বিবিসির অনুসন্ধান : টিকটকে ট্রলের শিকার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নারীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫:৫৬ অপরাহ্ণ
ব্রিটিশ-বাংলাদেশি অনেক নারী টিকটকে ট্রলের শিকার হচ্ছেন। এসব ট্রলের কারণে তাঁদের জীবন রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।বিবিসির অনুসন্ধানে এই বাস্তবতা উঠে এসেছে।শুধু ট্রল নয়, রীতিমতো নিপীড়নের শিকার ও হুমকি পাচ্ছেন ভুক্তভোগী নারীরা। এই ট্রলের পেছনে জড়িত আছেন হাসান সায়েদ নামের বাংলাদেশি এক ব্যক্তি। হাসান ফ্রান্সের প্যারিসের শহরতলিতে থাকেন। টিকটকে হাসান সায়েদের হাজার হাজার অনুসারী রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে হাসান। পরে সেসব ছবি নিয়ে হাসান টিকটকে লাইভে আসে। ভুক্তভোগী নারীদের নিয়ে মজা করেন। এমনকি ধর্ষণ ও হত্যার হুমকিও দেন।
নিপীড়নমূলক ট্রলিংয়ের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রথম সরব হন ইংল্যান্ডের স্ট্যাফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম। স্ট্যাফোর্ডশায়ারে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন তিনি। কামরুল বলেন, ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি সম্প্রদায় বেশ রক্ষণশীল। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলের ভিডিওগুলো ভুক্তভোগীদের পরিবারের জন্য বেশ লজ্জার ও ভয়ের। তাই এর বিরুদ্ধে কিছু করতে চেয়েছেন তিনি।
হাসানের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করেন কামরুল। মানুষকে ট্রল করে ভিডিও প্রকাশ করা বন্ধ করতে বলেন। ফল হয় উল্টো। তাৎক্ষণিকভাবে কামরুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ট্রল করে হাসান। কামরুল ইসলাম জানান, তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁর এক বছর বয়সী ছেলে, তাঁর মা ও স্ত্রীর ছবি সংগ্রহ করে হাসান সায়েদ। পরে কামরুলের মা ও স্ত্রীকে ধর্ষণের প্রকাশ্য হুমকি দেয় হাসান সায়েদ। ওই সময় কামরুলের স্ত্রী রুকি জামান সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বাধ্য হয়ে কামরুল দ্বিতীয় সন্তানের অপেক্ষায় থাকা স্ত্রীকে সব খুলে বলেন।
ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের মধ্যে টিকটক বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ইস্যুতে কথা বলেন। তবে ভুক্তভোগীদের অনেকে বলছেন, নারীরা অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলবেন, এটা নিজ সম্প্রদায়ের অনেকেই মানতে পারেন না। তাই তাঁদের থামিয়ে দিতে চান। নারীরা সামনে এসে এসব অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। ২০২০ সালে হাসান সায়েদের টার্গেট হয়েছিলেন কে আলী। তিনি এগিয়ে এসেছেন এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের ট্রলিং, নিপীড়ন, হুমকির কারণে বাংলাদেশী নারীরা খুবই হতাশ। তাঁদের অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। কেননা, এসব বন্ধে কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন কামরুল। সেই সঙ্গে টিকটক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিডিও সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু টিকটক কর্তৃপক্ষ কামরুলকে জানিয়ে দেয়, এসব ভিডিওতে তাদের কমিউনিটি গাইডলাইন লঙ্ঘন হয়নি। ব্রিটিশ পুলিশও তাঁকে আশার কথা শোনাতে পারেনি।
টিকটকের পক্ষ থেকে কামরুল ইসলামকে জানানো হয়, তাদের কমিউনিটি গাইডলাইনের সঙ্গে যায় না এমন সব ভিডিও, কনটেন্ট মুছে ফেলা হবে। ব্লক করা হবে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট।
কিন্তু হাসান সায়েদের একটি একাউনট বন্ধ করার পর নতুন আরেকটি খুলে কামরুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারের প্রতি আবারও হুমকি দিতে থাকে হাসান সায়েদ। বাধ্য হয়ে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্যারিসে ব্রিটিশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেন কামরুল। নিজের সমস্যার কথা খুলে বলেন। সহায়তা চান তিনি। ওই সময় ইংরেজি ভাষা জানা ফরাসি আইনজীবী ম্যাথিউ ক্রোইজেতের সঙ্গে কামরুলের যোগাযোগ করিয়ে দেয় ব্রিটিশ দূতাবাস। পরে হাসানের নামে প্যারিসের সরকারি কৌঁসুলির দপ্তরে অভিযোগ আনেন ম্যাথিউ। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, মামলার চূড়ান্ত পরিণতি পেতে অনেক সময় লেগে যাবে।
বিবিসির পক্ষ থেকে ই-মেইল পাঠিয়ে ও কল করে একাধিকবার হাসান সায়েদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সাড়া দেয়নি হাসান সায়েদ। তবে সর্বশেষ সুখবর হলো, আপাততঃ টিকটকে দেখা যাচ্ছেনা হাসান সায়েদকে।