ত বহন করা হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের ভিসার মূল্য কেন সাত লাখ টাকা? তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারে প্রায় সব দেশের ক্ষেত্রে বিদেশে যেতে খরচের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কুয়েতের বিষয়টা অতি শিগগিরই সরকারের নজরে আসা দরকার।