পাশবিকতা : চাচীর নির্যাতন,মুখে গুঁজে দিতো চুন !
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১১:৩৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ নয় বছরের শিশু নার্গিসকে লেখাপড়া করানোর কথা বলে ঢাকায় আনেন চাচি লতিফা ইয়াসমিন (৩০)। কাউকে না বলেই চাচাতো বোনের চকলেট খেয়ে ফেলে নার্গিস। এ অভিযোগ তুলে শিশুটির ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। বেলন দিয়ে মারা, মুখে চুন গুঁজে দেওয়া, ইস্ত্রি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছ্যাঁকা দেওয়াসহ নানা নির্যাতন চলে শিশুটির ওপর। নির্যাতন চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে আছেন চাচি লতিফা। নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে ৬ সেপ্টেম্বর মিরপুর থানার পুলিশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই দিন থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে ভর্তি ছিল। আজ রোববার শিশুটিকে মায়ের জিম্মায় দিয়েছেন ঢাকার শিশু আদালত। মামলার নথি থেকে জানা যায়, শিশুটিকে নির্যাতনের অভিযোগে ৬ সেপ্টেম্বর লতিফাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নির্যাতনের ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন নার্গিসের বাবা আবদুস সামাদ মুন্সি। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শিশুটিকে প্রায়ই নির্যাতন করতেন লতিফা। বেলন দিয়ে মারধর করতেন। আর শরীরে ছ্যাঁকা দিতেন ইস্ত্রি দিয়ে। আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মো. মোস্তফা বলেন, শিশুটিকে আদালত তার মায়ের জিম্মায় দিয়েছেন। শিশুটি বর্তমানে মায়ের হেফাজতে আছে। শিশুটিকে আইনগত সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি। সংগঠনটির আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটি অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। আজ শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আদালতে আনা হয়। পরে শিশুটিকে মায়ের জিম্মায় দিয়েছেন আদালত। কয়েক বছর আগে শিশুটির মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর থেকে শিশুটি মায়ের সঙ্গে গোপালগঞ্জে মামাবাড়িতে থাকত। নার্গিসের মা তামান্না দাবি করেন, ‘আমি থাকি মায়ের বাসায়। ও আমার কাছেই থাকত। লেখাপড়া শেখানোর কথা বলে তিন মাস আগে ওকে ওর চাচি লতিফা নিজের বাসায় নেন। চকলেট খেয়েছিল বলে ওকে নির্যাতন করা হয়েছে। রুটি বানানোর বেলন দিয়ে মারধর করেছেন। ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়েছেন। পাথুরে চুন খাওয়াতেন। লবণ-মরিচ দিয়ে কাটা জায়গায় ডলেছেন। বারান্দায় থাকতে দিয়েছেন।’ আর শিশুটির মামা রানা আহম্মেদের দাবি, ‘আমার ভাগনির বড় কাকা (লতিফার স্বামী) স্পেনে থাকেন। তিনি বলেন, আমার বাচ্চা স্পেনে বড় হচ্ছে। ছোট ভাইয়ের বাচ্চাও স্পেনে বড় হচ্ছে। আরেক ভাইয়ের বাচ্চা ঢাকায় বড় হচ্ছে। ওর মা-বাবার ভুলে কারণে ছাড়াছাড়ি হয়েছে। ও তো আমাদেরই বাচ্চা। ওর তো ভবিষ্যৎ আমাদের দেখতে হবে। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তাকে ঢাকার একটি স্কুলে ভর্তি করাবেন। রমজানের শুরুর দিকে ভাগনিকে বাসায় নিয়ে যান তার চাচি লতিফা।’ শিশুটির মামা বলেন, ‘চাচির বাসায় দেওয়ার পর আমি আমার ভাগনিকে দেখতে যাওয়ার কথা বলেছি। তখন তার চাচি বলতেন, দেখতে এলে মায়া লাগবে। কান্নাকাটি করবে। ওর ভবিষ্যতের (লেখাপড়া) জন্য এই টুকু মায়া ত্যাগ করো। এটা বলে আমাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ করতে দেননি। ওকে মাসের পর মাস বারান্দায় ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়েছেন। ঘা হয়ে গেছে সেখানে। বাধ্য হয়ে সে উপুড় হয়ে ঘুমাত।’ শিশু নার্গিসের দাবি, তার চাচি বেলন দিয়ে মারতেন। ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দিতেন। মুখে চুন গুঁজে দিয়েছেন। বারান্দায় থাকতে হতো। শিশুটি নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়ার সময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। আর বলছিল, ‘আমি এর বিচার চাই।’