ব্রিটেনে গানে গানে সঙ্গিত জীবনের ৫০ বছর পুর্তি উদযাপন করলেন রুনা লায়লা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২:০৬ পূর্বাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ লন্ডনের রমফোর্ডের সুবিশাল মিলনায়তন সিটি প্যাভিলিয়ন। আগত দর্শকদের মধ্যে যেন সমানভাবেই চোখে পড়ছে বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তানের মানুষ। হ্যাঁ, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ওই তিন দেশের মানুষই জড়ো হয়েছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার গান শুনতে। গানের ভাষা যা-ই হোক, প্রতিটি গান শেষে হলভর্তি দর্শকের জোর করতালি আর হর্ষধ্বনি বার বার জানান দিচ্ছিলো- রুনা লায়লা কতটাই জনপ্রিয়।
গত শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সিটি প্যাভিলিয়নে বসেছিল কণ্ঠ জাদুকর রুনা লায়লার একক সঙ্গীতায়োজন। রুনার সঙ্গীত জীবনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে এবার লন্ডনে হলো এই আয়োজনা। লন্ডনের আয়োজনটিও ছিল অনেকটা উপমহাদেশিয়। অনুষ্ঠানের আয়োজক ভারতীয় চিকিৎসক দম্পতি অর্পিতা রায়-অনির্বান মণ্ডলের প্রতিষ্ঠান ‘ইউকে ডক্টর শেফ লিমিটেড’। আয়োজন সমন্বয়ের কাজে ছিলেন পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত সঙ্গীত শিল্পী রাজা কাশেফ। আর প্রচারে ছিল যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তানের গণমাধ্যম।
সন্ধ্যা সাড়ে আটটা নাগাদ মঞ্চে এসেই ‘শিল্পী আমি তোমাদেরি গান শুনাবো’ দিয়ে শুরু করলেন। গান শুনিয়েছেনও মন উজাড় করে। বাংলা, হিন্দি, উর্দূ গাইলেন সমান তালে। একের পর এক গেয়ে শুনালেন ‘স্টেশনের রেল গাড়িটা’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম’, ‘দো দিওয়ানে শেহের মে’ ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না’, ‘তু মে হো না হো মুচকো তো’, ‘যেজন প্রেমের ভাব জানে না, ‘দে দে পেয়ার দে’ এবং ‘বাড়ির মানুষ কয় আমায় ভূতে ধরেছে’ সহ মঞ্চ কাঁপানো গানগুলো। ভুলে যানটি দেশপ্রেমের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে। বাংলাদেশের শহীদদের স্মরণে গাইলেন-‘দেশের জন্য যাঁরা দিয়ে গেছ প্রাণ- ভুলিনি আমরা’।
মাঝে মাঝে দর্শকদের উদ্দেশে বাংলা, হিন্দি আর উর্দু বাকপটুতায় বুঝিয়ে দিলেন- কাকে বলে দর্শক জাগানোর মুনশিয়ানা। সুরের তালে স্বভাবসুলভ দেহভঙ্গি বলছিল তিনি এখনো মঞ্চের তরুণী। টানা ঘন্টা দেড়েক গাওয়ার পর বিরতি চাইলেন। দর্শকদের উদ্দেশে বললেন, ‘রাত ভারী হলেও চলে যাবেন না তো? আমি আবার আসছি।’ গাইলেন রাত সাড়ে এগারটা পর্যন্ত।
ফুয়াদ নাসের বাবু, রুপতনু, মিলন ভট্টাচার্য, মনিরুজ্জামান সেলিম হায়দার এর মতো বাংলাদেশের বিখ্যাত সব যন্ত্রীদের পরিবেশনাও ছিল অসাধারণ। রুনা লায়লার ‘গানে গানে ৫০’ উদযাপনের এই অনুষ্ঠানে দর্শকরাও ছিলেন বেশ বিচিত্র। গত শতকের সত্তর- আশির দশকে যারা টগবগে তরুণ-তরুণী ছিলেন তাদের উপস্থিতিই ছিল বেশি। বাংলাদেশের মনোয়ার হোসেন, কলকাতার ভুবানা লক্ষ্মী, কিংবা পাকিস্তানের আয়শা ভাট- এঁদের সবারই বয়স এখন ৬০ এর কাছাকাছি। এসব সঙ্গীতপ্রেমীরা বলেন, বর্তমানে সঙ্গীতের অনেক শিল্পী, অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে। কিন্তু এসব গান তাদের টানে না। সেই যৌবনে শোনা রুনার গানগুলোই এখনো তাঁদের অন্তরে গুন গুন করে বাজে। তাই রুনার টানেই ছুটে আসা। অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে তুলে রুনা লায়লার হাতে তুলে দেয়া হয় একটি সম্মাননা স্মারক।